সংক্ষিপ্ত
- করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কাজ হারান
- বাড়িতে বসে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন
- টোটোকে একটি ভ্রাম্যমাণ স্ট্রিট ফুড সেন্টারের রূপ দেন
- তাকে সঙ্গী করেই লড়াই জারি মৃদুল রায়ের
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কাজ হারিয়েছিলেন। এদিকে সারাক্ষণ বাড়িতে বসে থাকার ফলে হতাশা গ্রাস করছিল তাঁকে। কী করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে স্ত্রীর বুদ্ধিতে টোটোর মধ্যেই খুলে ফেলেন একটি মিনি রেস্তরাঁ। আর এভাবেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেই রেস্তরাঁকে সঙ্গী করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রায়গঞ্জের মৃদুল রায়।
আরও পড়ুন- এই বর্ষার মরশুমে চটজলদি বানিয়ে ফেলুন, স্টিক কাবাব আর ধনিয়া চাটনি
সামান্য একটি টোটো। কিন্তু, তার মধ্যেই যে আস্ত একটা রান্নাঘর খুলে ফেলা সম্ভব তা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেননি। আর সেটাই করে দেখিয়েছেন মৃদুল। এভাবেই তাঁর জীবন যুদ্ধে সামিল হয়েছে তিনচাকার সেই যানটি।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে হোটেলে কাজ করতেন মৃদুল। কাজের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে তাঁকে। ব্যাঙ্গালোরের একটি পাঁচতারা হোটেলে কর্মরত ছিলেন তিনি। সব ঠিকই চলছিল। কিন্তু, দেশে করোনা থাবা বসানোর পরই বন্ধ হয় হোটেল। সেই সঙ্গে কাজ হারান তিনি। এরপর কোনওরকমে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। তবে দিনের পর দিন বাড়িতে বসে থাকার ফলে সংসার চলছিল না। গ্রাস করছিল হতাশা। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সেই সময় স্ত্রী রাখি দেবসিং তাঁকে বুদ্ধি দেন। আর স্ত্রীর কথা মতোই টোটোর মধ্যেই বানিয়ে ফেলেন একটি ভ্রাম্যমাণ স্ট্রিট ফুড সেন্টার। যার নাম দিয়েছেন 'দা হাঙ্গার'।
চিকেনের হরেকরকম খাবার পাওয়া যায় 'দা হাঙ্গার'-এ। চিকেন পকোড়া, চিকেন কাবাব, ডায়নামাইট চিকেন, পিৎজা থেকে শুরু করে কন্টিনেন্টাল খাবারও মেলে এখানে। রোজ বিকেলে রায়গঞ্জের কর্নজোড়ায় জেলা প্রশাসনিক ভবন লাগোয়া বিনোদন পার্কের সামনে এই টোটো নিয়ে হাজির হন মৃদুল। গত পাঁচ মাস ধরে রোজ সকালে উঠে বাজার করেন তিনি। তারপর গোটা দিন তোড়জোড় করে বিকেলের দিকে টোটো নিয়ে চলে যান পার্কের পাশে। আর সেখানেই টোটো সাজিয়ে খাবার তৈরি করতে শুরু করেন।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এখন বেশিরভাগ অফিসই চলছে ঘর থেকে। ফলে বিকেলের দিকে অফিস শেষে অনেকেই একটু রাস্তায় ঘুরতে বের হন। আর সেই সময়ই মৃদুলের 'দা হাঙ্গার'-এ ভিড় করেন তাঁরা। এক ক্রেতার কথায়, করোনার মধ্যে এখন বদ্ধ রেস্তরাঁয় যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু, এখানে অনেক জায়গা রয়েছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব সঠিকভাবে মেনে চলা যায়। তাই কোনও সমস্যা হয় না।
আরও পড়ুন- জানেন কি, গোটা বিশ্বে মাত্র ৪৩ জনের শরীরে রয়েছে এই গ্রুপের রক্ত, আপনি নেই তো সেই তালিকায়
এছাড়া করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনেই এই সেন্টারটি চালান মৃদুল। টোটোতে খাবারের তালিকা দেওয়া যে বোর্ড রয়েছে সেখানে লেখা, "মাস্ক পরুন সতর্ক থাকুন"। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কেউ যদি মাস্ক না পরে আমার দোকানে খাবার কিনতে আসেন তাহলে তাঁকে দিই না। বলি আগে মাস্ক পরুন তারপর এখানে আসুন।" তাঁর এই অভিনব উদ্যোগ আর সুস্বাদু খাবার খাদ্যপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও যে মনকে শক্ত করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব তাই প্রমাণ করে দিয়েছেন মৃদুল।