- Home
- World News
- Bangladesh News
- বাংলাদেশ কি চলে যাবে ইসলামি চরমপন্থীদের হাতে - ভয় ধরাচ্ছে হেফাজত-এ-ইসলাম, দেখুন ছবিতে ছবিতে
বাংলাদেশ কি চলে যাবে ইসলামি চরমপন্থীদের হাতে - ভয় ধরাচ্ছে হেফাজত-এ-ইসলাম, দেখুন ছবিতে ছবিতে
- FB
- TW
- Linkdin
গত মাসে স্কুলের ক্লাসরুমে ইসলাম ধর্মের নবি হজরত মহম্মদের ব্যঙ্গ চিত্র দেখানোর অভিযোগে প্রকাশ্য রাস্তায় খুন করা হয়েছিল এক ফরাসী শিক্ষককে। সেই ঘটনার পর ইসলামি চরমপন্থীদের কড়া হুশিয়ারি দিয়েছিলেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। এর পর ঢাকার রাস্তা কাঁপিয়ে হাজার হাজার ইসলামি চরমপন্থী সামিল হয়েছিল ফ্রান্স বিরোধী প্রতিবাদে। সেটাই ছিল উগ্রপন্থার সাম্প্রতিক উত্থআনের বহিপ্রকাশের শুরু।
চরমপন্থীদের সেই কর্মসূচি বাংলাদেশে এখন নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশের জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ। কোভিড মহামারির মধ্যেও জাতির জনকের শতবর্ষ উদযাপন ঘিরে বাংলাদেশ জুড়ে বিশাল পরিকল্পনা চলছে। কিন্তু, চরমপন্থীরা এখন তাতে বাধ সেধেছে। তাদের দাবি শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি বসানো যাবে না। যেসব মূর্তি আছে, তাও সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ পৌত্তলিকতা ইসলাম বিরোধী।
বাংলদেশের ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তমন সমাজ অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছে ভাস্কর্য হল এক ধরণের শিল্প, এর সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই। বহু মুসলিম দেশেই সেই দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মূর্তি স্থাপন করতে দেখা যায়। তাঁদের মতে শেখ মুজিবের মূর্তি স্থাপন অ-ইসলামিক এমন চিন্তাভাবনা একেবারেই মধ্যযুগীয় এবং অযৌক্তিক। কিন্তু, হেফাজত-এ-ইসলাম নামে চরমপন্থী মুসলিম সংগঠনের দাপটের সামনে, তাদের সেইসব যুক্তি একেবারে মিনমিন করছে।
এই চরমপন্থী মুসলিম সংগঠনের ঘাঁটি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানে বহু মাদ্রাসা তারা পরিচালনা করে। সম্প্রতি এই সংগঠন ও তাদের নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী, ফ্রান্সের ঘটনার পর থেকে একের পর এক বিষাক্ত প্রচার করে যাচ্ছে। অন্যান্য ধর্মের পক্ষে অবমাননাকর এবং বিকৃত আক্রমণাত্মক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে শুরু করে ঘৃণামূলক ও উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে সমাজে বিভেদ তৈরি করে চলেছে।
বাবুনগরী ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার-এর কাছে চার দফা দাবি পেশ করেছে। দাবি গুলি হল - ১) বাংলাদেশে ইসকন-এর সব কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে হবে, ২) আহমদিয়া-দের ইসলামবিরোধী ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে, ৩) বাংলাদেশ থেকে ফরাসী রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে হবে এবং ৪) বাংলাদেশি সংসদে একটি প্রস্তাব পাস ফ্রান্সের নিন্দা করতে হবে এবং ঢাকার ফরাসী দূতাবাসটি বন্ধ করে দিতে হবে।
শুধু তাই নয়, তারা হাত মিলিয়েছে জামাত-এ-ইসলামি ও খিলাফত মজলিশ-এর মতো পরিচিত চরমপন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে। অতি-অসহিষ্ণু সংগঠনের সাথে হাত মিলিয়ে দেওয়া হেফাজতে ইসলাম সরকারের পক্ষে উদ্বেগজনক। পাকিস্তানে মদতপুষ্ট জামাত স্বাভাবিকভাবেই ভারত বিরোধী, এবং সংখ্যালঘু হিন্দু বিরোধী। ১৯৭০-৭১'এ তারা ছিল পাক বাহিনীর পক্ষেই। কাজেই হেফাজত তাদের সঙ্গে হাত মেলানোয় মুখের হাসি চওড়া হয়েছে পাকিস্তানের।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল তারা শেখ হাসিনা তথা ক্ষমতাসীন সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে সেই কারণেই এতদিন ধরে বিষ ছড়িয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকার কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আর সরকারের এই নরম মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে হেফাজত-এ-ইসলাম তাদের দাবির তালিকা ক্রমে বাড়িয়েই চলবে।
বস্তুত হেফাজত-এ-ইসলাম-এর অন্যায় আবদারের কাছে এর আগেও মাথা নত করেছে হাসিনা সরকার। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট চত্ত্বর থেকে এক মহিলার মূর্তি সরাদতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। সেই ক্ষেত্রেও ইসলামি আদর্শ বিরুদ্ধের যুক্তি দিয়েছিল হেফাজত-এ-ইসলাম। এবার তারা এবং অন্যান্য ইসলামি চরমপন্থী সংগঠন বাংলাদেশের সমস্ত ভাস্কর্যকে ভেঙে ফেলার ডাক দিয়েছে। টিভি চ্যানেল এবং সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলছে উত্তপ্ত বিতর্ক।
এই অবস্থায় দারুণ সমস্যায় পড়েছে হাসিনা সরকার। এমনিতে হাসিনা নিজে ও তাঁর দলের নেতারা, হাসিনার, 'ইসলামের একজন প্রকৃত অনুগামী', এমন ভাবমূর্তিই তুলে ধরেন। তবে সেইসঙ্গে বলা হয় তিনি ধর্মের আধুনিকায়নে এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিশ্বাসী। এই অবস্থায় হেফাজত-এর আন্দোলন তাঁর সেই 'ইসলাম অনুগামী' ভাবমূর্তি কলুষিত করতে পারে। তবে চট্টগ্রাম-সহ গোটা বাংলাদেশেই হেফাজতের সমর্থন যেভাবে বাড়ছে, তাতে হেফাজত-এর কথা মতো না চললে ক্ষমতা হারাতে পারেন তিনি। শোনা যায় গত নির্বাচনে এই হেফাজতের মতো বেশ কিছু আপত্তিজন গোষ্ঠীর সমর্থনের জোরেই প্রায় নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতা দখল করেছিল আওয়ামি লিগ।
এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা এই সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে লাগাম লাগানোর চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু, তাদের সেই প্রচেষ্টা একেবারেই দুর্বল বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তাই, শাহবাগ আন্দোলনের পর ফের মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের মতো অরাজনৈতিক শক্তিকে আসরে নামতে হয়েছে। তবে সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থন যেখানে রয়েছে, সেখানে তারা কতটা লড়াই করতে পারবেন, তাই নিয়ে সংশয় রয়েছে।