শুধু গানে গানে নয়, বাংলার সঙ্গে লতার যোগ ছিল মাছ, মিস্টি তাঁতের শাড়ি থেকে সাহিত্যেরও

Published : Feb 06, 2022, 07:03 PM ISTUpdated : Feb 06, 2022, 08:41 PM IST
শুধু গানে গানে নয়, বাংলার সঙ্গে লতার যোগ ছিল মাছ, মিস্টি তাঁতের শাড়ি থেকে সাহিত্যেরও

সংক্ষিপ্ত

প্রয়াত সুর-সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) বাংলায় ১৮৫ টি গান গেয়েছেন। তবে শুধু গানে গানে নয়, বাংলার সঙ্গে লতার যোগ ছিল বাঙালি খাবার, তাঁতের শাড়ি থেকে বাংলা সাহিত্যের মাধ্যমেও। 

লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) বাংলা ভাষায় ১৮৫ টি গান গেয়েছেন। ১৯৫৬ সালে হেমন্তর (Hemanta Mukherjee) সুরে 'প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে' গানের মাধ্যমে বাংলা গানে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল লতার। একই বছরে, তিনি ভূপেন হাজারিকার (Bhupen Hajarika) সুরে 'রঙ্গিলা বাঁশিতে', সলিলের সুরে 'না যেওনা' এবং 'ওগো আর কিছু তো নয়'-  এর মতো হিট গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। ১৯৬০ এর দশকে 'আকাশ প্রদীপ জ্বলে', 'একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি', 'সাত ভাই চম্পা', 'নিঝুম সন্ধ্যায়', 'চঞ্চল মন আনমনা', 'আষাঢ় শ্রাবণ'-এর মতো বিখ্যাত গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। 

বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে লতা কথাও বলতেন বাংলায়। বাঙালি খাবারের প্রতি ছিল তাঁর দুর্বলতা। এছাড়া তিনি পছন্দ করতেন বাঙলার তাঁতের শাড়ি। জানা যায়, বাংলা সাহিত্য পড়তেও ভালবাসতেন লতা। মারাঠি অনুবাদে বঙ্কিম, শরৎ থেকে রবি ঠাকুরের লেখা পড়তেন। শুধু তাই নয়, উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেন অভিনীত বাংলা ছবির বিশেষ ভক্ত ছিলেন  সুরসম্রাজ্ঞী। 

আরও পড়ুন -ৃ নিজের দেশে মহিলাদের গান নিষিদ্ধ, অথচ লতার ফ্যান ছিলেন এই নৃশংস স্বৈরচারী পাক জেনারেল

আরও পড়ুন - 'অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ' - এবার জন্ম-মৃত্যুর সমাপতনে জড়িয়ে গেলেন লতা ও কবি প্রদীপ

আরও পড়ুন - Lata Mangeshkar: গ্র্যান্ড হোটেলে লতার সঙ্গে দুই ঘন্টার আড্ডা, স্মৃতিতে বিভোর তাঁর জীবনীকার

লতা মঙ্গেশকর গান গেয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শচীন দেব বর্মন, রাহুল দেব বর্মন, সলিল চৌধুরি, গীতা দত্ত, অনিল বিশ্বাস, অশোক কুমার, কিশোর কুমার, শক্তি সামন্ত, হৃষিকেশ মুখার্জি, বিশ্বজিত, বাপী লাহিড়ি প্রমুখের সাথে।  লতা মঙ্গেশকরের সাথে বাংলা সঙ্গীত জগতের ভালো সম্পর্ক ছিল। ১৯৫৬ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে 'প্রেম একবারই এসেছিল জীবনে' গানটি ছিল লতার গাওয়া প্রথম বাংলা গান। লতাকে বাংলা গান গাওয়ানোর ক্ষেত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বিশেষ  ভূমিকা ছিল। এছাড়া সলিল চৌধুরি, সুধীন দাশগুপ্ত,  সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরেও লতা বেশ  কিছু কালজয়ী বাংলা গান গেয়েছেন।

হেমন্তের সুরে হিন্দি ও বাংলা ছবিতে লতা প্রচুর কালজয়ী গান গেয়েছেন। দুজনে ডুয়েটও গেয়েছেন প্রচুর। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রযোজনায় হিন্দি ও বাংলা ছবিতে গান গেয়ে কোনোদিন পারিশ্রমিক নেননি লতা। হেমন্তের কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখেছিলেন লতা মঙ্গেশকর। বাংলা উচ্চারণ সঠিক করতেও লতাকে সাহায্য করেছিলেন হেমন্ত। লতার সঙ্গে হেমন্তর পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। হেমন্তের মুম্বাইয়ের 'গীতাঞ্জলি' বাংলোতে মাঝে মধ্যেই লতা চলে যেতেন। হেমন্তর স্ত্রী বেলাদেবীর সঙ্গেও লতার খুব বন্ধুত্ব ছিল। প্রায়শই লতা ও বেলাদেবী একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যেতেন। দুজনে একসঙ্গে  হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতেও যেতেন। বাঙালি প্রণালীর মাছের পদ খেতে ভালোবাসতেন লতা। হেমন্ত কলকাতা থেকে লতার জন্য দই ও মিষ্টি নিয়ে যেতেন। ১৯৬২ সালে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে 'বিশ সাল বাদ' সিনেমায় 'কহিঁ দীপ জলে কহিঁ দিল' গানের জন্য লতা দ্বিতীয়বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন।

কিশোর কুমার (Kishore Kumar) তাঁকে বোনের মতো ভালোবাসতেন। রেকর্ডিং স্টুডিওতে কিশোর ইয়ার্কি, হই-হুল্লোড় কর‍তে ভালোবাসতেন। আর বেশি মজা করতেন ডুয়েট গানের সময়। রেকর্ডিংয়ের সময় সবাইকে হেডফোন পরতে হয়। এমনই একদিন কানে হেডফোন লাগিয়ে সবাই বসে আছেন স্টুডিওতে। কিশোর কুমারের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের ডুয়েট। কিশোর কুমারের অংশ গাওয়া হয়ে গেছে। এবার লতা মঙ্গেশকর গান গাইতে গেলে কিশোর কুমার নাচের এমন সব ভঙ্গি করতে শুরু করলেন যে, লতা মঙ্গেশকর গান গাইবেন কি, কিছুতেই হাসি চেপে রাখতে পারলেন না। হঠাৎ কিশোর কুমারের মজা করা থামিয়ে দিলেন। তারপর লতা মঙ্গেশকর গান গাইলেন। রেকর্ডিংয়ের সময় লতা মঙ্গেশকর খুব মনোযোগী থাকতেন কিন্তু কিশোর থাকলে অন্য কথা।  

মুম্বইয়ে শচীন কর্তার (Sachin Dev Burman) খুব প্রিয় শিল্পী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর।  লতার কথা উঠলেই তিনি বলতেন, 'আমায় হারমোনিয়াম দে।  লতাকে এনে দে। আর আধা ঘন্টা সময় দে।  আমি সুর করে দিচ্ছি।' লতার ওপর এতটাই ভরসা করতেন। কিন্তু, সঙ্গীত দুনিয়ার মধ্য গগনে থাকার সময়েই লতা বেয়াড়া আবদার শুরু করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, গানের নোটেশন তাঁর হাতে দিতে হবে। প্রয়োজনে তিনি সুর এদিক-ওদিক করে নেবেন। এই দাবি মানেননি শচীন। আর সেখান থেকে দ্বন্দ্বের শুরু। সেই সময় শচীন দেবের মতো অনেকেই, লতাকে তাদের গান থেকে বাদ দিয়েছিলেন। 

শুরুর দিকে সঙ্গীত পরিচালক গোলাম হায়দার লতাকে বাঙালি প্রযোজক শশধর মুখার্জির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তখন শহিদ চলচ্চিত্রের কাজ চলছে। লতার কণ্ঠ 'খুব পাতলা' বলে তিনি তখন কাজ করতে রাজি হননি । মধুমতি সিনেমায় সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত পরিচালনায় 'আজা রে পরদেশী'-র জন্য লতা সেরা মহিলা প্লেব্যাক শিল্পীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন। ভারতের ৩৬ টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষাতে গান গাওয়ার রেকর্ড একমাত্র লতা মঙ্গেশকরেরই। এত দীর্ঘ সময় ধরে কেরিয়ারে বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন গায়িকা। ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিরোপা পেয়েছেন তিনি।

PREV
click me!

Recommended Stories

টেলিভিশনের মেগা ধারাবাহিক থেকে বড় পর্দার সফল নায়িকা, বছরে কত টাকা উপার্জন করেন মিমি চক্রবর্তী?
ডোনার নাচ দিয়ে ৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন, দেখে নিন বিশেষ অতিথির তালিকায় কে