সংক্ষিপ্ত
কেন্দ্রীয় বাহিনী সম্পর্কে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। ‘৫ রাজ্য থেকে বাহিনী চেয়ে পাঠালে কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিতে পারে না পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন?’ সুপ্রিম কোর্টে চোখা প্রশ্নের মুখোমুখি নির্বাচন কমিশন।
বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর এসেছে। বিরোধী দল, যেমন, সিপিআইএম, কংগ্রেস, বিজেপি এবং আইএসএফের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, শাসক দল তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিরোধীদের মনোনয়নই জমা কোর্টে দিচ্ছে না। বহু এলাকায় গোলাগুলি এবং বোমাবাজিতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে SLP (Special Leave Petition) দায়ের করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ২০ জুন, মঙ্গলবার ছিল সেই মামলার শুনানি। এই মামলাতেই শীর্ষ আদালতে বিচারপতি বিভি নাগরত্না এবং মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে চোখা প্রশ্নের মুখে পড়তে হল নির্বাচন কমিশনকে। অবশেষে, বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ শেষ পাওয়া আপডেট অনুযায়ী, হাইকোর্টের বিরুদ্ধে করা এই চ্যালেঞ্জে পরাজয় হয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত ভোটে যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ৬টি রাজ্য থেকে বিশেষ বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ, কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে, বঙ্গের প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত বাহিনী নেই। তাহলে, ‘৬ রাজ্য থেকে অতিরিক্ত বাহিনী চেয়ে পাঠালে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তা দিতে বাধা কোথায়?' এই প্রশ্নই আজ নির্বাচন কমিশনকে করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। তিনি জিজ্ঞেস করেন যে, ‘হাইকোর্টের রায় নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আপত্তি রয়েছে কেন?’, বিচারপতি বিভি নাগরত্না কমিশনকে বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলে তার সমস্ত খরচ তো কেন্দ্র সরকার দেবে। তাহলে আপনাদের সমস্যা কোথায়?” শীর্ষ আদালতের এইরকম একের পর এক চোখা প্রশ্নে আজ অনেকটাই বিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
বিচারপতির প্রশ্নের পালটা, কমিশনের ‘অধিকার রয়েছে’ বলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কিছুটা এড়াতে চেয়েছিলেন কমিশনের পক্ষের আইনজীবী। তিনি আদালতকে জানান যে, রাজ্যের পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট পারদর্শী। তিনি এও বলেন যে, “রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে ভোটের প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এই সময়ে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হলে সমস্ত পরিকল্পনা বদল করতে হবে।” এর জবাবে কমিশনের হোম ওয়র্ক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।
মঙ্গলবার শুনানির সময়ে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের শাসনকালে হওয়া ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের ভোটের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি নজির দেখিয়েছেন যে, এই নির্বাচনগুলিতে বাংলায় ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনা দেখা গেছে। বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয় না, এরকম প্রচুর অভিযোগ এসেছে। বিচারপতি আজ স্পষ্ট বলেছেন যে, ‘মনোনয়ন দিতে গিয়েই মানুষকে খুন হতে হচ্ছে। এভাবে কি নির্বাচন করানো যায়? ভোট মানেই হিংসা হতে পারে না’।
বিচারপতি নাগারত্না বলেন, “কমিশনের ওপর যখন নিরাপত্তার দায়িত্বই বহাল নেই, তাহলে বাহিনী কোথা থেকে আসছে, তা নিয়ে এত চিন্তা কেন? হাইকোর্ট অবস্থা বুঝেই নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের ওপর কোনও সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না।” এরপরেই কলকাতা অআদালতে নির্দেশ বহাল রাখার রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তাই বহাল থাকছে পশ্চিমবঙ্গে।
আরও পড়ুন-
‘বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়ার দিনে আনন্দের উৎসব নয়’, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি ওড়ালেন সিভি আনন্দ বোস
PM Modi News: ‘ভারত নিরপেক্ষ নয়, ভারত শান্তির পক্ষে’, একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
কোভিড মহামারীর পর এবার আরও বড় বিপদের আশঙ্কা, CCHF জ্বরে ফের মৃত্যু-মিছিলের সম্ভাবনা