সংক্ষিপ্ত

ছোটবেলা থেকেই লাইন দিয়ে পুজো প্যান্ডেলে ঢোকার যে আনন্দ,  এইবার প্রতিমা দেখতে পাবো, এইবার পুলিশ ব্যারিকেড খুলবে ,এইবার ঢুকবো সেটা অন্যরকম নেশা বা ভালোবাসা ছিল অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের কাছে  । এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিফোনিক পুজোর আড্ডায় রুদ্রনীল ঘোষ 

ফোনে করতেই ওপার থেকে ভেসে এলো দুর্ধষ্য একটা কলার টিউন।  অরিজিৎ সিংয়ের " দিন ক্ষণ  মাপা আছে , বরাতে ছাপা আছে , তারারা হাওয়া বুঝে ,বয়ে যাবে ধারে কাছে " . নিঃসন্দেহে এই গানটি নস্টালজিক করে দেয় যেকোনো কলেজপড়ুয়া মন।যদিও আমি কলেজপড়ুয়া নোই তবুও গানটা শুনে  আমিও বেশ  নস্টালজিক হয়েই পড়েছিলাম   বেশ কিছু সেকেন্ডের জন্য । তারপর একটা সময়  ফিরতেই হলো  কাটখোট্টা বাস্তবে। কারণ ওপার থেকে যিনি ফোনটা  ধরলেন তিনি হলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। অভিনেতা একারণেই বললাম কারণ রাজনৈতিক রুদ্রনীল ঘোষের থেকেও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের কদর আমার কাছে বেশি  ।তার কারণও আছে অনেক। যেমন  তার বলা সংলাপ "সেটা বড়ো  কথা নয় "  একসময় আমিও ব্যবহার করেছি বহুবার , পরিস্থিতিবিশেষে ।   তিন ইয়ারি কথার সেই শ্মশানের সিনটিও মনে পরে বার বার যেটা একসময়  আমি বহুবার ইউটিউবে ব্যাক করে করে দেখেছি আর হেসেছি। 

সেদিন এতো কিছু বলার সময় সত্যিই ছিলোনা কারণ সেদিন  খানিক কাজের তাগিদেই ফোনে করেছিলাম তাকে । যদিও এসএমএস করে আগে থাকতেই তাকে  বলে রেখেছিলাম  আমার ফোন করার কারণটি।  তবুও ফোনটা  ধরার পর সংক্ষিপ্ত সৌজন্য বিনিময় করেই বললাম , " দাদা একটা ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য কথা হয়েছিল আপনার সঙ্গে  "। উনি বেশ সহাস্যেই বললেন " হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন "...উনি মনে রেখেছেন বিষয়টি এটা  ভেবে বেশ ভালোই লেগেছিলো সেদিন ,শুরু হলো টেলিফোনিক আলাপচারিতা। এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিফোনিক পুজোর আড্ডায় রুদ্রনীল ঘোষ 

 
এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় -পুজোর কটা দিন কি রাজনীতিকে ভুলে থাকা যায়?
রুদ্রনীল ঘোষ -দেখুন রাজনীতি আমার ছোটবেলা থেকেই করা। ইটা তো একটা বোধ বা ইচ্ছা। তো পুজোতে যদি কোনো মানুষ বাড়ি থেকে বেরোন তাহলে তিনি যেমন সম্পূর্ণ তার বাড়ির কথা ভুলে যান না। তার বংশমর্যাদা , পরিচয় ,শিক্ষাগত যোগ্যতা বা দায়িত্ব বোধ এটা যেমন তার মাথায় থাকে তেমনি আমিও তো মূলত শিল্পী আর আমিও  অনেকের মতোই রাজনীতিকে ভালোবাসে এমন একজন মানুষ ,তাই বলা যেতে পারে পার্টলি রাজনৈতিক একজন মানুষ। তাই মূলত দুটোকে নিয়েই আমাকে চলতে হয়। 


এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় - পুজোর সময় কখনও ঘুরতে গিয়েছেন
রুদ্রনীল ঘোষ -হ্যাঁ , ঘুরতে যাওয়া মানে আমাদের একটা পেশাগত সুবিধে রয়েছে। আমরা মানুষের ভালোবাসা সরাসরি পাই। তাই কোথাও আমাদের মুখের সাথেই আমাদের জীবিকাটা ঘোরে তাই ব্যক্তিগতভাবে কোনো সময় উপভোগ করাটা হয় না। ফলে অনেকক্ষেত্রেই নিজের যে ইচ্ছেটা আছে সেটাকে বিসর্জন দিয়ে মানুষের ইচ্ছে পূর্ণ করতেই বেশি ঘোরাঘুরি করতে হয়। আর আমরা যারা রাজনীতির সাথে যুক্ত তাদের কাছে পুজোটা অনেকটা  জনসংযোগের একটা সময়। তাই পুজোতে ডেফিনেটলি বেড়াতে যেতে ইচ্ছে তো  করে ইনফ্যাক্ট গেছিও আগে।  কিন্তু দেখুন পুজোর সময় তো অনেক সাংকৃতিক অনুষ্ঠান হয় সেখানে অনেকেই শিল্পীদের ডাকেন। তো পুজোর সময় সব শিল্পীরা যদি বেড়াতে চলে যায় তাহলে সাধারণ মানুষের মনোরঞ্জন করবেন করা ?তাই ইচ্ছে থাকলেও এই সময়টা বাংলা ছেড়েও বাইরে বেরিয়ে যাওয়া একটু দুস্কর হয়।  


 এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় -এমন একটা পুজো যেখানে নিশ্চিন্তে ভুরিভোজ আর ঘুম দিয়েই দিন কেটে গিয়েছে
রুদ্রনীল ঘোষ -দেখুন দায়িত্ব বোধ যতক্ষণ না বাড়ছে। বা মানুষ যতক্ষণ না দায়িত্ব দেওয়ার জন্য ভরসা করতে পারছেন ততক্ষন আপনি মুক্ত।কিন্তু তারপর পরিচিতি যখন বাড়ে। পরিচিতি তো আর নিজে নিজে বাড়তে পারে না ? সেটা মানুষই বাড়িয়ে তোলেন। তাই একটা সময় পর ব্যক্তিগত ইচ্ছে গুলো ওই মানুষের ইচ্ছের সাথে কোথাও মিলিয়ে দিতে হয়।  তাই আমার্ যদি ইচ্ছে করে যে কোনো পছন্দের জায়গায় কব্জি ডুবিয়ে খাবো সেখানে আশপাশের টেবিলে প্রচুর মানুষ যারা নিজেরাও ওখানে পুজোর আনন্দ নিতে গেছেন তারা আসেন কথা বলতে। নিঃসন্দেহে তাদের এই ভালোবাসাতেই আমরা বেঁচে আছি কিন্তু কোথাও সেখানে খাবার আনন্দ থেকে একটু হলেও বঞ্চিত হতে হয়। আবার অন্যদিকে থেকে দেখতে গেলে এই মানুষের ভালোবাসাটাকে সম্মান জানানোটাও কোথাও একটা অদ্ভুত মানবিক দায়িত্বের মধ্যে পরে। তাই ইচ্ছেমতো পুজো কাটানোর সময় টা  কোথাও কলেজ লাইফ পর্যন্তই হয়েছে। 

এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় -শিল্পী রুদ্রনীল বা রাজনীতির রুদ্রনীল দুটোকেই যদি বাদ দিই তাহলে ব্যক্তিগতভাবে  মানুষ রুদ্রনীল কিভাবে পুজো কাটাতে পছন্দ করবেন ?
রুদ্রনীল ঘোষ -আমি মানুষের মধ্যেই কোথাও থাকতাম।  ব্যক্তিগত বলতে শুধু আমার ফ্লাট, আমার গাড়ি , আমার বাড়ি এই শব্দগুলো কখনোই আমাকে কমপ্লিট শান্তি দেয় না। বরং খুব ইরিটেট করে। ছোটবেলা থেকে তখনই আমি ভালো থাকতাম যখন দেখতাম আমার সঙ্গে আমার বন্ধুরাও ভালো আছে। ইটা ছোটোবেলাকারই হ্যাবিট। সেটা যদি আমি শিল্পী নাও হতাম বা রাজনীতির সাথে আমার যোগাযোগ নাও ঘটতো তাও অন্য কোনো উপায় ঠিক বেরিয়ে আস্ত মানুষের মাঝে থাকার।  যেহেতু সেই লাইফ তা আমি লিড করিনি তাই ঐভাবে বলা মুশকিল। তবে মানুষের সংসঙ্গেই কাটাতাম। প্রচুর অচেনাকে মানুষ আমার নিজের মানুষ বলে আমার বিশ্বাস। 


এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় -মণ্ডপে মণ্ডপে যান প্রতিমা দেখতে
রুদ্রনীল ঘোষ -দেখুন, ছোটবেলা থেকেই লাইন দিয়ে পুজো প্যান্ডেলে ঢোকার যে আনন্দটা। এইবার প্রতিমা দেখতে পাবো, এইবার পুলিশ ব্যারিকেড খুলবে ,এইবার ঢুকবো সেটা অন্যরকম নেশা বা ভালোবাসা ছিল। ইটা যখন বাবা মার্ হাত ছেড়ে বন্ধুদের হাতে হাত দিয়ে যেতাম তখনও ছিল।  তারপর যখনই পেশাগতভাবে অভিনয়ের সঙ্গে জড়ালাম এবং মানুষ আমার কাজ পছন্দ করলেন তখন অদ্ভুত রকম ভাবে দেখলাম যারা যারা পুজো করছে তারাই লাইন থেকে সরিয়ে যাতে আমরা যাতে যত্ন করে পুজো দেখে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যেতে পারি তার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছেন। বাট  হ্যাঁ ডেফিনেটলি ওই লাইন দিয়ে পুজো দেখা , আগের যে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে তার জুতো মাড়িয়ে খুলে দেওয়া ,এগরোল খেতে গিয়ে বেশি সস দিয়ে  দিয়েছে বলে ঝগড়া করা , রাট ১২ তার সময় ঠান্ডা চাউ খাওয়া এগুলোকে ডেফিনেটলি মিস করি। 

এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় - পুজোর দিনগুলো কোন রুটিনে দিনটা শুরু করেন
রুদ্রনীল ঘোষ -পুজোয় বন্ধুদের সাথে ডেফিনেটলি আড্ডা মারার প্ল্যান তো থাকেই।  সেটা এবারেও হবে।  তার মাঝেই যেটা হবে যে এবার একটু রেস্ট নেবো। ইচ্ছামতো কয়েকটা প্যান্ডেলে যাবো ঠাকুর দেখবো।  তারপর ওই বৈঠকি আড্ডা যেখানে হয় সেটা  আমার বাড়িতে হোক বা অন্যান্য বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে সেখানে একটু যাবো। বিশ্রাম নেবারও প্ল্যান থাকে কিন্তু সেটা খুব একটা হয়ে ওঠে না। যত মানুষ বড়ো হয় তার ফোন ইনডেক্সেও লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে, এদের অনুরোধও বাড়তে থাকে, ফলে নিজের জন্য সময় খুব কমতে থাকে। 

এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় -মানে কি সেরকম কোনো বাঁধা ধরা রুটিন থাকে না ?
রুদ্রনীল ঘোষ -রুটিন থাকে কিন্তু সেই রুটিনের সঙ্গে সঙ্গে এমন বেশ কিছু পার্শবর্তী রুটিন জড়ো হয়ে যায় ,যে রুটিন গুলো আর আমার থাকে না সেটা অন্যদের বানানো বা তৈরী করা হয়ে যায়। 


এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় - এমন কোনও পুজো জাস্ট রাজনৈতিক কারণে অন্যদিকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে
রুদ্রনীল ঘোষ না পুজোর সময় তো কেউ আর মিটিং মিছিল করেন না বা মঞ্চ বেঁধে স্লোগান দেন না তাই সেই অর্থে রাজনৈতিক কারণে ব্যস্ত থাকা হয় না। কিন্তু পুজোটা যেহেতু সবার তাই  পুজোতে যেকোনো জীবিকার মানুষই জনসংযোগ করেন সেটা রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা মানুষই বলুন বা বিনোদন জগতের মানুষই বলুন। 

এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় -এবারের পুজো প্ল্যান কেমন
রুদ্রনীল ঘোষ -পুজোতে স্পেশাল প্ল্যান বলতে যে যে বন্ধুদের বাড়িতে দুগ্রাপুজো হয় সেই পুজোগুলো দেখবার প্ল্যান আছে। কিছু বন্ধুবান্ধব আছেন যারা পুজোর উদ্যোক্তা তাদের মণ্ডপে যাবার প্ল্যান আছে। কিন্তু এই যে আধঘন্টা ঘুরে যা বলছেন সে ঘুরে যাওয়ায় যায় কিন্তু পুজোর সময় কলকাতার রাস্তাঘাটে যা জ্যাম হয়। ওই যে যেতে এবং আস্তে দুই দুই চার ঘন্টা চলে যায় তখন আর বাকি জায়গাগুলোয় যাওয়া হয় না।  তখন বাকিরা ভুল বোঝেন দুঃখ পান 

এশিয়ানেটের প্রতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় - এক কথায় যদি জানতে চাই পুজো মানে আপনার জীবনে কি
রুদ্রনীল ঘোষ -পুজো মানে আমার কাছে কোনো শক্তির কাছে মনোসংযোগ বাড়িয়ে নিজের ও অন্যের ভালো চাওয়া। এবং নিজের ও অন্যের মধ্যে যে অশুভ দিক গুলো আছে সেটাকে  বিসর্জন দেওয়া। আমরা তো বস্তুজগতের মানুষ সেই বস্তুজগতের নানারকম অপ্রয়োজনীয় লোভ যেটা সেটাকে ত্যাগ করতে পারা । আর প্রাপ্য যেটা সেই প্রাপ্তির বাইরে গিয়ে যদি কিছু চাই তাহলে সেই চাওয়ার  মধ্যে অন্যের অনেক ক্ষতি লুকিয়ে থাকে যেন সেগুলো থেকে বিরত থাকা যায়। 

আরও পড়ুন ৩ দিনে ৫০টা ঠাকুর উদ্বোধনের পরিকল্পনা, পুজো এভাবেই কাটাচ্ছেন বিধায়ক দেবাশীষ কুমার

আরও পড়ুন 'পুজোর আড্ডা ,পুজোর সংখ্যাতেই দিন কাটতো আমার' - পুজোর কথায় কুণাল ঘোষ

আরও পড়ুন পুজোতে কলকাতায় থাকলেও ,এবার কিন্তু মুক্তেশ্বর ,নৈনিতাল ,আলমোড়ার টানেই কাটবে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের পুজো

আরও পড়ুন পুজোর ভিড়ে নেই দিলীপ ঘোষ, চললেন নৈনিতাল, পুজোর আড্ডায় অকপট বিজেপি নেতা

আরও পড়ুন ৭৭ বছরে কিসের আবার রাজনীতি ? পুজো প্ল্যানে ট্রাভেলে রয়েছে গোপালপুর

আরও পড়ুন উমার মতোই পুজোর একদিন বাপের বাড়িতে ফেরেন মালা , বললেন “রাজনীতিবিদদের বন্ধু হয় না”

আরও পড়ুন পুজো মানেই বন্ধুদের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাওয়া ,আর মাঝে মাঝে মণ্ডপে গোলচক্কর -আর কি বলছেন সুজন চক্রবর্তী