সংক্ষিপ্ত

আর জি কর আন্দোলন নিয়ে সরগরম গোটা রাজ্য। কিন্তু এরই মাঝে প্রশ্ন উঠছে যে, এই আন্দোলন কি শুধু শহরে কিংবা মফঃস্বলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে?

আর জি কর আন্দোলন নিয়ে সরগরম গোটা রাজ্য। কিন্তু এরই মাঝে প্রশ্ন উঠছে যে, এই আন্দোলন কি শুধু শহরে কিংবা মফঃস্বলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে?

তবে কি তা গ্রামের আঙিনায় এখনও পৌঁছায়নি? কলকাতা এবং শহর সংলগ্ন এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বরা এখনও এটা ভেবেই নিশ্চিন্তে আছেন যে, আর জি কর কাণ্ড নিয়ে নাগরিক আন্দোলন এখনও পর্যন্ত নগর এবং মফঃস্বলেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

কিন্তু বাস্তব চিত্র অনেকটাই আলাদা। উত্তর থেকে দক্ষিণ, গ্রামাঞ্চলের তৃণমূল নেতৃত্বরা জানাচ্ছেন, গত ৫-৭ দিনের ভিতর পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। গ্রামে গ্রামে মিছিল শুরু হয়েছে। আর তা ক্রমশ যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কলকাতার তৃণমূল নেতৃত্বদের মধ্যে একটা অংশ অবশ্য অস্বীকার করছেন না যে, গ্রামে এই আন্দোলন একেবারে পৌঁছয়নি। তবে তাদের যুক্তি হল, অনেকাংশেই সেই আন্দোলন হুজুগে পড়েও হচ্ছে। সেই অর্থে সরকার কিংবা সরাসরি তৃণমূল বিরোধিতার কারণে নয়।

কিন্তু বিস্মিত করছে গ্রামাঞ্চলের নেতাদের বক্তব্য। যেমন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক তৃণমূল বিধায়ক জানাচ্ছেন, ৫-৬ দিন আগেও ঐ জেলার গ্রামাঞ্চলে মিছিলের এত হিড়িক ছিল না। তবে হঠাৎ করেই তা কিছুটা বেড়ে গেছে। তবে তিনি এও জানিয়েছেন যে, তাতে শুধুমাত্র বিচারের দাবিই ধ্বনিত হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে কিংবা ঐ ধরনের কোনও রাজনৈতিক স্লোগান ওঠেনি বলেই তিনি জানিয়েছেন। ওদিকে আবার আরামবাগের এক তৃণমূল নেতার কথায়, সিপিএম-এর সময় ভয় দেখিয়ে মিছিলে লোক নিয়ে যেত। কিন্তু সেই জমায়েতকেও ছাপিয়ে গেছে গ্রামের মহিলাদের মিছিল।

তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ছোট শ্যালিকা এবং তাঁর ১৯ বছরের মেয়েও মিছিলে গেছিল। অন্যদিকে, পূর্ব বর্ধমানের জেলা পরিষদের এক কর্মাধ্যক্ষ জানাচ্ছেন, স্কুলের প্রাক্তনীদের নামে অনেক জায়গায় মিছিল হচ্ছে। যা গত এক সপ্তাহে সংখ্যায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি অস্বীকার করছেন না যে, গ্রামে এই আন্দোলন একেবারে পৌঁছয়নি।

উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদার জেলা তৃণমূলের নেতারাও কার্যত মেনে নিচ্ছেন যে, এখন আর বিষয়টি শুধু শহর এবং মফঃস্বলের গণ্ডিতে আটকে নেই। তা ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছে। মালদার এক তৃণমূল নেত্রী জানাচ্ছেন, হাওড়ার একটি স্কুলের দিদিমণির বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়।

যেখানে তাঁর বার্তা ছিল, ১৮ বছর না হলেও নিজের মতামত প্রকাশ করা যায়। তারপর থেকেই দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন এলাকায় স্কুলের প্রাক্তনীরা রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন। সেই মিছিলে শামিল হচ্ছে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাও।

যদিও অনেক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, সিপিএম এবং বিজেপি স্থানীয় স্তরে মিলেমিশে অরাজনৈতিক মোড়কে এইসব কর্মসূচি গ্রহণ করছে। পূর্ব বর্ধমানের এক নেতার আবার দাবি করেছেন, বিজেপির মধ্যে সিপিএম লোক ঢুকিয়ে রেখেছে। যে সংগঠিত কায়দায় কর্মসূচিগুলি হচ্ছে, তাতে বামেদের সাংগঠনিক ধাঁচ একেবারে স্পষ্ট।

গ্রামের নেতারা জানাচ্ছেন, শহরের নেতারা সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ভাবছেন যে গ্রামে তেমন কিছু হচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টা একদমই তা নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জাকাত মাঝি পরগনা যেভাবে কয়েকদিন আগে ধামসা-মাদল নিয়ে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে নেমেছিল এবং রাস্তা অবরোধ করেছিল, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ফলে, বিষয়টি হেলাফেলা করার নয়।

তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা জানাচ্ছেন, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আরও বেশি করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মিছিলে হয়ত সেইভাবে রাজনৈতিক স্লোগান উঠছে না। কিন্তু মিছিলের আগে এবং পরে জমায়েতে ফিসফাস চলছেই।

স্বভাবতই, শহরের তৃণমূল নেতারা নিশ্চিন্ত থাকলেও গ্রামাঞ্চলের নেতারা নন।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।