সংক্ষিপ্ত

উমার মতোই পুজোর একদিন বাপের বাড়িতে ফেরেন মালা রায় । তমলুকে নিজের বাপের বাড়ির ৪০০ বছরের পুজোতে প্রতিবারই  যান তিনি। দূর্গা পুজো নিয়ে অকপট আলাপচারিতায় এশিয়ানেটের প্রিতিনিধি ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার বিধায়ক মালা রায়।

খুব ভয়ে ভয়েই ফোন করেছিলাম তাকে।  মোবাইলে ১০টা  নম্বর টাইপ করে বসে আছি।  ডায়ালটা টিপবো কিনা এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের টানাপোড়েনে কখন যে হাত লেগে কল তা চলে গেছে বুঝতেই  পারিনি। অগত্যা আর  কোনো উপায় না পেয়ে  ফোনটা  ধরলাম কানে।  রিংটা চারবার বাজার পরই ওপাশ থেকে গম্ভীর অথচ কমনীয়  সেই পরিচিত কণ্ঠস্বর " হ্যালো ".. পালাবার আর  কোনো পথ নেই বুঝতে পেলে প্রথমে পরিচয় দিলাম নিজের তারপর দুঃসাহস দেখিয়েই বললাম, " দিদি একটা টেলিফোনিক ইন্টারভিউ নিতে চাই আপনার" আমার কথা খুব মন দিয়ে শুনলেন তিনি তারপর সেই সাবলীল ভঙ্গিতে বললেন "কাল সকালে ফোন করো , ইন্টারভিউ দেব।" 

সকালে ফোন করলে তিনি ফোনটা ধরে বললেন " ১২ নাগাদ ফোন কর " . এরপর প্রায় ৫ থেকে ৬ বার কল করেছি কিন্তু তিনি আর  ধরেননি।  তার এক ছায়াসঙ্গী ফোনটি ধরে বললেন " দিদি একটু ব্যস্ত আছে একটু পরে কল করুন " . ৬ বার এমন শোনার পর ভেবেছিলাম উনি হয়তো আর ইন্টারভিউ দেবেন না।  যতনা হতাশ হয়েছিলাম তার চেয়ে বেশি পেয়েছিলম দুঃখ।  যাই হোক উনি ব্যস্ত মানুষ হতেই পারে কাজে আটকে গেছেন -এই বলে চাপা দেবার চেষ্টা করলাম অভিমানকে। কেটে গেছে আরো বেশ কয়েক ঘন্টা।  ঘড়িতে তখন ৪ তে বেজে ৫। দেখলাম ফোন টা  বেজে উঠলো ফোনের উপরে লেখা " সাউথ কলকাতা এমপি " . হ্যাঁ আমার ফোনে তার নম্বরটা এনামেই সেভ আছে।  কারণ তিনি দক্ষিণ কলকাতার ৭ বারের বিধায়ক এবং কলকাতার মানুষের খুব কাছের একজন জনপ্রতিনিধি মালা রায়। 

কর্মসূত্রে এর আগেও তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম কলকাতা পৌরসভা ভোটের আগে। সেটাই ছিল ওনার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ।তার সুউচ্চ ব্যক্তিত্বের যে কাহিনী লোকমুখে প্রচলিত তা প্রথম সাক্ষাতেই আন্দাজ করেছিলাম খানিক। কিন্তু এবারে  টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারের এই অন্যায় আবদার যে উনি মেনে নেবেন সেটা ভাবিনি কোনোদিন। ইন্টারভিউয়ের ওনার রাজি হওয়াটাই আমার কাছে বেশ আনন্দের ব্যাপার ছিল। কিন্তু উনি নিজে ফোন করেছেন  আমায় এইবিষয়টা অনেকটা হাতে চাদ পাওয়ার মতো। তাই একটুও দেরি না করে ফোনটা তাড়াতাড়ি ধরলাম। ওপাশ মালা রায় বললেন " হ্যাঁ বোলো " ভাস্বতী মুখোপাধ্যায়ের সাথে নির্ভেজাল টেলিফোনিক পুজোর আড্ডায় দক্ষিণ কলকাতার বিধায়ক মালা রায় 

১। পুজোর কটা দিন কি রাজনীতিকে ভুলে থাকা যায়?
 পুরোটা বলবো না কারণ এলাকার নজোরদারিতে ভীষণভাবে প্রাওরিটি দিতে হয়। অনেকগুলোই পুজো হয় সারা দক্ষিন  কলকাতার বুকে। ফলে  এমনি উদ্বোধন পর্বটা শেষ হবার পর  পুজোর পর্বটা শুরু হয়। তারপরে "ল এন্ড অর্ডার" ঠিক মতো থাকছে কিনা ,মোটামুটিভাবে এলাকার পরিবেশ ঠিক আছে কিনা সেটা দেখতে হয়।  এটা যদি খানিকটা রাজনীতির পার্ট হয়ে থাকে তবে সেইভাবেই রাজনীতিটা চলে।  তবে সারাবছর যে কাটখোট্টা রাজনীতিটা চলে সেই জিনিসটা  হয়তো এভোইড করা যায় পুজোতে। কারণ ফেস্টিভ মুডে  সব মানুষই থাকেন ফলে রাজনীতির কথা বলতে চাইলেও তারা শোনেন না তাই মিছিল মিটিং খুব একটা সেই সময় হয় না আর রাজনৈতিক কচকচানির  কথা , সবাই উৎসবমুখর হয়ে থাকে তো , তাই তখন কেউই ঠিক শুনতে চান না।  সেই অর্থে বলতে গেলে হয়তো ডাইরেক্ট রাজনীতিতে করি না কিন্তু পরিবেশ যাতে সুস্থির থাকে সেগুলো একটু লক্ষ্য রাখতে হয়।  জনপ্রতিনিধি হিসাবে বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে সেটা দেখতে হয়।  তবে রাজনৈতিক হানাহানিও যাতে না হয় উৎসবের দিন গুলোতে সেটাও দেখতে হয়। 




২। পুজোর সময় কখনও ঘুরতে গিয়েছেন
বেড়াতে যেতে পারি না কারণ হচ্ছে যে আমি এতগুলো পুজোর সাথে যুক্ত আছি যে পুজো এখানেই কেটে যায়। তাছাড়া আমার নিজের বাড়ির পুজো আছে তমলুকের বাড়িতে।  আমার বাপের বাড়িতে।  সেখানে আমাদের ৪০০ বছরেরও পুরোনো পুজো হয়।  এটাই আমাদের আদি পুজো। খুব বড়ো প্রতিমা গড়েই পুজো হয়।  সেকারণে ওই পুজোতে আমাদের যেতে হয় ওই একটা দুটো দিনের জন্যই যাই।  আবার এদিকে কলকাতার নজরদারিও করতে হয় যাতে সেখানেও কোনো অসুবিধে না থাকে। 

৩।  প্রত্যেক বছরই কি নিয়ম করে যান ?
প্রত্যেক বছরই চেষ্টা করি যাওয়ার। মোটামোটি এখনো ছেদ পড়েনি খুব একটা।  যাই প্রত্যেক বছরই  দু -একদিন থেকে আবার চলে আসি কারণ কলকাতার দিকেও নজর রাখতে হয়। যদিও খুব একটা দূরে নয়।  দেড় ঘন্টার রাস্তা। কিন্তু তাও  কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসতে  হয়। এই আর কি। 

৪।  পুজোতেও কি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঠাসা থাকে আপনার ?
উত্তর - না না পুজোর কোটা দিন অতটা থাকে না। আসলে সবাই উৎসবমুখর থাকে তো,  ফলে  রাজনীতির কচকচানি শুনতে চায় না কেউ।  এমনিতেও রাজনীতিকে কেউ খুব একটা ভালো চোখে দেখে বলে মনে হয় না। তাই মিটিং মিছিলের তো প্রশ্নই ওঠে না। আর কোনো সভা সমিতি সেটারও দরকার পরে না পুজোয় । সবাই পুজোতে ব্যস্ত থাকে।  প্রত্যেকের বাড়িতেই আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব আসে। আর আমরা রাজনৈতিক লোকরা তো আর অন্য জগতের মানুষ নোই আমরা তো এই জগতেরই মানুষ ফলে আমরা এই কটা দিন সাধারণ মানুষের মতোই থাকবার চেষ্টা করি।  পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া , দুপুরবেলা ভোগ খাওয়া তো থাকেই।  এছাড়াও চেষ্টা করি জনসংযোগ করতে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে পুজোর দিনে এই কাজটাও জরুরি হয়ে থাকে আমাদের জন্য। একটু জাস্ট গেলাম কোনো পুজোতে তাতেই  সবাই খুব খুশি হলো। ব্যাস এটাই।  




৩। এমন একটা পুজো যেখানে নিশ্চিন্তে ভুরিভোজ আর ঘুম দিয়েই দিন কেটে গিয়েছে
না না প্রত্যেক বছর পুজোতেই আমরা বেশ ভালোই কাটাই। কোনো অভিযোগ সেভাবে নেই। হ্যাঁ , গত দু বছরে কোভিডের জন্য একটু ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।  . কোভিডের পেসেন্ট ভর্তি করা , তাদের সেফ হোম পাঠানো বা এম্বুলেন্স বা অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা গত দুটো বছর আমাদের খুব একটা ভালো কাটেনি।  ২০২০ এবং ২০২১।তবে  এবছর তুলনামূলকভাবে অনেক  নিশ্চিন্তে মানুষ পুজোর আনন্দ উপভোগ করবে এটা  আমার বিশ্বাস।  আর উৎসব তো প্রায় শুরুই হয়ে গেছে। 


৪। মণ্ডপে মণ্ডপে যান প্রতিমা দেখতে
না , আসলে সব পুজো তো আর উদ্বোধন করতে ডাকে না। তো যাদের পুজো উদ্বোধন করতে যাই না, তাদের ক্ষেত্রে আমরা ভিসিট রাখি। অর্থাৎ উদ্বোধনে গেলাম না কিন্তু ভিসিট করতে গেলাম। বারোয়ারী যে পুজো কমিটি গুলো আছে তারা আমাদের ইনভাইট করে সেখানে যাই।এরকম সারাবছরই করি। সারাবছরই আজ লক্ষী কাল সরস্বতী ,কার্তিক গণেশ সব পুজোই তো হচ্ছে।  এবং সব বড়ো কোলেবরেই হয়।  বিশ্বকর্মাও খুব বড়ো করে হয়। জগদ্ধাত্রীও  হয়।  আর কালী পুজো তো হয়ই সুতরাং আমাদের ১২ মাসে তো ১৩ পার্বন  থাকেই। সুতরাং এই ১২ মাসে ১৩ পার্বনে মানুষের সাথে সংযোগ রাখা তাদের   সুবিধা অসুবিধা দেখা , চারিদিক পরিষ্কার রাখা , কলকাতা শহরের সব লাইট যাতে জ্বলে সেগুলো দেখা সবই চলে। 
 

৫। পুজোর দিনগুলো কোন রুটিনে দিনটা শুরু করেন
যেরকম চিরাচরিত তেমনি চলে।  যেমন ধরুন যখন পুষ্পাঞ্জলি থাকে তখন সকালবেলা উঠে তাড়াতাড়ি স্নান টান সেরে খালি পেটে পুস্পাঞ্জলির ব্যবস্থা করা , আমরা তো এমনি করে থাকি সেকারণে এই সময়গুলো আমাদের একটু ব্যস্ত থাকতেই হয়।  তিনটে দিন একটু ব্যস্ত থাকতেই হয় সপ্তমী , অষ্টমী , নবমী।  পুজোর ছুটি পড়ে  যাবে মহালয়া থেকে তারপর অফিসগুলো খুলতে খুলতে আবার ৫ তারিখ হয়ে যাবে।  তারপর দূর্গা পুজো হয়ে গেলেই আবার লক্ষ্মী পুজোর  আয়োজন।  আমাদের বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো হয়।  ফলে আমাকেও একটু ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়।  এইজন্য লক্ষী পুজো অব্দি আমাদের কোনো ফুসরত মেলে না অন্য কারুর বাড়িতে যাবার বা অন্য কোথাও বেড়াতে যাবার। 


৬। এমন কোনও পুজো জাস্ট রাজনৈতিক কারণে অন্যদিকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে
না সাধারণত পুজোর সময় রাজনীতির অতো  বেশি কচকচানি থাকে না।  ফলে আমরা রাজনীতির সাথে একদম নিজেদের জড়িয়ে ফেলি না।  উৎসবটা  আলাদা আর রাজনীতিটা  আলাদা।  সেকারণে এই উৎসবটাও যাতে রাজনীতির কারণে বিঘ্নিত না হয় সেটাও লক্ষ্য রাখা। আবার রাজনীতিটাও  যাতে বেশি উৎসবের ভিড়ে হারিয়ে না যায় সেটা দেখা সবই করতে হয় আমাদের। 

৭। পুজোর দিনে পুরনো দিনের বন্ধুদের সঙ্গে কি আড্ডাটা আজও হয়
একটা বয়সের পর তো বন্ধুত্ব সেভাবে আর নতুন করে তৈরী হয় না পুরোনো যারা যারা যোগাযোগ রাখে ততাদের সাথে কথা হয়।  আর তাছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ঐভাবে ঠিক বন্ধু হয় না।  সব মানুষই তাদের পরিচিত হয় ফলে তাই পরিচিতরা সবসময় যোগাযোগ রাখে।  কোনো বিপদে হোক আপদে হোক ভালো হোক বা মন্দ হোক সবেতেই থাকে। তাদের প্রতি আমাদের কিছু কর্তব্য থাকে দায়িত্ব থাকে সেটাই রেসিপ্রোকেট করতে তারা। 





৮। এবারের পুজো প্ল্যান কেমন
এবছর যেরকম চিরাচরিত সেরকমই কাটাবো।  বাড়ির পুজোয় যাবো। পাড়ার পুজোয় আনন্দ গুলো ভাগ করে নেবো  এই আর কি।  সেরকম আলাদা করে লুচি মন্ডা  খাওয়ার সেরকম মানসিকতা  ঐভাবে আর হয় না ঠিক। তার অন্যান্য সময়ে ধরুন আমরা এতটাই ব্যস্ত থাকি  যে  পরিবারের লোকগুলোকে সময় দিতে পারি না সেই কারণে তারাও সারাবছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। 

৯। এক কথায় যদি জানতে চাই পুজো মানে আপনার জীবনে কি

দেখুন ,পুজোর আলাদা করে সেভাবেই  কোনো মানে নেই। পুজো তো পুজোর মতো। পুজোর উপকরণ সাজিয়ে নির্বিঘ্নে পুজো করাটাই পুজো।  পুজোর উপকরণ যাতে ঠিক ঠাক  থাকে , পুজোর যা যা লাগে সেগুলো দেখা বা আমার বাড়িতেও যে পুজো হয় সেটা যাতে নিখুঁত ভাবে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা এটাই পুজো । তবে পুজোতে চেষ্টা করি অন্য কাজে ব্যস্ত কম থাকা। পরিবারও চায় যাতে আমরা তাদের কিছু সময় দিতে পারি। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা সকলকে নিয়ে পুজো আনন্দে কাটাই। 


আরও পড়ুন-
অনলাইন বেটিং-এর বিজ্ঞাপন আটকাতে এবার সীমা টানল কেন্দ্র, কড়া বার্তা খবরের ওয়েবসাইট, চ্যানেল ও ওটিটি সাইটগুলিকে
ভারতীয় বেটিং কোম্পানির টাকায় চলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড, কতটা সত্যি এই বিস্ফোরক তথ্য
লাইট অ্যান্ড সাউন্ড বন্ধ করা হল কল্যাণী আইটিআই মোড় দুর্গোৎসবের