সংক্ষিপ্ত

আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করছি, ‘ওরা দু’জন যেন এক সঙ্গে হাসতে পারে, বাঁচতে পারে। নিশ্চয়ই ঈশ্বর এত নিষ্ঠুর হবে না। এত মানুষের প্রার্থনা বৃথা যাবে না।’

রবিবাসরীয় সন্ধে। হঠাৎই দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা গাজী আব্দুন নূরের ফোন। কেমন আছে ঐন্দ্রিলা শর্মা? একটু ভাল তো? সাড় ফিরল, চোখ মেলেছে মেয়েটা? গলায় অন্যদের মতোই উৎকুণ্ঠা। এই একটি ফোন বুঝিয়ে দিল, স্রেফ লড়তে লড়তে আর ভালবাসতে, বাসতে ‘জিয়ন কাঠি’র নায়িকা কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ও পার বাংলাতেও সমান আদরের। এ পার বাংলার মতোই জনপ্রিয়। দুই দেশের একটাই দোয়া, আগের দুবারের মতোই যেন জিতে ফেরেন ঐন্দ্রিলা।

ফোন আসার আগের দিনই নূর ওরফে ছোট পর্দার ‘রাজচন্দ্র দাস’ ফেসবুকে সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার একটি ছবি দিয়েছেন। সেখানে ক্যাপশন, ‘দুটোই মিলে একটা ভালবাসা, এই ভালবাসা ভাল থাকুক ভালবাসতে’। টানা অনেক দিন জি বাংলার ধারাবাহিক ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’র দৌলতে এ পার বাংলায় ছিলেন। আলাপ হয়েছিল ঐন্দ্রিলার সঙ্গে? প্রশ্ন ছিল অভিনেতার কাছে। নূর সাফ বললেন, ‘‘ওই দু’জন আমার খুবই পছন্দের মানুষ। কারণ সত্যি কথা বলতে, এই মুহূর্তে ভালবাসার প্রতি শ্রদ্ধা নেই বললেই চলে। সব কিছুই ‘ফেক’। কিন্তু ওদের দু’জনকে দেখলে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা কাজ করে।’’ তাই কলকাতায় এখন যতটা সংযোগ রয়েছে তাঁর, প্রত্যেকের থেকে খোঁজ নিচ্ছেন ঐন্দ্রিলা সম্বন্ধে।

 

 

একই রকম আছেন অভিনেত্রী-- খবর শুনে নূরের বক্তব্য, ‘ওরা দু’জনই ভালো অভিনেতা। কিন্তু তার থেকে বেশি সবাই ভালবাসে এবং শ্রদ্ধা করে ওদের একে অপরের প্রতি ভালবাসা দেখে। এখন তো সম্পর্কগুলো ছোট্ট ছোট্ট কারণ দেখিয়ে শেষ হয়ে যায়! কিন্তু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য একমাত্র কারণ হচ্ছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস এবং ভালবাসা। ওরা দু’জনেই আমার ফেসবুকে আছে। কিন্তু ইনবক্সে কখনও কারও সঙ্গে কথা হয়নি। দেখা হয়েছে কিনা মনে নেই। কিন্তু ওদের এক সঙ্গে দেখলে মন ভাল হয়ে যায়। এ ভাবে এক জন অন্য জনকে আগলে রাখতে ক’জন পারে?’

ঐন্দ্রিলা ভেন্টিলেশনে। বিছানায় শুয়ে অচেতন অবস্থাতেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। ছোট পর্দার ‘বামদেব’কে কেউ সেখান থেকে এক চুল নড়াতে পারেনি! সব্যসাচীর বন্ধু এবং ব্যবসার অংশীদার সৌরভ দাস এশিয়ানেট নিউজ বাংলাকে জানিয়েছেন, কাচের ঘরের বাইরে দেখে ঐন্দ্রিলাকে দেখার অনুমতি কেবল সব্যসাচী, সৌরভ আর অভিনেত্রীর পরিবারের এক জনের। সবাই ঘুরে ফিরে এসে দাঁড়াচ্ছেন। সব্য সেখানেই ঠায়ে বসে। এ কথায় নতুন করে আবেগাচ্ছন্ন নূর। তাঁর মতে, ‘যান্ত্রিক জীবনে সব কিছুরই ফুরিয়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় থাকে। এমনকী, ভালবাসাও এখন ‘এক্সপায়ার ডেট’ এসেছে। সেখানে ওরা ব্যতিক্রম। সব্যসাচীর স্ট্যাটাস দেখলে শ্রদ্ধা আসে। কতটা বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা থাকলে একজন ভালবাসার মানুষকে এই ভাবে আগলে রাখে সারা ক্ষণ! চার পাশের ঠুনকো ভালবাসাগুলো দেখতে দেখতে ভালবাসার প্রতি যে অশ্রদ্ধা এবং অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তার উল্টো গতিপথ ওরা। হয়তো ভালবাসার মাপকাঠি! আসলে ওরা ভালোবাসার উদাহরণ, উদযাপন।’

 

 

এই জায়গা থেকেই বাকিদের মতো নূরেরও বিশ্বাস, ভালবাসার মৃত্যু হয় না। সব্যসাচীর ভালবাসা হারতে পারে না। এই জোরেই ঐন্দ্রিলা আবারও চোখ মেলবে, ‘আমি ওদের দু’জনের ছবিতে সব সময় মন্তব্য করতাম, ‘আমি এ ভালবাসার নাম দিলাম ভালতে বাস করা’! ঐন্দ্রিলার খবরটা শোনার পর থেকে মনটা খারাপ লাগছিল। আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করছি, ওরা দু’জন যেন এক সঙ্গে হাসতে পারে, বাঁচতে পারে। ঐন্দ্রিলা সুস্থ হলে ওদের আমি আমন্ত্রণ জানাব। বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দেখাব। নিশ্চয়ই ঈশ্বর এত নিষ্ঠুর হবে না। এত মানুষের প্রার্থনা বৃথা যাবে না।’