সংক্ষিপ্ত


৬ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রয়াণ ঘটল 'অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ'-র গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের (Lata Mangeshkar)। ১৯১৫ সালে এই একই দিনে জন্মেছিলেন গানটির রচয়িতা কবি প্রদীপ (Kavi Pradeep)।

সারা দেশে নেমে এসেছে শোক। রবিবার সকালে (৬ ফেব্রুয়ারি) কোভিড-১৯ এবং বয়সজনিত জটিলতা কেড়ে নিয়েছে কোকিলকন্ঠী লতা মঙ্গেশকর-কে (Lata Mangeshkar)। সাত দশকের দীর্ঘ কেরিয়ারে, প্রায় ৩৩টি ভাষায় কয়েক হাজার গান গেয়েছেন এই কিংবদন্তী গায়িকা। তবে, তাঁর গাওয়া যে গানটি গোটা জাতির উপর সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছিল, তা হল - 'অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ' (Ae Mere Watan Ke Logon)। যে গান শুনে, আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru)। যে গান শুনে আজও গোটা দেশবাসীর গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এতদিন, এই গানের মাধ্যমেই কবি প্রদীপের (Kavi Pradeep) সঙ্গে সংযোগ ছিল লতা মঙ্গেশকরের। এবার জীবন-মৃত্যুও তাঁদের একে-অপরকে জড়িয়ে দিল। 

১৯৬২ সালের ইন্দো-চিন যুদ্ধে (Indo-Cino War) শহিদ হওয়া ভারতীয় সেনাদের স্মরণ করে এই গান রচনা করেছিলেন কবি প্রদীপ। আর সেই দুর্দান্ত গানে প্রাণ দিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। এক আশ্চর্য সমাপতনে, যে ৬ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিলেন লতা, ১৯১৫ সালে ঠিক সেই একই দিনে জন্মেছিলেন কবি প্রদীপ। ১৯৯৮ সালের ১১ ডিসেম্বর তাঁর প্রয়াণ ঘটেছিল। অবশ্য জন্ম-মৃত্যুর এই আশ্চর্য অম্লমধুর সমাপতনের আগে, তাঁদের দুজনের যোগ ছিল জাদু সঙ্গীত - 'অ্যায় মেরে ওয়াতান কে লোগোঁ'।

আরও পড়ুন -ৃ নিজের দেশে মহিলাদের গান নিষিদ্ধ, অথচ লতার ফ্যান ছিলেন এই নৃশংস স্বৈরচারী পাক জেনারেল

আরও পড়ুন - শুধু গানে গানে নয়, বাংলার সঙ্গে লতার যোগ ছিল মাছ, মিস্টি তাঁতের শাড়ি থেকে সাহিত্যেরও

আরও পড়ুন - Lata Mangeshkar: গ্র্যান্ড হোটেলে লতার সঙ্গে দুই ঘন্টার আড্ডা, স্মৃতিতে বিভোর তাঁর জীবনীকার

কবি প্রদীপের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর

১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সামনে গানটি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। গানটি গাওয়ার পর, তিনি খুবই নার্ভাস ছিলেন। ভেবেছিলেন, তিনি নিশ্চয়ই কিছু ভুল করেছেন। কিন্তু, পরে যখন জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, তাঁর চোখে জল দেখেছিলেন লতা। সুরসম্রাজ্ঞী জানিয়েছিলেন, দলের বাকি সদস্যরা পণ্ডিত নেহরুর সঙ্গে খুবই আগ্রহ নিয়ে কথা বলছিল। তিনি, একটা অন্ধকার কোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যাতে তাঁর উপস্থিতিই না অনুভব করতে পারেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎ, জওহরলাল নেহরু বলে উঠেছিলেন, 'লতা কাহাঁ হ্যায়?' তাতেও নড়েননি লতা মঙ্গেশকর। এরপর, ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) এসে তাঁকে হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। লতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন 'দুই ছোট ভক্ত', অল্প বয়সের রাজীব গান্ধী (Rajiv Gandhi) এবং সঞ্জয় গান্ধীর (Sanjay Gandhi) সঙ্গে। তাঁরা দুজনে লতাকে নমস্কার করে পালিয়ে গিয়েছিল।  

গানটির রচনার পিছনেও একটা অদ্ভূত গল্প রয়েছে। প্রাক্তন আয়কর কমিশনার তথা কলামিস্ট অজয় ​​মানকোটিয়া জানিয়েছেন মুম্বইয়ের মাহিম সমুদ্র সৈকত ধরে হাঁটার সময় আচমকাই গানে কথাগুলি এসেছিল কবি প্রদীপের মাথায়। শুনতে বিস্ময়কর হলেও, গোটা ভারতের মানুষকে আবেগের টানে উদ্বেল করা এই গানটি প্রথম লেখা হয়েছিল একটি সিগারেটের প্যাকেটের ফয়েলে। পরে লিখতে গিয়ে যদি ভুলে যান, তাই গানের কথাগুলি মাথায় আসার পরই, সেটি লিখে রাখতে চেয়েছিলেন প্রদীপ। কিন্তু, হাতের কাছে লেখার কোনও সরঞ্জাম ছিল না। শেষে এক সহকর্মীর কাছ থেকে একটি কলম ধার নিয়েছিলেন। তারপর, একটি সিগারেটের ফয়েলে লেখা হয়েছিল - 'কোই শিখ কোই জাঠ মারাঠা, কোই গুর্খা কোই মাদ্রাসি, সরহদ পার মরনেওয়ালা, হর বীর থা ভারতবাসী, জো খুন গিরা পর্বত পার, ও খুন থা হিন্দুস্তানি, জো শহিদ হুয়ে হ্যায় উনকি, জারা ইয়াদ কারো কুরবানি।'