জেনে নিন ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা কয়েকটি উদ্ভাবনী শট সম্পর্কে
সময়ের সাথে সাথে ক্রিকেটেও প্রতিনিয়ত একাধিক পরিবর্তন হয়ে আসছে। পাঁচ দিনের ক্রিকেট এবং সীমিত ওভারের ক্রিকেটের মাঝে আজ তৈরি হয়েছে প্রচুর পার্থক্য। টেস্ট ক্রিকেটে এখনও যেমন ঠান্ডা মেজাজের কোনো বিকল্প নেই, তেমনিভাবে টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে ফর্ম্যাটের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের কোনও বিকল্প নেই। আর এজন্য যুগের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে ব্যাটসম্যানদের শুধুমাত্র কপিবুক অর্থোডক্স ক্রিকেট খেললেই চলছে না, বরং সময়ে সময়ে নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি ও প্রতিভা কাজে লাগিয়ে নানান রকমের উদ্ভাবনী শটও খেলতে হচ্ছে, যেগুলো ব্যাটসম্যানরা প্রয়োগ করার আগের মুহুর্ত অবধি বোলাররা কল্পনাও করতে পারেন না। আধুনিক ক্রিকেটের তেমনই কয়েকটি ব্যতিক্রমধর্মী শট নিয়েই রইলো আজকের প্রতিবেদন
| Published : Aug 12 2020, 02:07 PM IST / Updated: Aug 12 2020, 02:08 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
আপার কাট
আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম পরিচিত উদ্ভাবনী শটগুলোর মাঝে আপার কাট একটি। এই ধরনের শট খেলতে হলে বলটি অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করার সঙ্গে সঙ্গে তাতে খানিকটা শর্টও হতে হবে। তখন ব্যাটসম্যান যদি সাধারণভাবেই বলটির গতি কাজে লাগিয়ে স্লিপের ওপর দিয়ে গাইড করে দেন তবে থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে আরো চারটি রান যোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অসাধারণ এই শটটি খেলার বুদ্ধিটা সর্বপ্রথম এসেছিল ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ খ্যাত ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকারের মাথায়। পরবর্তীকালে বীরেন্দ্র সেওবাগও এই শটটি অনেকবার খেলেছেন।
রিভার্স স্কুপ
এটি প্রচলিত স্কুপ, আপার কাট কিংবা টপ এডজের থেকে বেশ খানিকটা অন্যরকম এবং ঝুঁকিপূর্ণ। এ বি ডিভিলিয়ার্স বা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-রা এই শটটি খেলেন একটু বিশেষ কায়দা করে। ডিভিলিয়ার্স সাধারণত বোলার বল ছোঁড়ার আগে তিনি প্রথমে ২-৪ বার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং উইকেট কিপারকে ফাঁকি দিয়ে স্ট্রোক করার জন্য একটি সু্বিধাজনক জায়গা বেছে নেন। এরপর নিখুঁত টাইমিংয়ের মাধ্যমে থার্ড ম্যান কিংবা স্লিপ এরিয়ার ওপর দিয়ে বলটিকে উড়িয়ে দেন। ম্যাক্সওয়েল অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কায়দার চেয়েও বেশি শক্তির সাহায্য নেন শটটি খেলার সময়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুজনেই শটটি খেলেন পেসারদের বিরুদ্ধে যাতে তাদের গতিটিকে কাজে লাগানো যায়।
সুইচ হিট
এই শটটিকে অবশ্য অনেকে রিভার্স সুইপের অত্যাধুনিক ভার্সন বলে অবিহিত করে থাকেন। আসলে শটটি রিভার্স সুইপের থেকে অনেকটাই অন্যরকম। রিভার্স সুইপে ব্যাটসম্যান নিজে এক পজিশনে থেকে ব্যাটটিকে আচমকা বিপরীত দিক থেকে ঘুরিয়ে এনে শটটি খেলেন, কিন্তু সুইচ হিটে বোলার বল ডেলিভারি করার পর ব্যাটের সাথে ব্যাটসম্যানও ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে উল্টো দিক থেকে প্রচন্ড জোরে পুল করেন। সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন এটির উদ্ভাবক এবং তিনিই এটিকে সবচেয়ে ভালোভাবে খেলতে পারতেন। অবশ্য ইদানিংকালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারকেও এই শটটি খেলতে দেখা গিয়েছে।
দিল স্কুপ
ক্রিকেট জগতের সেরা উদ্ভাবনী শট হল দিল স্কুপ। যার উদ্ভাবক হলেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান তিলকারত্মে দিলশান। স্কুপ শিল্পকে তিনি এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যাতে করে বোলারের গতিকে পুঁজি করে সেটা তাঁরই বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যায়। গুড লেংথে ফেলা যে কোনও ভালো ডেলিভারিকে তিনি উইকেট কিপারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পৌঁছে দিতে সক্ষম হতেন। হাঁটু গেড়ে বসে শেষ মুহুর্ত অবধি বল নজরে রেখে ব্যাটের চাঁটায় উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বলটিকে প্লেস করার এই কাজটি করা রীতিমতো মুশকিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। দিলশান ছাড়া আর কোনও ব্যাটসম্যান নিয়মিত এই শটটি খেলে যেতে পারেননি।
পেরিস্কোপ
বাংলাদেশ বর্তমান ক্রিকেট দলের অন্যতম প্রধান ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকারের ট্রেডমার্ক শট এই পেরিস্কোপ। ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই এই শটটি খেলতে দেখা যেত তাঁকে। এর আগে অনেকেই চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার মতো নিয়মিত ভাবে এই শট খেলতে পারেননি কেউই। এই শটটি খেলার জন্য তিনি সাধারণভাবে বল কাছের আসার সাথে সাথে নিজের ব্যাটটি মাথার কাছ দিয়ে বাতাসের মধ্যে ঘুরিয়ে দেন এবং বলটি একটুর জন্য তাঁর হ্যালমেটটিকে মিস করে উইকেট কিপারের ওপর দিয়ে শট ফাইন লেগ অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়। তবে এই শট ১০০% নিখুঁত ভাবে প্রয়োগ না করতে পারলে ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।