কাঁটাতারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল কিশোরী ফেলানি খাতুন অভিযোগ, কাঁটাতার পেরনোর সময়ে তাকে গুলি করে বিএসএফ গুলি খেয়ে কাঁটাতারে ঝুলে থাকার ছবি ভাইরাল হয় গোটাবিশ্বে ন-বছর পরেও বিচার পায়নি অভিযুক্তের পরিবার

গুলি খেয়ে কাঁটাতারে ঝুলছে এক কিশোরীভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নাম ফেলানি খাতুনবয়স ১৫আটবছর আগে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল এই ছবি মানবাধিকার প্রশ্নেঅনুপ্রবেশ প্রশ্নেনির্বিচারে বিএসএফের গুলি চালনার প্রশ্নেওযদিও আটবছর পরেও বিচার পায়নি নিহত ফেলানির পরিবার

কী ঘটেছিল সেদিন?

২০১১-র ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতার পেরোতে যায় ফেলানিতখন দিল্লিতে একটি বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করত সে ওর বিয়ের ঠিক হয়, তাই বাবার সঙ্গে কাঁটাতার বেড়া পেরোতে যায় সে ওই দলে ওকে আর ওর বাবাকে নিয়ে সবসুদ্ধ চল্লিশজন ছিলেন৩৯জন পেরিয়ে যাওয়ার পর যখন ওর পালা আসে, তখনই সালোয়ার আটকে যায় লোহার কাঁটায়ওই সময়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের জওয়ান অমিয় ঘোষঅভিযোগ, ফেলানিকে দেখা মাত্র গুলি চালান তিনি গুলিতে ফেলিনির দেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে টানা চারঘণ্টা গুলি খাওয়া শরীর থেকে টপটপ করে রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকেওই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও চেষ্টাই করা হয় না মরে যাওয়ার খানিকক্ষণ আগে একটু জল চায় ফেলানি সেই জলটুকুও তাকে দেওয়া হয় না ওই কাঁটাতারে ঝুলেই মরে যায় ১৫ বছরের ওই কিশোরীঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় পড়ে যায়ভারত-বাংলাদেশে সীমান্ত পেরিয়ে গোটা দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দেয় ফেলানির ঝুলে থাকার ছবি

তারপর?

সমালোচনার মুখে অভিযুক্ত অমিয় ঘোষের বিচার একটা হয় বটে, কিন্তু বিএসএফের আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ছাড়া পেয়ে যান ওই জওয়ান তারও পর, ২০১৪তে ওই আদালতেরই অ্যাপিলিয়েট কোর্টে আবেদন করা হয়যাতে সাক্ষ্য দেন ফেলানির বাবা নুর খান কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটার আব্রাহাম লিঙ্কন কিন্তু সেখানেও নির্দোষ প্রমাণিত হন অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ানমানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরীটি রায়ের কথায়, "বিএসএফের গুলিতে প্রতিবছর ১২০০ মানুষ নিহত হনযদিও কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গুলি করে মারার কোনও অধিকার বিএসএফের নেই কিন্তু এই ধরনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই সুকৌশলে ওরা দেখায়, নিহত ব্যক্তি আক্রমণ করতে গিয়েছিলেন বিএসএফকে তাই আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালানো হয়এইভাবেই এত মানুষ মেরেও ছাড় পেয়ে যায় বিএসএফ ফেলানির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল"

যদিও এদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্পষ্টই মন্তব্য করে, কাঁটাতারে সালোয়ার আটকে যাওয়া অবস্থায় একজন কিশোরী বিএসএফকে আক্রমণ করেছিল, একথা বিশ্বাসযোগ্য নয় এটি নিঃসন্দেহে হত্যা এবং রীতিমতো ঠান্ডামাথায় হত্যা তাই নিহতের পরিবারকে ভারতীয় মুদ্রায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছিল মানবাধিকার কমিশনকিরীটিবাবুর কথায়, "সেই ক্ষতিপূরণটুকু আজ অবধি দেওয়া হয়নি কারণ তা দিলেই যে কার্যত স্বীকার করে নিতে ফেলানিকে হত্যা করা হয়েছিল"

এরপর অবশ্য কিরীটিবাবু নিজে ফেলানির বাবা নুর খানকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন যা আজ অবধি পড়ে রয়েছে শীর্ষ আদালতে শুনানি হচ্ছে না

এই পরিস্থিতিতে কিরীটিবাবুর আক্ষেপ, "ভারত যদি আন্তর্জাতিক আদালতের অন্তর্ভুক্ত হত, তাহলে আমরা আমাদের বন্ধু দেশের হয়ে সেই আদালতে নিয়ে যেতে পারতাম এখন একমাত্র বাংলাদেশই চাইলে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে, ন্যায়বিচার পেতে"

মঙ্গলবার ছিল ফেলানির মৃত্যুদিন৭ জানুয়ারি কাঁটাতারে বিদ্ধ হয়েছিল যেদিন ১৫ বছরের ওই কিশোরী