একসময় বলি অভিনেতা নানা পাটেকরের (Nana Patekar) বাড়িতে রাঁধুনির কাজ করতেন বারানসীর (Varanasi) সন্তোষ মুরদ সিং। ২০০৩ সালে তাঁর 'মৃত্যু' হলেও, আসন্ন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনেও (UP Elections 2022) ভোটে দাঁড়াতে চান তিনি।
আসন্ন উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে (Uttar Pradesh) ভোটে দাঁড়াচ্ছেন এক মৃত ব্যক্তিও। শুধু এইবারই নয়, গত ১৯ বছর ধরেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেন বারাণসীর (Varanasi) এই ব্যক্তি। তবে রাজনীতি করার বা সমাজ কল্যানের কোনও লক্ষ্য নেই তাঁর। ছিতাউনির (Chhitauni) বাসিন্দা সন্তোষ মুরত সিং চান শুধু নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে। সরকারি রেকর্ড অনুসারে, ২০০৩ সালে মুম্বইয়ে একটি ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণে (2003 Mumbai Train Blast) তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তবে সন্তোষের দাবি, তাঁর আত্মীয়রা জালিয়াতি করে তাঁর ওই মৃত্যুর শংসাপত্র তৈরি করেছে।
এ যেন বলিউড অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠির (Pankaj Tripathi) ফিল্ম 'কাগজ'-এর কাহিনি। এই কাহিনির সঙ্গে জড়িয়েও আছে এক বলিউড অভিনেতার নাম, নানা পাটেকর (Nana Patekar)। সূত্রপাত সেই ২০০০ সালে। সন্তোষ মুরত সিং জানিয়েছেন, ওই বছর নানা পাটেকর এক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য ছিতাউনিতে এসেছিলেন। সেই সময় সন্তোষের সঙ্গে নানার পরিচয় হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে সন্তোষ মুম্বই চলে গিয়েছিলেন। বলি অভিনেতার বাড়িতে রাঁধুনি হিসাবে কাজ নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন - UP Polls 2022: উত্তরপ্রদেশের ভোটে প্রার্থী এই বিকিনি মডেল, ছবি দেখলে চোখ উঠবে কপালে
২০০৩ সালে মুম্বইয়ের এক ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময়ই তাঁর তুতো ভাইরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল বলে দাবি সন্তোষের। তিনি মুম্বইয়ে ওই বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন বলে, ষড়যন্ত্রকারীরা উত্তরপ্রদেশের রাজস্ব বিভাগ থেকে তাঁর মৃত্যুর জাল সংশাপত্র তৈরি করিয়েছিল। তাদের নজর ছিল, সন্তোষের নামে থাকা ১২ একর জমির উপরে। মৃত্যুর শংসাপত্র হাতে পাওযার পরই, সন্তোষের তুতোভাইরা ওই জমি বিক্রি করে দিয়েছিল।
২০০৪ সালে গ্রামে ফিরে তিনি বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন। তারপর, বিভিন্ন সরকারি দফতরে ছোটাছুটি করেছেন, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। কোনওভাবেই নিজেকে তিনি জীবিত প্রমাণ করতে পারেননি। ২০১২ সাল থেকে তিনি বারবার দিল্লির যন্তর মন্তরে (Jantar Mantar, Delhi) অবস্থান করেছেন। একবার ১৪ দিনের জন্য জেলও খেটেছেন। কিন্তু তাঁর কাজ হয়নি। সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, বিরক্ত সন্তোষ ঠিক করেছিলেন তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে জিতে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করবেন।
তাই, গত ১৭ বছর ধরে কোনও না কোনও নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করছেন। সন্তোষ মুরত সিং জানিয়েছেন, তিনি প্রথমবার ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লড়ার চেষ্টা করেছিলেন। এরপর ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বারানসী কেন্দ্র থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Narendra Modi) বিরুদ্ধে লড়ার জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকবারই তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাঁর নিজেকে জীবিতও প্রমাণ করা হয়নি। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শিবপুর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেও, হেরে গিয়েছিলেন।
এবার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তিনি মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির রামনাথ কোভিন্দের (Ramnath Kovind) জন্মস্থান, কানপুর (Kanpur) থেকে আসন্ন নির্বাচনে লড়লে তিনি নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে পারবেন। জনসংঘ পার্টি (Jansangh Party) তাঁকে কানপুরের মহারাজপুর (Maharajpur) আসন থেকে টিকিট দিয়েছে। তিনি মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সন্তোষ মুরত সিং-এর দাবি, তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। হতাশ সন্তোষ এর প্রতিবাদে গত সপ্তাহ থেকে সিভিল লাইনস এলাকায় অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তিনি অনশন করার হুমকিও দিয়েছেন। তবে নির্বাচনী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্রে অন্তত ১০ জন প্রস্তাবকারীর স্বাক্ষর লাগে। সন্তোষ মুরদ সিং-এর পেশ করা মনোনয়নপত্রে তা ছিল না।