সংক্ষিপ্ত

পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে কোভি়ড -১৯ মহামারীর আগে তিন বছরে ১-৪ বছরের শিশুদের মধ্যে লক্ষ প্রতি জনসংখ্যায় জলে ডুবে মৃত্যুর হার ছিল ২৪৩ ।

 

জীবন সেখানে বড়ই কঠিন। দুর্গমও বলা যেতে পারে। সমভূমি এলাকার মানুষ হয়ে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষদের একাধিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। সেখানে শুধু প্রাপ্ত বয়স্কদের সংগ্রামই কঠোর এমনটা নয়। শিশুদের জীবন সংগ্রামও কঠোর সম্প্রতি একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে বিশ্বে সবথেকে বেশি শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সুন্দরবনে।

পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে কোভি়ড -১৯ মহামারীর আগে তিন বছরে ১-৪ বছরের শিশুদের মধ্যে লক্ষ প্রতি জনসংখ্যায় জলে ডুবে মৃত্যুর হার ছিল ২৪৩ । যা বিশ্বে একটি রেকর্ড। সমীক্ষায় বলা হয়েছে ২০১৬ -২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫-৯ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার লক্ষপ্রতি জনসংখ্যায় ৩৮.৮ জন। সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। উত্তর ও ২৪ পরগনা দুই জেলাতেই সমীক্ষা করা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে মৃত্যুর হারের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হয়নি। বেশিরভাগ শিশুই নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে কোনও পুকুরের জলে ডুবে মারা গিয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে পরিবারের সদস্যরা বাড়ির কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে শিশুটের সঙ্গে তারা থাকতে পারত না তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বেসরসকারি সংস্থা চাইল্ড ইন নিড ইনস্টিটিউট বা CINI, রয়্যাল ন্যাশানাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন বা RNLI ও দ্যা জর্জ ইনস্টিটিউট এই সমীক্ষা করেছিল। সংস্থাগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল সুন্দরবনে শিশুদের জীবন কতটা সুরক্ষিত তা খতিয়ে দেখা। বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ এলাকা সুন্দরবন। এটি একটি ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। ভারতের অংশ সুন্দরবনের ১০০টি দ্বীর পয়েছে। প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষেক হাস। মোট জনসংখ্যার ১৫.৯ শতাংশ হল ১-৯ বছর বয়সী শিশু। এই এলাকার অনেক মানুষই এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত চিকিৎসা পায় না।

বর্ষাকালে সুন্দরবনের জলাশয়গুলিতে জলের স্তর অনেকটা বেড়ে যায়। অন্যদিকে উপকূলীয় অঞ্চলে গত ৪-৫ বছরে বন্যার ঘটনাও বেড়েছে। রাজ্যের সুন্দরবন বিষয়ক মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা শিশুদের জলে ডুবে মৃত্যুর কথা স্বীকার করে নিয়েছে। তিনি বলেছেন রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেছেন, 'আমাদের স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে জলে ডুবে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে আমাদের কাছে বিস্তারিত রিপোর্চ নেই।'

মন্ত্রী আরও বলেছেন, ডেঙ্গু , ম্যালেরিয়া ও বাল্যবিবাহের মত সমস্যাগুলির সঙ্গে জলে ডুবে মৃত্যু নিয়েও সচেতনাতা বাড়ানোর কাজ করা হবে।

সিআইএনআই-এর জাতীয় অ্যাডভোকেসি অফিসার সুজয় রায় বলেছেন এই সমস্যা সমাধানে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি প্রাশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা হৃদয় বিদারক। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।