সংক্ষিপ্ত
বাঙালির বিজয়ার মিষ্টিতে এসেছে বড়সড় বদল। নারকেল নাড়ু, মোয়া, সন্দেশ, নিমকির জায়গায় এসেছে পিৎজা কিম্বা বার্গার। সব কিছুতেই একটা মিশ্রণ ঘটে চলেছে, পুরনো প্রথাকে বিসর্জন দিয়ে নতুন রীতির প্রচলন।
চারদিনের পুজো শেষে বিজয়ার দিন প্রতিমা বিসর্জন নিয়েও অতীতে যে উৎসবের মেজাজ দেখা যেত, তা যেন এখন অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে৷ সব কিছুতেই একটা মিশ্রণ ঘটে চলেছে–পুরনো প্রথাকে বিসর্জন দিয়ে নতুন রীতির প্রচলন৷ কোনও কিছুকেই আর আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইছে না একদল এলিট নব্যসংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাই বদল এসেছে বাড়ির নারকেল নাড়ু, সন্দেশ কিম্বা নিমকিতেও। বাঙালির মিষ্টিমুখের রদবদল নিয়ে লিখছেন সংবাদ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সরকার।
উত্তর কলকাতার এক নব্বই বছরের প্রবীন বললেন, হাতের নাড়ুর সেই স্বাদ কি প্যাকেটের নাড়ুতে পাওয়া যায়? কিম্বা সেই সন্দেশ! একেবারেই না। দোকানের নাড়ু সন্দেশে আর যাই থাক, আন্তরিকতা থাকে না। আর সেই আন্তরিকতা আর ভালোবাসাই বাড়িয়ে দিত সেযুগের নাড়ু-সন্দেশের মিষ্টতা। আজ বাঙালি নাড়ু সন্দেশে ঐতিহ্য খুঁজে পায় না। বিজয়া হয় পিৎজা কিম্বা বার্গারে এলিট স্টাইলে। নাড়ু সন্দেশ কিম্বা নিমকির ঐতিহ্য তাই হারাতে বসেছে বাঙালি। সেযুগে নারকেল নাড়ু বানানো ছিল রীতিমতো একটা মেহনতের কাজ। প্রথমে নারকেল কোরানো। তারপর গুড় কিম্বা চিনিকে উনুনের আঁচে গলিয়ে তাতে পাক দেওয়া শেষে সেই পাকে নারকেল কোরা ঢেলে আবার পাক দেওয়া৷ আর তারপর সেই হাতে গরম খণ্ডটিকে গোল্লা পাকিয়ে নারকেল নাড়ু বানানো হত। আজ পুরোটাই রেডিমেড!!
চলে আসি ভিন্ন ভিন্ন ছাপের সেইসব মজার সন্দেশ বানানোর গল্পে। হরেকরকম কাঠের বা পাথরের ছাঁচে ফেলে চাপ দিয়ে দিয়ে সন্দেশ বানানো হত সেযুগে। সে এক মহাপর্ব। রান্নাঘরে রীতিমতো ভিড় জমে যেত৷ আর সন্দেশের জন্য বানানো হত হরেক রকম ছাপ। কোনওটা ফুলের মতো সন্দেশ, কোনওটা বা আমের মতো, কোনওটা বা তালশাঁসের মতো, একথালায় কতরকম সন্দেশ যে সাজিয়ে রাখা হত, তার শেষ নেই৷
মুড়ি কিম্বা খই এবং গুড়কে একসাথে জ্বাল দিয়ে গোল পাকিয়ে যে মিষ্টি তৈরি করা হয় তাকেই মোয়া বলে। কেউ কেউ ক্ষীর এবং খই দিয়েও মোয়া বানাতেন। একসময় এই মোয়া বানানোর রেওয়াজ ছিল বিজয়ায়। আজ মোয়া মেলে দোকানে কিম্বা প্যাকেটে, জয়নগরের মোয়া। সেই মোয়াও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বোঁদের নাড়ু, গুড়পিঠের মত পদগুলি তো এখন অতীত।
নিমকি বানানোও ছিল তখন আরও এক পর্ব৷ ময়দা মাখা, তাতে একটু হালকা নুনের ছিটে, কোথাও একটু কালোজিরে, তারপর কাঠের থালা বারকোশে ফেলে কোনাকুনি করে ছুরি দিয়ে কেটে নিমকির আকার বানিয়ে তাকে ঘিয়ে ভেজে তোলা। নিমকির গন্ধে ঘর তখন ম-ম করত। চারদিক৷ এখন আর সেই মনমাতানো গন্ধ কোথায়! আর নিমকিও কোথায়! এখন প্যাকেটে করে দোকান থেকে নিমকি আসে।
আরও পড়ুন-
পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে বিদায় নেন টাকি রাজবাড়ির দুর্গা, বিসর্জনের আগে আজ সেখানে বরণের তোড়জোড়
দশমীর বিদায় বেলা, সাঙ্গ হল সিঁদুর খেলা, রাঙা আভায় মেতে উঠলেন বাগবাজার সার্বজনীনের মহিলারা