গিলানির বিশৃঙ্খলা-উসকানি এবং বাস্তববাদ, একজন আর্মি জেনারেলের স্মৃতিচারণ

Published : Sep 04, 2021, 07:32 PM ISTUpdated : Sep 04, 2021, 07:39 PM IST
গিলানির বিশৃঙ্খলা-উসকানি এবং বাস্তববাদ, একজন আর্মি জেনারেলের স্মৃতিচারণ

সংক্ষিপ্ত

সৈয়দ আলি শাহ গিলানি-কে খুব কাছ থেকে দেখেছেন জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন। ভারতীয় সেনার ১৫ কর্পস-এর প্রাক্তন কমান্ডার, কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার সঙ্গে তাঁর টক্করের স্মৃতিচারণ করলেন।   

জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন -  ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বরের, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন জম্মু ও কাশ্মীর বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। অবশ্য প্রায় ১৫ মাস আগে হুরিয়াতের চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায়, তাঁর মৃত্যুর অনেক আগে, তাঁর অনুপস্থিতিতে উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কী প্রভাব পড়বে, তাই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। গিলানির মৃত্যু উপ-জাতীয় অনুভূতিতে সুড়সুড়ি দিতে পারে আশঙ্কায়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ছত্রছায়ায় তাঁর শেষকৃত্য পরিচালিত হয়েছে। 

শ্রীনগর বিমানবন্দরে একটিমাত্র সাক্ষাত 

ব্যক্তিগতভাবে, কাশ্মীরে আমি দীর্ঘ সময় থাকা সত্ত্বেও, গিলানির সঙ্গে আমার সাক্ষাতের একবার মাত্র সুযোগ হয়েছিল। শ্রীনগর বিমানবন্দরে আমরা কেবল কুশল বিনিময় করেছিলাম। যাইহোক, আমারা মনে মনে আমরা একে অপরকে খুব ভাল করে চিনতাম। তাঁর সঙ্গে আমার চেষ্টা মোলাকাত শুরু হওয়া উচিত ছিল ২০০৫ সালের মে মাসে। তখন আমি উরি ব্রিগেডকে কমান্ড দিচ্ছিলাম এবং তাঁর কামান আমান সেতু দিয়ে মাধ্যমে শ্রীনগর-মুজাফ্ফরাবাদ বাসে করে প্রথমে পিওকে এবং তারপর পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে তিনি তার হুরিয়াত গোষ্ঠীর সফর বাতিল করেন। 

টার্নিং পয়েন্ট 

২০০৭ সালে ড্যাগার ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে ফিরে এসেছিলাম। ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল আমার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মোটামুটি কুখ্যাত দুই স্থানীয় সন্ত্রাসীবাদী নিহত হয়েছিল। তারা চেয়েছিল, জানাজার নামাজ পড়ুন গিলানি। কেউ কেউ বলেন ওই জানাজার নামাজ পড়তে এসেই গিলানি প্রথম অনুভব করেছিলেন, কত সহজে আবেগকে চাগিয়ে দেওয়া যায়। এরপরই তিনি হায়দারপোরার বাড়ি থেকে গৃহবন্দী অববস্থাতেই মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে কুখ্যাত 'চলো' কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। সেই সময় থেকেই আমি তাঁর মনের গভীরে তাকিয়েছিলাম। গোয়েন্দা সূত্রে জেনেছিলাম, গিলানি জিন শার্পের ১৯৯৪ সালে লেখা 'ফ্রম ডিক্টেটরশিপ টু ডেমোক্রেসি' বইটি পডছেন। বইটিতে ১৯৮ রকমের অহিংস আন্দোলনের পদ্ধতি লেখা ছিল। ওই বছরই কাশ্মীরি যুবকরা গিলানির উসকানিতে আবেগপ্রবণ হয়ে সুরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। গিলানি এই কাজে কখনও বাধা দেননি, নিন্দা করেননি। সে বছর পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছিল। 

'আন্দোলনের সন্ত্রাস', গিলানির হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল

২০০৯ সালে শোপিয়ানের দুই তরুণীর ধর্ষণের মামলা, ২০১০-এ মাচিল মামলা এবং টিয়ার গ্যাসের শেলে ১১ বছর বয়সী এক বালকের মৃত্যুকে ককাজে লাগিয়ে একই ধরণের প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন গিলানি। যাকে সেনাবাহিনী 'আন্দোলনের সন্ত্রাস' বা 'Agitational Terror' বলতে বাধ্য হয়েছিল। একসময় তা গিলানির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। পুলিশের জবাবে ১১৭ জনেরও বেশি কাশ্মীরি তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। গিলানি তারপরও অনুগামীদের সেনা শিবির ঘেরাও-এর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে সেনাও জানিয়ে দিয়েছিল, কারোর কিছু হলে একমাত্র গিলানিই তার জন্য দায়ী থাকবেন।

আরও পড়ুন - অকুতোভয় আফগান মহিলাদের রুখতে ব্যর্থ তালিবানি বন্ধুকও - খোদ রাজধানীতেই বিক্ষোভ, দেখুন

আরও পড়ুন - পঞ্জশির কাদের দখলে, প্রবল ধোঁয়াশা - তালিবানদের সঙ্গেই লড়ছে আল-কায়েদা, পাকিস্তানও

আরও পড়ুন - সারাদিন পর্নোগ্রাফি দেখছে তালিবান, তৈরি হচ্ছে 'তালিকা' - কী চলছে কট্টরপন্থীদের মাথায়, দেখুন

গিলানির অহং-এ ঘা

গিলানির সঙ্গে আমার আরও দুটি মোলাকাত হয়েছিল। ২০১১ সালের মে মাসে, বারামুলার একজন বিশিষ্ট আলেম মারা যান। তিনি শান্তির প্রবক্তা ছিলেন। আমাকে প্রায়ই স্থানীয় অনুভূতি বোঝার বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। আমি জানতাম গিলানি পরের দিন তার বাড়ি যাবেন। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তারা আকাশ ছোঁয়া অহং-এ ঘা দিতে আমি তাঁর আগে যাব। হেলিকপ্টারে করে বারামুলায় গিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় দেখা করে সমবেদনা জানালাম। গিলানি পরে এসে শুনেছিলেন আমি আগে এসেছিলান, খুব একটা খুশি হননি।

ঘটনাবহুল বই প্রকাশ
২০১২ সালের শুরুতে প্রকাশ পেয়েছিল গিলানির আত্মজীবনী 'উল্লার কিনারে'। কয়েকজন জওয়ানকে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে পাঠিয়ে আমি বইটির ছয়টি কপি কিনেছিলাম। পরের দিন, কাশ্মীরি মিডিয়া প্রথম পাতায় খবরটা বেরিয়েছিল। পরের দিন অন্য একটি ইভেন্টে মিডিয়াকে আমি জানিয়েছিলাম, বইটি পড়লে গিলানি সাহেবের মতো একজন প্রবীণ এবং একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের চিন্তাভাবনা এবং কর্ম সংস্কৃতি সম্পর্কে জানত পারব আমি এবং আমার অফিসাররা। গিলানি এতে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছিলাম। বিপথগামী দেশবাসীকে খুশি করলেও অনেক সময় তাদের অনুভূতি বদলায়। তবে আমার সেই প্রক্রিয়া কাজে দেয়নি, গিলানিও তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেননি, আমিও করিনি। কিন্তু, একেবারে সামনাসামনি না হয়েও, আমাদের রেষারেষি আরও সুখকর হয়ে উঠেছিল। 

লেখক, সেনাবাহিনীর ১৫ কর্পস-এর প্রাক্তন কমান্ডার, বর্তমানে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর
 

PREV
click me!

Recommended Stories

ই-চালান ইন্টিগ্রেশনে উত্তরপ্রদেশে সড়ক সুরক্ষায় জোর, ১৭ জেলায় শুরু প্রক্রিয়া
রাহুলের সমালোচনা করতেই কংগ্রেসের 'ফোঁস', জিন্না-বিজেপি যোগের কথা বলে মোদীকে 'বিকৃতির মাস্টার' বলল