সংক্ষিপ্ত

জিতের এই ছক ভাঙা প্রয়াসকে কুর্নিশ করেছে ‘বক্স অফিস বেঙ্গল’। বার্তা দিয়েছে, ‘৪৫ দিন ধরে বাংলা ছবির শ্যুটিং করে বুঝিয়ে দিলে, বুকের পাটা না থাকলে সম্ভব নয় ‘বস’!’

বুধবার ভোর ৫.১৮ মিনিট। কলকাতা গভীর ঘুমে। কেবল অল্প অল্প করে জেগে উঠছে নিউ মার্কেট। নিওন বাতিগুলো একটু যেন ক্লান্ত। রাতের শহরে মায়াবি আলো ছড়িয়ে ওদের চোখেও হাল্কা ঝিমুনি। শুনশান রাস্তা। দুধের বড় বড় ক্যান ঝুলিয়ে সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিয়ে রওনা দিচ্ছেন দুধওয়ালারা! মাথায় গামছা বাঁধা। ঘুম নেই জিৎ মদনানি আর সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের চোখেও! ওই ভোরে তাঁরা রংমিলন্তি। খবর, পাপারাৎজিদের চোখ এড়িয়ে নাকি প্রেম করতে বেরিয়েছিলেন!

 

সুস্মিতা সেজেছিলেন নীলচে-স্লেট সিফন শাড়িতে। কোমর ছোঁয়া চুলে হাল্কা ঢেউ। শাড়ির পাড়ে বড় বড় লাল বসরাই গোলাপ। ওই রঙের ব্লেজার আর ট্রাউজারে ধবধবে, সুপুরুষ জিৎ। পাশেই দুধ সাদা অল্টো। দূরে একটা-দুটো দোকানের ঝাঁপ খোলা। এত ভোরে ধর্মতলা চত্বরে কী কারণে যুগলে? কৌতূহল মেটাতে এশিয়ানেট নিউজ বাংলা যোগাযোগ করেছিল জিৎ-এর সহকারীর সঙ্গে। জিৎস ফিল্ম ওয়র্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রেমের কারণে অত ভোরে তাঁরা পথে নেমেছেন না অন্য কারণে, বলা বারণ! তবে অনুরাগীদের শিরদাঁড়ায় টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়ার মতোই উপকরণ নিয়ে বড় পর্দায় আসছেন দু’জনে। তাঁদের আগামী ছবি ‘চেঙ্গিজ’-এ। বুধবার ভোর রাতে তারই শ্যুট শেষ হল। শেষ দিনে বিশেষ সাজে সেজে জিৎ-সুস্মিতা শট দিয়েছেন।

এখানেও ছক ভেঙেছেন প্রযোজক জিৎ। কী ভাবে? কিছু দিন আগেই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আক্ষেপ করছিলেন, কন্নড়, গুজরাতি ছবিরও বাজেট বেড়ে গিয়েছে। পোড়া কপাল বাংলা ছবির! শ্যুটিংয়ের দিন কমতে কমতে ১৫-১৮। বাজেটেও সমান তালে কাটতি! এই জায়গা থেকেই প্রথম স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটলেন জিৎ। তাঁর আগামি ছবি ‘চেঙ্গিজ’-এর শ্যুট শেষ করতে খরচ করে ফেললেন সাত মাস! যা আগে আকছার ঘটত। বাজেটও তা হলে বাড়ল? প্রশ্ন ছিল জিৎ-এর প্রযোজনা সংস্থার কাছে। তাদের জবাব, জিৎ কখনও ছবি বানাতে কার্পণ্য করেন না। সেটা আগের ছবি ‘রাবণ’ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন। কখনও সমস্ত অভিনেতার তারিখ পাওয়া যায়নি। কখনও দুর্গাপুজো উপলক্ষে রাস্তা বন্ধ। তার উপরে পুজোর ছুটি। সব মিলিয়ে নানা কারণে সময় বেশি লেগেছে। তবে তার জন্য বাড়তি কত খরচ হয়েছে বা মোট বাজেট কত, সেটা এক্ষুণি প্রকাশ্যে আনতে রাজি নয় সংস্থা। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, সবে শ্যুট শেষ। প্রচারের এখনও অনেক বাকি। শুরুতে সব বলে দিলে হবে?

এই প্রথম তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করলেন সুস্মিতা। এই প্রথম জিতের সঙ্গে জুটি। কাজ করে যে ভীষণ তৃপ্ত, সে কথা স্পষ্ট শেষ শ্যুটের পরেও চেহারার জৌলুসে। না, সুস্মিতা একটুও ক্লান্ত নন। উল্টে জিতের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন। গালে টোল ফেলা চেনা হাসি হাসতে হাসতে জানিয়েছেন, তিনি ভীষণ খুশি। প্রচণ্ড উত্তেজিত। একই সঙ্গে হাল্কা মনখারাপও। আর নায়ককে কাছে পাবেন না! সুস্মিতার ছেলেমানুষী উপভোগ করেছেন তাঁর পর্দার নায়ক। নায়িকার হাসি ছড়িয়ে গিয়েছে তাঁর চোখেমুখেও। হাসতে হাসতেই জিতের দাবি, ‘‘বহু যুগ পরে সাত মাস ধরে বাংলা ছবির শ্যুট চলল! সবার কৌতূহল ছিল, কবে শেষ হবে কাজ? অবশেষে আমরা স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতরে পাড়ে পৌঁছতে পারলাম।’’

একই সঙ্গে জিৎ কথা দিয়েছেন, ‘চেঙ্গিজ’ নিয়ে যাবতীয় কৌতূহল তিনি এবং তাঁর প্রযোজনা সংস্থা মেটাবেন সামাজিক পাতায়। ছবির খুঁটিনাটি, মুক্তির দিন, ছবি তৈরির নেপথ্য কাহিনী— সব থাকবে সেখানে। জিৎ-সুস্মিতা সে দিনের মতো থামলেও তখনও চনমনে ‘টিম চেঙ্গিজ’। অভিনেতা নয়, প্রযোজক জিৎকে রাজি করিয়ে নিউ মার্কেটের ফাঁকা রাস্তাতেই বসে আড্ডা। এক হয়ে সেই মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করতেও ভোলেননি তাঁরা! আগামী ছবিতে ন’য়ের দশকের কলকাতা উঠে আসবে পটভূমিকায়। সেই সময়কার এক বা একাধিক বিশেষ ঘটনা জায়গা করে নিতে চলেছে ছবিতে। পরিচালনায় রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রযোজনায় জিৎ স্বয়ং। কলকাতার ছবি। তাই বেশির ভাগ শ্যুট কলকাতাজুড়েই। ছবিতে নায়কের লুক অনেকটাই অন্ধকার দুনিয়ার ডনের মতো। চোখে রোদচশমা। প্রথম ‘লুক’ বলছে, স্যুটেড বুটেড চেঙ্গিজ বেশ শৌখিন! বাঁ হাতে জ্বলন্ত চুরুট। লম্বা জুলফি। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি-গোঁফ। গদিতে মোড়া চেয়ারে বসে সে। চারপাশে উড়ছে টাকার নোট। ছবির তলায় লেখা ‘চেঙ্গিজ সীমাহীন’! জিৎ-সুস্মিতা ছাড়াও এই ছবির আকর্ষণ রণিত রায়, শতাফ ফিগার। প্রযোজনায় জিৎ, গোপাল মদনানি, অমিত জুমরানি।

 

 

জিতের এই ছক ভাঙা প্রয়াসকে কুর্নিশ করেছে ‘বক্স অফিস বেঙ্গল’। টুইট করে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি বার্তাও দিয়েছে, ‘সবাই স্রোতে গা ভাসায়। স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটতে গেলে সাহস লাগে। ৪৫ দিন ধরে বাংলা ছবির শ্যুটিং করে বুঝিয়ে দিলে, বুকের পাটা না থাকলে সম্ভব নয় ‘বস’!’