
"চা না খেলে মাথা কাজ করে না..." অনেকে আবার "বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিচ্ছি" ভীষণ পরিচিত দুটি উক্তি বাঙালির কাছে। বিকেল হলেই গরম এক কাপ চা'য়ে একটা সিগারেটের ধোঁয়া না উড়লে পোষায় না অনেকেরই। সতর্ক করতে গেলে অনেকেই বলেন, "এতে কি আর এমন ক্ষতি?" কিন্তু জানেন কি, এই অভ্যাস শরীরের উপর আসলেই কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলছে? বিশেষ করে ফুসফুস, পাকস্থলী এবং খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি বহু গুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে এই অভ্যাস।
চিকিৎসকরা বলেন, চা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও রয়েছে, তবে শরীরের উপর চায়ের উপকারিতা তখনই কার্যকর হয়, যখন সেটি সঠিকভাবে ও সময়মতো পান করা হয়। বিশেষ করে চিনি বা দুধ ছাড়া যেকোনো ভেষজ টি'র উপকারের কথা আমরা সকলেই জানি। তবে বেশিরভাগ মানুষই এখন চিনি মেশানো দুধ-চা খেতে অভ্যস্ত। ধূমপানের সঙ্গে এই চা গ্রহণ সেই উপকারিতাকে নেতিবাচক দিকে নিয়ে যায়। এটি হজম শক্তি দুর্বল করে, সাথে পাকস্থলীর pH ভাষণ নষ্ট করে এবং দীর্ঘমেয়াদে বিপজ্জনক রোগের জন্ম দেয়।
‘Annals of Internal Medicine’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণাপত্র, যাতে দাবি করা হয়েছে, গরম চায়ের সঙ্গে ধূমপান করলে খাদ্যনালীর কোষগুলি ড্যামেজ হয়। এতে খাদ্যনালীর ক্যানসার বা Esophageal Cancer হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়।
আসলে অতিরিক্ত গরম চা খাদ্যনালীর অভ্যন্তরীণ আবরণে ক্ষতি করে। এর সঙ্গে ধূমপানের সংমিশ্রণ খাদ্যনালী ক্যানসারের (Esophageal Cancer) আশঙ্কা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে নিকোটিন পাকস্থলীর রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয় এবং হজমে ব্যবহৃত রসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে পাকস্থলীর দেয়ালে আলসার তৈরি করতে পারে। যা দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ক্যাফিন ও নিকোটিনের বিপজ্জনক প্রভাব
গরম চায়ে থাকা ক্যাফিন শরীরে পাচক রস উৎপাদনে সহায়ক, যা সাধারণত হজমে সাহায্য করে। কিন্তু যদি এই সময় ধূমপান করা হয়, তাহলে চায়ের ক্যাফিন এবং সিগারেটের নিকোটিন একত্রে শরীরে এক জটিল রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথা ঘোরা, ক্লান্তিভাব, মেজাজ খারাপ বা আচ্ছন্ন অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এটি মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগও বাড়াতে পারে।
এছাড়াও দীর্ঘদিন চা ও ধূমপানের একত্রে অভ্যাস ফুসফুসের কোষগুলিকে ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষে পরিবর্তন করতে পারে। ফুসফুসের ক্যানসার আগে থেকেই ধূমপায়ীদের জন্য প্রাণঘাতী রোগ ছিল, তার সঙ্গে গরম চায়ের প্রভাব এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।