
গরমে তাপমাত্রা যখন ৪০ ডিগ্রির ঘরে ঘোরাফেরা করে, তখন শুধু বৃদ্ধ নয়, শিশুরাওbহিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকে। তাদের তাপ সহ্য করার ক্ষমতাও বড়োদের থেকে তুলনামূলকভাবে কম। ফলে গরমে অতিরিক্ত সময় বাইরে থাকা, জলশূন্যতা ও অতিরিক্ত ঘাম এসব দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা থেকে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বেশি হয় শিশুদের মধ্যে। তাই বাচ্চাদের যত্নে রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হবে অভিভাবকদের।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ছোটদের মধ্যে:
* অতিরিক্ত ঘাম * গলা ও জিভ শুকিয়ে যাওয়া, ভীষণ জল তেষ্টা পাওয়া * মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা * বমি বমি ভাব বা বমি * শ্বাসকষ্ট * ত্বক গরম ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া * আচমকা জ্বর ও ডায়ারিয়ার লক্ষণ * চেতনা হারানো (অত্যন্ত বিপজ্জনক)
অভিভাবকরা কী কী করবেন?
১. শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলেন, বেশির ভাগ সময় বাচ্চারা ঠিকমতো জল খায় না স্কুলের সময়টাতে। সারাদিনে তাদের শরীরে জলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে কিনা, স্কুল বা টিউশনে জল খাচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে। শরীরে জলের ঘাটতি মানেই পাশাপাশি খনিজ উপাদানগ, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইডের ঘাটতি হওয়া। এর থেকে বমি, ডায়ারিয়া বা কোষ্টকাঠিন্য হতে পারে, জ্বরও আসতে পারে। তাই জলের ঘাটতি পূরণ করতে জলের বদলে স্কুলের টিফিনে লেবুর রস, তরমুজের বা আনারসের শরবত করে দেওয়া যায়। রসালো মরশুমি ফল খাওয়াতে পারেন। কখনও খুব শরীর খারাপ, বমি, পেট খারাপ হলে ORS জলে গুলে খাওয়াতে পারেন।
২. গরমের সময়ে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি শিশুদের মধ্যে। তা থেকে জ্বর, সর্দি-কাশি, পেট খারাপ, অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই পরামর্শ দেন, জ্বর হলে হালকা প্যারাসিটামল খাওয়াতে পারেন তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। তবে ভাইরাল ফিভার ভেবে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে যাবেন না। জ্বর তিন দিনের বেশি হয়ে গেলে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে - ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো রোগ কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে আগে।
৩. দুপুরে সূর্য মাথার ওপর থাকলে সেই সময় খুব জরুরি কাজ ছাড়া বাচ্চাকে নিয়ে কোথাও বেরোবেন না। একান্তই বেরোতে হলে, শিশুর মাথায় টুপি বা পাতলা সুতির স্কার্ফ জড়িয়ে দিতে পারেন। বাচ্চাদের জন্য সানস্ক্রিনও পাওয়া যায়, মাখিয়ে নেবেন দৃশ্যমান দেহাংশ। রোদ থেকে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জল খাওয়া বা ঠান্ডা জলে স্নান কোনটাই করাবেন না। কিছুক্ষণ শরীর ঠান্ডা হতে বিশ্রাম নিতে দিন।
৪. গরমকালে বিশেষ নজর দিতে হবে শিশুর খাওয়া দাওয়ায়। বাইরের খাবার প্যাকেজড স্ন্যাক্স, সফ্ট ড্রিঙ্কস বা রাস্তা থেকে কেনা শরবত এড়িয়ে চলুন। বাড়ির তৈরি হালকা ডাল, ভাত, মাছের ঝোল, সবজি, চিকেন স্টু এসব খেতে পারে, স্নাক্স হিসেবে ড্রাই ফ্রুট, বিস্কুট, ফ্রুট বা ভেজিটেবল স্যালাড এসবও খেতে পারে। জলখাবারে খুব বেশি প্রোটিন দেবেন না। হালকা কিছু খাওয়াতে পারেন যাতে পেট ভরবে এবং পুষ্টিও মিলবে। যেমন দুধ কর্নফ্লেক্স, ওট্স, ঘরে বানানো কোনো স্মুদি বা শেক কিছু, দই-চিঁড়ে, দইয়ের ঘোল এসব খেতে পারে।
৫. সারা রাত ভিজিয়ে রাখা মেথির জল, মৌরি-মিছরি ভেজানো জল, বেলের শরবত, নুন লেবুর শরবত খাওয়াতে পারেন শিশুকে। এতে পেট ঠান্ডা থাকবে।
সারাংশ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি যে কেবল বড়দের থাকে তা নয়, ছোটদের মধ্যেও এর আশঙ্কা প্রবল। অভিভাবকের খেয়াল রাখতে হবে কিছু বিষয়, যত্নে রাখতে হবে শিশুদের।