জেনে নিন কেন পালিত হয় বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস, রইল রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়
বিশ্ব জুড়ে পালিত হচ্ছে ম্যালেরিয়া দিবস। প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল দিনটি বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত হয় নানান জনকল্যান মূলক কর্মসূচী। ম্যালেরিয়া মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা যে কতটা প্রয়োজন তা আরও একবার সাধারণকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নেওয়া হয় এই দিন। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন এই রোগে। মশার কামড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে। আর এর জন্য দায়ী আমরাই। নোংরা জায়গা ও আর্দ্র জায়গায় ম্যালেরিয়ার মশা জন্মায়। আর এই কঠিন সত্য জেনেও আমরা তা উপেক্ষা করে থাকি। ফলত, ক্ষতি হয় আমাদেরই। তাই নিজেদের স্বাস্থ্য ও প্রাণ রক্ষা করতে চাইলে সতর্ক হন।
| Published : Apr 25 2022, 10:13 AM IST / Updated: Apr 25 2022, 10:28 AM IST
- FB
- TW
- Linkdin
প্রথমবার বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালিত হয়েছিল ২৫ এপ্রিল ২০০৮। দিনটি উদযাপন করার পিছনের প্রধান কারণ হল সারা দেশের মানুষকে সচেতন করা। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন এই রোগে। মশার কামড়ে প্রাণ হারাচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলে। এর থেকে মুক্তি পেতে শুধুই প্রয়োজন সতর্কতা। আর চারিদিক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্রামীণ ও অনুন্নত এলাকায় বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়া রোগে। ম্যালেরিয়া আসলে এক ধরনের পরজীবী প্লাজমোডিয়াম দ্বারা ছড়ানো একটি রোগ। এটি শরীরে প্রবেশ করে লোহিত রক্তকণিকাকে ধ্বংস করে দেয়। এর থেকে হতে পারে মৃত্যু। রোগ থেকে বাঁচতে চারিদিক পরিষ্কার রাখতে হবে। তাহলে ম্যালেরিয়ার মশা জন্মাতে পারবে না।
জানা গিয়েছে, অ্যানোফিলিস স্ত্রী মশা ম্যালেরিয়া রোগের বাহক। এটি প্লাজোডিয়াম নামেও পরিচিত। ভারতে বেশিরভাগ ম্যালেয়া সংক্রমণ প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ও প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরমা দ্বারা সৃষ্টি হয়। তাই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানোর পর যদি অ্যানোফিলিস মশা অন্য কোনও ব্যক্তিকে কামড়ায় তাহলে ম্যালেরিয়া হত পারে।
অন্য দিকে, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের আদান প্রদান দ্বারা ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা থেকে যায়। ম্যালেরিয়া মশা কামড়ালেই মৃত্যু হবে এমন নয়। ম্যালেরিয়ার পরজীবী রোগীর লিভারে প্রবেশ করলে তা কম পক্ষে এক বছর পর্যন্ত থাকতে পারেন। তাই প্রতিমুহূর্তে সতর্ক থাকা দরকার। আপনার ভুলেই সংক্রমণ বাড়তে পারে এই রোগের।
এখন প্রশ্ন হল কীভাবে ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধ করবেন। সকলেই জানেন, নোংরা জলে ও আর্দ্র পরিবেশে জন্মায় ম্যালেরিয়ার মশা। তাই বাড়ি আশে পাশে নোংরা জল জমতে দেবেন না। নিকাষি ব্যবস্থা ঠিক করন। কোথাও আর্দ্র পরিবেশ বা স্যানসেঁতে জায়গা থাকলে সেখানে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার দিন। এতে মশা জন্মাতে পারবে না।
দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ সময় রাতে বা সন্ধ্যায় ম্যালেরিয়ার মশা কামড়ায়। তাই এই সময় বাড়ির জানলা দরজা বন্ধ রাখুন। রাতে মশারির ব্যবহার করুন। আর যতটা পারবেন শরীরের অংশ ঢেকে রাখুন। তা না হলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাবে। বাড়িতে মশকিউটো কয়েল জ্বালিয়ে রাখুন। তা না হলে রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
যদি কোনও ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হন, আর সেই জ্বর ক্রমে বাডতে থাকতে তাহলে ফেলে রাখবেন না। তৎক্ষণাত ডাক্তারি পরামর্শ নিন। সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগের সম্ভবানা দেখতে অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল ওষুধ খান। এতে রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এই রোগের লক্ষণ দেখা দিতে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া জরুরি। গাফিলতিতে মৃত্যুর পর্যন্ত হতে পারে।
ম্যালেরিয়া রোগ নির্নয় করার জন্য সবার আগে রোগীর শরীর থেকে রক্তে নমুনা নেওয়া হয়। এই নমুনা রক্তের স্মিয়ার তৈরি করা হয়। রক্তে স্মিয়ারে ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইটের অনুপস্থিতির কারণে ডাক্তারের সন্দেহ থাকলে পরবর্তী ৩৬ ঘন্টার জন্য ৮ থেকে ১২ ঘন্টার মধ্যে তাকে আবারও পরীক্ষা করা হয়।
প্রতিবছর আফ্রিকা মহাদেশের বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সে কারণে প্রথমে আফ্রিকাতেই ম্যালেরিয়া ডে পালিত হত। ২০০১ সাল থেকে আফ্রিকার দেশগুলো সচেতনতা ছড়াতে এই দিবসটি পালন করতে শুরু করে। এর পর থেকে প্রতি বছর সব কয়টি দেশে এই দিবস পালিত হতে শুরু করে।
বর্তমানে চিকিৎসার উন্নতির পরেও এখনও রোগ থেকে নির্মূল করা যায়নি। ফলে মশা দূর করতে মশার লাভা ধ্বংস করার বার্তা দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশের সরকারের পক্ষ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল দিনটি বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত হয় নানান জনকল্যান মূলক কর্মসূচী।