সংক্ষিপ্ত
কথিত আছে, প্রায় তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গার আসনে মা মনসাকে বসিয়ে পুজো করছেন ফুলঘরা গ্রামের বাসিন্দারা। পুরোনো নিয়মের আজ কিছুই বদলায়নি।
দুর্গাপুজোতে (Durga Puja) মেতে উঠেছে গোটা রাজ্য। বেশ কিছু পুজোর উদ্বোধনও এই মুহূর্তে শেষ হয়ে গিয়েছে। আর ঠিক এই সময় দক্ষিণ দিনাজপুরের (South Dinajpur) বালুরঘাট (Balurghat) ব্লকের বায়োলদার গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলঘরা গ্রামে বাসিন্দারা মনসা পুজোয় মেতে ওঠেন। এই গ্রামের বাসিন্দারা দেবী দুর্গার আসনে মা মনসাকেই (Mansa Puja) বসিয়ে পুজো করেন। দীর্ঘদিন ধরে এবাবেই শারদ আনন্দে সামিল হন তাঁরা। দুর্গা পুজোর নিয়ম মেনেই এখানে মা মনসা পূজিত হন।
কথিত আছে, প্রায় তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গার আসনে মা মনসাকে বসিয়ে পুজো করছেন ফুলঘরা গ্রামের বাসিন্দারা। পুরোনো নিয়মের আজ কিছুই বদলায়নি। একইভাবে সব নিয়ম মেনেই পুজোর আয়োজন করা হয়। মায়ের কাছে ভক্তিভরে কোনও কিছু চাইলে তা পূর্ণ হয় বলে বিশ্বাস গ্রামের বাসিন্দাদের।
বলা হয়, বহুকাল আগে ফুলঘরা গ্রামের বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সাপের কামড়ে। শুধুমাত্র মানুষ নয় মৃত্যু হয়েছিল অনেক পশুরও। বিষয়টিকে কোওভাবেই প্রতিরোধ করতে পারছিলেন না গ্রামের বাসিন্দারা। এরপর সেই গ্রামেরই ব্যক্তি গুদর মণ্ডল স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। বলা হয়েছিল মনসা পুজো করতে আর কারও সাপের কামড়ে মৃত্যু হবে না। এরপর আত্রেয়ী নদীতে একদিন স্নান করতে যান তিনি। সেই সময় মা মনসার কাঠামো ভেসে যেতে দেখেন। গ্রামবাসীরা সেই কাঠাম তুলে নিয়ে এসে মন্দিরে স্থাপন করে মা মনসার পুজো শুরু করেন।
আরও পড়ুন- Durga Puja 2021: সর্বমঙ্গলা মায়ের ঘট আনার মাধ্যমেই শারদ উৎসবের সূচনা বর্ধমানে
প্রথমে শ্রাবণ মাসে এই পুজো করা হত। কিন্তু, গোটা গ্রামের কোথাও কোনও দুর্গাপুজো হত না। ফলে মনসা পুজোর সময় বদলান গ্রামের বাসিন্দারা। এরপর তা দুর্গাপুজোর সময় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকে শুরু হয় দুর্গার আসনে মা মনসার পুজো। এখনও সেই একই নিয়ম রীতিতেই এই পুজো করেন ফুলঘরা বারোয়ারি মনসা পুজো কমিটি। পুজোর কয়েকটা দিন চণ্ডী ও মনসা মঙ্গলের গান হয়।
এখানে মা মানসার এক পাশে থাকে দেবী লক্ষ্মী। অপর পাশে থাকে দেবী সরস্বতী। পুজোর চার দিন নিয়ম মেনে গ্রামের সকলে নিরামিষ খাবার খান। দেবী দুর্গার সব নিয়ম মেনেই ফুলঘরা গ্রামে মা মনসার পুজো হয়। বহিরাগত শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীরা গ্রামে নাটক থেকে যাত্রা গানের আয়োজন করেন। পুজোর কয়েকটা দিন ওই গ্রামে মেলা বসে। স্থানীয় ছেলে-মেয়েরাও বেশির ভাগ সময় গ্রামেই সময় কাটান।
আরও পড়ুন-কুলিক নদীতে ভাসে না বাংলাদেশের বজরা, আজও সাড়ম্বরে চলে রায়গঞ্জের দুর্গা পুজো
এবিষয়ে গুদর মণ্ডলের উত্তরসূরী সান্ত্বনা মণ্ডল বলেন, তাঁদের পূর্বসূরী গুদর মণ্ডল এই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা। তাঁদের জায়গাতেই পুজোটা হয়। তবে এখন বারোয়ারি হিসেবেই পুজোটা হয়। গুদর মণ্ডল বহু দিন আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করে ছিলেন। তারপর থেকে এই গ্রামে সাপের কামড়ে আর কারও মৃত্যু হয়নি। বংশ পরম্পরায় বাদিকর, পুরোহিত ও মৃৎশিল্পী কাজ করেন এখানে। এমনকী, পুজোর বায়নাও দিতে হয় না বা ডাকতেও হয় না। সময় মত সকলে চলে আসেন সবাই।