হাড়োয়ায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে অরবিন্দ মণ্ডল নামে এক জনপ্রিয় ইউটিউবার ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রিল বানানোর সুযোগ দেওয়ার নামে ওই কিশোরীর ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
রবিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাড়োয়ার মোহনপুর-বাছারিপাড়া এলাকায় এক ১৫ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে অরবিন্দ মণ্ডল নামে এক ৪৮ বছর বয়সী ইউটিউবার ও তার নাবালক ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই ইউটিউবারের ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে।
পুলিশ আধিকারিকদের মতে, নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ইউটিউবারের জনপ্রিয় চ্যানেলের জন্য ভিডিও রিল-এ দেখানোর অজুহাতে ধর্ষণ করেছে। নির্যাতিতার পাড়াতেই থাকে অরবিন্দ মণ্ডল ও তার ছেলে। কয়েক মাস আগে সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওতে কাজ করার প্রস্তাব নিয়ে মেয়েটির কাছে গিয়েছিল। প্রতিবেশী হওয়ায় মেয়েটির পরিবার প্রথমে কোনো আপত্তি জানায়নি। পরে মেয়েটি ভিডিও শুটের জন্য অভিযুক্ত বাবা-ছেলের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় যায়। তবে, পুলিশ জানিয়েছে সেই সময় অভিযুক্তরা গোপনে মেয়েটির ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও রেকর্ড করে।
বসিরহাট জেলা পুলিশের এক সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, এরপর তারা সেই ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং বারবার অত্যাচার চালায়। তারা হুমকি দেয় যে যদি সে বাধা দেয় বা নির্যাতনের কথা প্রকাশ করে, তবে সেই সব অনলাইনে পোস্ট করে দেওয়া হবে।
নির্যাতিতার পরিবারের মতে, অভিযুক্ত একবার মেয়েটিকে বিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন নির্যাতন চালায়। এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি এবং ক্রমাগত হুমকিতে মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকদিন ধরে এই অত্যাচার সহ্য করার পর, শনিবার সে অবশেষে তার পরিবারকে সব কথা খুলে বলে। তার বাবা, যিনি কলকাতা পুলিশের একজন কর্মী, পরের দিন সকালেই হাড়োয়া থানায় একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের পর, হাড়োয়া পুলিশ রবিবার পকসো আইনের অধীনে মণ্ডল ও তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। দুজনের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ, অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন এবং ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। পরে মণ্ডলকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করা হয় এবং পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়। তার নাবালক ছেলেকে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য জুভেনাইল কোর্টে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মণ্ডলের বাড়ি থেকে ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে অন্য কোনো অপরাধ করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা।
এই ঘটনায় মোহনপুর এলাকার চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সেখানে অরবিন্দ মণ্ডল তার অনলাইন খ্যাতির কারণে একটি পরিচিত মুখ ছিল। স্থানীয় মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতা ও তার পরিবারের জন্য কাউন্সেলিং এবং সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তদন্তকারীরা এখন আদালতে মামলাটিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ডিজিটাল প্রমাণ খুঁজছেন।


