ঝাড়ুদার থেকে আইপিএল তারকা, কেকেআর তারকা রিঙ্কু সিংয়ের গল্প সত্যি অনুপ্রেরণার
আইপিএল ২০২২ (IPL 2022) -এ লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে দুরন্ত লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত ২ রানে হারতে হয়েছে কেকেআরকে (KKR)। এবারের মত আইপিএল অভিযান শেষ হয়ে গিয়েছে নাইটদের। কিন্তু লখনউয়ের বিরুদ্ধে ১৫ বলে ৪০ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে দলকে জয়ের দোরগোরায় নিয়ে গিয়েছিলেন রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। ম্য়াচ কেকেআর হারলেও ক্রিকেট প্রেমিদের মন জয় করে নিয়েছেন রিঙ্কু। শুধু লখনউ ম্যাচ এবার আইপিএবে সীমিত সুযোগে নিজের জাত চিনিয়েছেন রিঙ্কু সিং। রাজস্থানের বিরুদ্ধেও খেলেছিলেন ম্য়াচ উইনিং ইনিংস। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে কেকেআর দলে থাকলেও নিয়মিত সুযোহ পাননি এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্য়ান। জল দেওয়াপ জন্য তাকে দলে নেওয়া হয়েছে বলে নেটিজেনরাও কটাক্ষ করেছেন রিঙ্কুকে। সকলকেই নিজের ব্য়াটের মাধ্যমে জবাব দিলেন তিনি। শুধু মাঠেই নিজেকে প্রমাণ করারর জন্য লড়াই করতে হয়নি রিঙ্কুকে, তার জীবন সংগ্রামের কাহিনি জানলে চোখে জল আসবে আপনারও।
- FB
- TW
- Linkdin
আইপিএল এঁদো গলি থেকে স্বপ্নের রাজপথ দেখিয়েছে অনেক ক্রিকেটারকে। রাজস্থান রয়্যালসের যশশ্বী জয়সওয়ালের ফুচকা ওয়ালা থেকে আইপিএল তারকা হওয়ার গল্পন আমাদের সকলের জানা। জম্মু-কাশ্মীরের ফল বিক্রেতার ছেলে নেট বোলার হিসেবে আইপিএলে এসে দুরন্ত পারফর্ম করে এখন ভারতীয় দলের জার্সি পড়ার অপেক্ষায়। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হলেন রিঙ্কু সিং।
উত্তর প্রদেশের আলিগড়ের বাসিন্দা রিঙ্কু সিংয়ের প্রথম জীবনটা কিন্তু যথেষ্ট কঠিন ছিল। ১৯৯৭ সালে জন্ম রিঙ্কুর। তাঁর বাবা কাঞ্চন সিং গ্য়াস সিলিন্ডার বিতরণের কাজ করেন। গ্যাস এজেন্সির স্টোরেজ কম্পাউন্ডে ৪ ভাইবোন ও মা বাবার সঙ্গে থাকতেন রিঙ্কু। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার ছিল।
কিন্তু বাবার সিলিন্ডার বিতরণের কাজে সংসার চলত না। অভাবী সংসারে এতগুলি মানুষের পেট চালানো দায় হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে কাজে যোগ দিতে হয় রিঙ্কুকে। সংসারের চাপের জন্য অর্থ উপার্জন করতে সেইসময় বাধ্য হয়ে ঝাড়ুদারের কাজ করতে শুরু করেন রিঙ্কু। যদিও তার এই কাজ পছন্দ ছিল না।
ঝাড়ুদারের কাজ করার পাশাপাশি পাঁকা সময়ে খেলতেন ক্রিকেট। এই খেলাটারা প্রতি ছোট বেলা থেকেই আলাদা বালোবাসা ছিল রিঙ্কু সিংয়ের। দিল্লির একটি টুর্নামেন্টে ভালো খেলে বাইক উপহার পেয়েছিলেন তিনি। যা তুলে দেন বাবার হাতে, গ্যাস বহন করার কাজে সাহায্য করত। আসতে ক্রিকেটে পরিচিতি বাড়তে থাকে।
এরপর উত্তরপ্রদেশের রাজ্য দলে সুযোগ। তারপর ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে যান। ২০১৭ সালে আসে পঞ্জাব ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে অফার। ১ লাখ টাকার বিনিময়ে যোগ দেন। কিন্তু খেলার সুযোগ পাননি। তারপর তাকে দলে নেয় কেকেআর। অবশেষে রিঙ্কুর আর্থিক পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।
গত ৫ বছর ধরে রিঙ্কু কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু দলের প্রথম একাদশে সেই অর্থে জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি। প্রতিটা মরশুমেই গরম করে গিয়েছেন রিজার্ভ বেঞ্চ। তাকে নিয়ে নেট দুনিয়ায় তৈরি হয়েছে নানা মিম। তাকে শুধু জল দেওয়ার জন্য দলে নেওয়া হয়েছে বলেও কটাক্ষ করেন অনেকে।
এরআগেও পরিবর্ত প্লেয়ার হিসেবে তিনি মাঠে নেমেছিলেন। সেখানে ফিল্ডিংয়ে নজর কেড়েছিলেন। কিন্তু শক্ত গাঁটটাই খোলা হচ্ছিল না। সেটা হল প্রথম একাদশে জায়গা। ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা পারফর্ম করে গেলেও কোথাও একটা খামতি থেকে যাচ্ছিল, যারফলে সুযোগ মিলছিল না কেকেআরের-এর প্রথম একাদশ। দল খারাপ খেলুক বা ভালো, রিঙ্কুর জায়গা ডাগআউটেই।
অবশেষে চলতি মরশুমে তাঁর কাছে সুযোগ আসে নিজেকে প্রমাণ করার। আর সেটা তিনি একেবারে হাতছাড়া করেননি। গুজরাট ম্যাচ হোক আর রাজস্থানের বিরুদ্ধে ম্য়াচ উইনিং ইনিংস। নিজেকে প্রমাণ করেন রিঙ্কু। লখনউয়ের বিরুদ্ধে বুধবারের ম্য়াচে নিশ্চিৎ হারা ম্য়াচে অবিশ্বাস্য ব্য়াট করে দলকে নিয়েগিয়েছিলেন জয়ের কাছে। ১৫ বলে ৪০ রান করেন তিনি। কিন্তু তিনি আউট হতেই ২ রানে ম্যাচ হারে কেকেআর। কিন্তু কেকেআর সমর্থকদের মন জয় করে নয়ণের মণি হয়ে উঠছে আলিগড়ের একমাত্র আইপিএল ক্রিকেটার। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে উপর্জন, তারকা হয়ে উঠবেন রিঙ্কু।