সংক্ষিপ্ত
অতীতের টিনের ছাওনি ওয়ালা মন্দিরে পুজো হলেও আজ থেকে প্রায় একশো বছর পুর্বে তাদের পুর্বপুরুষরা পাকা মন্দির তৈরী করলে সেখানেই চলছে পুজো। ঘোষ বাড়ির কুল দেবতা কাঠামো পুজো দিয়েই শুরু হয় দুর্গা পুজো।
আকাশে ভেজা তুলোর মতো মেঘ মাঠে মাঠে কাশ ফুলের বন বাঙালির ঘরের মেয়ে উমার আগমনী বার্তা দিচ্ছে। পাড়ার সার্বজনীন পুজো থেকে পুরোনো জমিদার বাড়ির পুজো সর্বত্রই সাজো সাজো রব। তেমনই দক্ষিণ দিনাজপুর (South Dinajpur) জেলার বালুরঘাট (Balurghat) ব্লকের পতিরামের জমিদার বাড়িতেও শতাব্দী প্রাচীন দুর্গা পুজো (Durga Puja) ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
পতিরাম জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ছয় পুরুষ আগে শুরু হয়। বছর হিসেবে ধরলে কম করে তা ২০০- ২৫০ বছর৷ প্রত্যেক বছর জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার শুভ সূচনা হয় পতিরামের ঘোষ জমিদার বাড়ির। কথিত রয়েছে জমিদার বাড়ির বর্তমান উত্তরসূরী সাগর ঘোষের পুর্বপুরুষরা বাংলাদেশ, বর্ধমান থেকে নদীপথে দক্ষিণ দিনাজপুরে এসে জমিদারী স্থাপন করেন। জমিদারি স্থাপনের পাশাপাশি পতিরামে শুরু করেন দুর্গাপুজোর। সেই সময় এলাকার একমাত্র পুজো হওয়ার ফলে গ্রামের লোক তো বটেই দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ও জমিদার বাড়ির সকলেই এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে থাকতেন। পুজোর কয়েকদিন ধরে চলত মঙ্গলচণ্ডী গান। পুরনো রীতি রেওয়াজ মেনে এখনো পুজো হলেও নেই আগের মত জৌলুস। জমিদারবাড়ির উত্তরসূরিরা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেন। বর্তমানে পতিরাম জমিদার বাড়িতে সাগর ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী কল্পনা ঘোষ থাকেন। তবে পুজোর মধ্যে সকলে আবার একত্রিত হন। এই জমিদার বাড়ি পুজো কেন্দ্র করেই হয় পরিবারের মিলন উৎসব।
অতীতে টিনের ছাউনি দেওয়া মন্দিরে পুজো হত। আজ থেকে প্রায় একশো বছর পূর্বে তাঁদের পূর্বপুরুষরা পাকা মন্দির তৈরি করেন। তারপর থেকে সেখানেই পুজো হয়। ঘোষ বাড়ির কুল দেবতার কাঠামো পুজো দিয়েই শুরু হয় দুর্গাপুজো।
আরও পড়ুন- মহালয়ার দিনই নাকতলায় পুজোর উদ্বোধন, চেতলায় চক্ষুদান মমতার
অতীতে এই পুজোতে মহিষ, পাঁঠা, লাউ, আখ প্রভৃতি প্রচলন থাকলেও সেই সব রীতি তুলে দিয়েছে এই জমিদার বাড়ির বর্তমান প্রজন্ম। স্বাধীনতার পরে এই পুজোতে বিভিন্ন খ্যাত নামা স্বাধীনতা সংগ্রামীর আনাগোনা ছিল বলেও জানা গিয়েছে। অতীত এই পুজো ঘিরে যাত্রা, কবিগান সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলেও বর্তমানে আর্থিক কারণে ও লোক বলের অভাবে সে সব কিছু না হলেও অতীতের রীতি মেনেই এখন নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো চলছে এই জমিদার বাড়ির বর্তমান গৃহকর্তা সাগর কুমার ঘোষের হাত ধরে।
আরও পড়ুন-কুলিক নদীতে ভাসে না বাংলাদেশের বজরা, আজও সাড়ম্বরে চলে রায়গঞ্জের দুর্গা পুজো
এবিষয়ে জমিদার বাড়ির সদস্য সাগর ঘোষ বলেন, "প্রত্যেক বছর জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়েই দুর্গোৎসবের শুভ সূচনা হয়। তাঁদের এই পুজোয় কোনও অন্নভোগ হয় না। এমনকী, কোনও বলি প্রথাও নেই। প্রায় ছয় পুরুষ আগে এই পুজোর শুভ সূচনা হয়েছিল। তবে কে এই পুজোর সূচনা করেছিল তা কারও জানা নেই। আগে এই পুজোকে কেন্দ্র করে মঙ্গলচণ্ডী গান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হত। তবে এখন সেসব আর হয় না৷ শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই পুজো করা হয়। আগেও যে নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করা হত এখনও একই রকম ভাবেই পুজো হয়।"
আরও পড়ুন- পুজোয় প্যান্ডেল হপিং সেরে ফেলুন সপ্তমীর মধ্যে, অষ্টমী থেকে ফের বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতায়
এবিষয়ে সাগর ঘোষের স্ত্রী কল্পনা ঘোষ জানান, তারা পতিরামে বাড়িতে মাত্র এখন দু'জনই থাকেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কেউ কলকাতা আবার অন্য কোথাও থাকেন। এমনি সময় যোগাযোগ থাকলেও, পুজোর মধ্যে সকলে পতিরামে আসেন। তখন সকলের সঙ্গে আড্ডা গল্প সব হয়৷ জমিদারি প্রথা আর নেই তবে এখনও তাঁদের বাড়ি জমিদার বাড়ি বলেই পরিচিত।