সংক্ষিপ্ত

  •  প্রয়াত হলেন চিত্র পরিচালক তথা কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
  •  বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ও সাহিত্য জগতে এক সোনালি অধ্যায়ের অবসান
  •  ১৯৬৮ সালে মাত্র ১০ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি দিয়ে চলচ্চিত্রে হাতেখড়ি
  •  ছবিই নয় পুরস্কারের ঝুলিতেও রয়েছে একাধিক জাতীয় পুরস্কার

একের পর এক শোকের ছায়া। ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে প্রিয়জনের মৃত্যুসংবাদ। প্রয়াত হলেন চিত্র পরিচালক তথা কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। সকাল হতে না হতেই  এই মৃত্যুর খবরের সকলেই মর্মাহত। দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাড়িতেই মৃত্যু হয় তার। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন বুদ্ধদেব বাবু, চিকিৎসাও চলছিল সেইমতোন, পাশাপাশি চলছিল ডায়ালিসিস। তবে শুধু কিডনির সমস্যাই নয়, বাধর্ক্যজনিত সমস্যাও গ্রাস করেছিল তাকে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমের দেশে চিরকালের মতোন চলে গেলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে চলচ্চিত্র জগতে।

আরও পড়ুন-চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া, প্রয়াত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত...

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ও সাহিত্য জগতে এক সোনালি অধ্যায়ের অবসান হল । ১৯৪৪ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার আনাড়া গ্রামে জন্ম বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর। বাবা তারাকান্ত দাশগুপ্ত ছিলেন রেলের চিকিৎসক। মাত্র ১২ বছর বয়সেই পড়াশোনার জন্য কলকাতা চলে আসেন তিনি। তারপরই অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা স্কটিশ চার্চ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।  

নিজের কর্মজীবনও শুরু করেছিলেন অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অর্থনীতিতে অধ্যাপনা করেছেন। এরই ফাঁকে উৎসাহ ছিল ফিল্ম স্টাডিজেও।  অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ের বাস্তবতার উপর যা উপলব্ধি করেছিলেন সেটাই ছিল তার সিনেমার প্রেক্ষাপট।

সালটা ১৯৬৮। মাত্র ১০ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি দ্য কন্তিনেন্ত অফ লাভ দিয়ে চলচ্চিত্রে হাতেখড়ি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর। বিখ্যাত পরিচালক মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটকের যোগ্য উত্তরসূরী বলা হতো বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে। তাদেরকে অনুপ্রেরণা করেই এগিয়ে চলেছিলেন নিজের লক্ষ্যে। ১৯৭৮ সালে প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের  ছবি দূরত্ব-এর জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। তারপর একাধিক ছবি  যেমন নিম অন্নপূর্ণা, গৃহযুদ্ধ, তাহাদের কথা, উত্তরা, বাঘ বাহাদূর, চরাচর, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান সহ একাধিক ছবি রয়েছে তার ঝুলিতে। 

শুধু ছবিই নয় পুরস্কারের ঝুলিতেও রয়েছে জাতীয় পুরস্কার।  স্বপ্নের দিন, উত্তরা ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ১৯৯৩ সালে বাংলার সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল তাহাদের কথা এবং দূরত্ব।দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালে স্পেন ও মাদ্রিদের আন্তর্জাতিক  চলচ্চিত্র উৎসবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্কতে  জীবনকালের কৃতিত্বের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়।

চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপশি সাহিত্য জগতেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। একাধিত কবিতা উঠে এসেছে বুদ্ধদেবের কলমে, যা নিয়ে চর্চা আজও অব্যাহত। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, রোবটের গান, ছাতা কাহিনি, গভীর আড়ালে। মার্চ মাসে তিনি নতুন চিত্রনাট্য লিখছিলেন। এক মহিলা গোয়েন্দার গল্পের সুতো বুনতে বুনতে এক লহমায় সবটা শেষ। অবসরে কোনওদিনই বিশ্বাসী  ছিলেন না বুদ্ধদেব আর তাই হয়তো নিঃশব্দেই  ঘুমের মধ্যে চিরদিনের মতো অবসর নিয়ে নিলেন  চলচ্চিত্র জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।