পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে রেলের চালানো শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনকে বাংলায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনই অভিযোগ তুলে শনিবার সকালে রাজ্যেক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর পরেই জানা যায় পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য আরও ৮টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য। সেই বিষয়ে এদিন নবান্ন থেকে একটি চিঠি রেল মন্ত্রকের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
আজমের ও কেরল থেকে ইতিমধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ২টি ট্রেন এরাজ্যে এসেছে। কিন্তু এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে রয়েছেন এরাজ্যের বহু পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের ফিরিয়ে আনতেই আরও ৮টি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্র জানা যাচ্ছে। ওই ট্রেনগুলিতে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিককে রাজ্যে ফেরান হবে। এই ৮টি ট্রেন ছাড়বে যথাক্রমে চণ্ডীগড়, জলন্ধর, বেঙ্গালুরু, ভেলোর ও হায়দরাবাদ স্টেশন থেকে। ট্রেনগুলি কোথা থেকে কতজন শ্রমিককে নিয়ে কোথায় ফিরবে তা জানিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে রেলমন্ত্রকে তালিকাও পাঠান হয়েছে।
শ্রমিকদের ফেরাতে উদ্যোগ নিচ্ছে না মমতার প্রশাসন, চিঠি দিলেন ক্ষুব্ধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগই নিচ্ছে না রাজ্য, হরিদ্বারে মমতার বিরুদ্ধে স্লোগান বাঙালি তীর্থযাত্রীদের
৫৯ হাজার ছাড়িয়ে গেল আক্রান্তের সংখ্যা, দেশের পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল হবে জুলাইতে
প্রশাসনিক সূত্রে খবর এই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে মূলত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলের শ্রমিকদের ফেরত আনা হবে। এই আটটি ট্রেন ৯ থেকে ১১ মের মধ্যে রওনা দেবে বলে জানা যাচ্ছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা তথা মুর্শিদাবাদের সাংসদ অধীর চৌধুরী দাবি করেন, পরিযায়ীদের বাড়ি ফেরাতে তাঁর আন্দোলনের জন্যই শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে অধীরের এই বক্তব্যে বেজায় খাপ্পা তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “অধীরবাবু দিল্লিতে আছেন, অমিত শাহ দিল্লিতে আছেন। ওরা নিজেদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে আমি জানি না।” রাজর্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপির মত রাজনীতির ঘোলা জলে রাজনীতি করছেন অধীর চৌধুরীও। অথচ করোনা মোকাবিলায় মানুষের পাশে নেই। মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিচ্ছেন। আর ক্রেডিট নিতে চাইছেন উনি।”
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে ৮টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মধ্যে প্রথম ট্রেনটি বেঙ্গালুরু থেকে ছাড়বে। তাতে বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রামের পরিযায়ীরা থাকছেন। বেঙ্গালুরু থেকে ছেড়ে আসা দ্বিতীয় ট্রেনটি যাবে নিউ জলপাইগুড়িতে। এই ট্রেনে, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং ও কালিম্পং-এর পরিযায়ীরা থাকছেন। তৃতীয় ট্রেনটি যাবে পুরুলিয়ায়। সেই ট্রেনে পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া ও বীরভূমের পরিযায়ীরা থাকছেন। ৯ মে হায়দরাবাদ থেকে ছাড়া ট্রেনটিতে থাকবেন মালদহের বাসিন্দারা।
১০ মে জলন্ধর থেকে একটি বিশেষ ট্রেন ছাড়বে। সেই ট্রেনে হুগলি ও নদিয়ার বাসিন্দারা থাকবেন। ১১ মে পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে ছাড়বে তিনটি ট্রেন। এর মধ্যে দুটি ছাড়বে ভেলোর থেকে। একটি ট্রেন আসবে হাওড়ায়। এপরটি যাবে খড়গপুরে। এই দুই ট্রেনে শুধু পরিযায়ী শ্রমিকরাই নন থাকবেন দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করতে যাওয়া এরাজ্যের বাসিন্দারাও। ওইদিন চণ্ডীগড় থেকে ছাড়বে একটি ট্রেন, সেটি যাবে দুর্গাপুরে। এদিকে ৮টি ট্রেন ও তাদের যাত্রাপথ নবান্ন ঠিক করলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে এমন কোনও প্রস্তাব তারা এখনও পাননি বলে দাবি করছে রেলমন্ত্রক। ফলে পরিযায়ীরা আদৌ রাজ্যে ফিরতে পারছেন কিনা তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থেকেই গেল।