- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- বাংলার বাম ভোট এখন গেরুয়া শিবিরে, ৩ বছরে কীকরে অসম্ভবকে সম্ভব করল বিজেপি
বাংলার বাম ভোট এখন গেরুয়া শিবিরে, ৩ বছরে কীকরে অসম্ভবকে সম্ভব করল বিজেপি
- FB
- TW
- Linkdin
প্রথমে রাম তারপর বাম
২০১৯ লোকসবার সময় বাম সমর্থকদের মধ্যে একটি স্লোগান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল - প্রথমে রাম তারপর বাম। অর্থাৎ, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে সরাতে প্রথমে বিজেপিকে আনতে হবে, তারপর বাম সরকার আনার কথা ভাবা যাবে। এমনকী পার্টিকর্মীরাও অনেকেই এমন মনোভাব নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস এর জন্য দায়ী করেছিল, সিপিএম-এর একবগ্গা মমতা-বিরোধী মানসিকতাকে। বাম নেতৃত্ব বলেছিল, বিজেপি এবং তাদের সহযোগীদের অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি দ্বারা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এটা আসলে তৃণমূল বিরোধী মনোভাবকে টুকরো করার দুষ্ট কৌশল। তবে, আসল সত্যিটা হল এই স্লোগান উঠেছিল স্থানীয় স্তরে সিপিএম নেতা-কর্মীদের মনের তীব্র ক্ষোভ থেকে।
কেন এই স্লোগান
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের গুন্ডাবাহিনীর হাতে পড়ে পড়ে মার খেতে হয়েছিল বাম কর্মী-সমর্থকদের। তাঁদের রক্ষা করতে পারেননি রাজ্য স্তরের বাম নেতৃত্ব। আর তাঁদের এই অক্ষমতায় হতাশা তৈরি হয়েছিল বাম কর্মী-সমর্থকদের মনে। এরমধ্যে এসেছিল লোকসভা ভোট। রাজ্যে এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকায় তাঁরা রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে রুখতে পারবে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল বাম ভোটারদের মনে। আর তার থেকেই তৈরি হয়েছিল ওই স্লোগান।
মানুষের সামনে ছিল দুটি বিকল্প
লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন পাওয়ায় প্রথম রাজ্যে নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছিল বিজেপি। রাজ্যের তৃণমূল বিরোধী মানুষের বিকল্প পেয়েছিলেন দুটি বিকল্পকে - বাম ও বিজেপি। ইতিমধ্যে ভোটারদের মধ্যে বাংলার বামপন্থী, বিশেষত সিপিএম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছিল। তবে তারপরও নির্বাচনের তাঁরা কতটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারবেন, এই নিয়ে সংশয় ছিল ভোটারদের মনে। আর এখান দিয়েই বাংলার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন মোদী-শাহ জুটি। বাম নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের দলে টানতে তৃণমূল ও মমতা সরকারের বিরুদ্ধে লোকসবা ভোটের পর থেকেই তাঁরা নিয়মিত ঝাঁঝালো বক্তৃতা দিয়ে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে কাজে লাগিয়েছেন। এখানেই ক্যারিশম্যাটিক নেতাদের অভাবে ভোগা বামেদের ত্যাগ করে ব্র্যান্ড বিজেপিতে ঝুঁকতে শুরু করেছিল মানুষ। সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হিসাবে উত্থান হয়েছিল বিজেপির।
দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আরও পতন বামেদের
এর পাশাপাশি আরও এক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল বামেরা। যা রাজ্যে আরওই ভাঙন ধরায় বাম ভোটে। দুর্নীতি ও হিংসা নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করার বিষয়ে বিজেপির সঙ্গে একই জায়গায় থাকলেও, আদর্শগত প্রশ্নে বিজেপি বিরোধিতার সময়ে তাদের সুর বিভিন্ন সময়ে মিলে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সিএএ-এনআরসি, ৩৭০ ধারা বাতিল, কৃষক বিক্ষোভ-এর মতো বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে বাম-তৃণমূল একই ভাবে বিজেপির বিরুোধিতা করেছে। কার্যত বিজেপি না তৃণমূল কাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বলা হবে, তাই নিয়য়ে নির্বাচনের আগেও বিভ্রান্ত বাম নেতারা। অন্যদিকে বিদেপি নেতারা দ্বিধাহীনভাবে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়েছেন তৃণমূলকে।
বিজেপির রাজনৈতিক মেরুকরণ
বামেদের এই দ্বিধার সুযোগকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে বিজেপিও। বাম এবং তৃণমূল আদর্শগত দিক থেকে বহু ইস্যুতেই এক জায়গায় - এটা দেখিয়েই বাংলায় রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটাতে সফল হয়েছে গেরুয়া শিবির। বাংলায় একদিকে বিজেপি এবং তার বিরুদ্ধে অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল - এমন বয়ান সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলার বুকে। আর তাই, অল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূল বিরোধিতার মঞ্চে দ্বিতীয় সারিতে চলে যায় বামেরা। প্রথম জায়গাটি দখল করে নেয় বিজেপি। তৃণমূলের অত্যাচারে ক্লান্ত বাম কর্মীরা সিএএ-এনআরসিআন্দোলনে তৃণমূল নেতাদের পাশে বাম নেতাদের দাঁড়াতে দেখে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের জন্য সহজ বিকল্প হয়ে ওঠে বিজেপি।
বিজেপির সাবধানী খেলা
বিজেপিও বেশ সাবধানে ফেলেছে আস্তিনের তাসগুলি। রাজ্যের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে এনআরসি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এই উদ্বেগ কাটাতে বিজেপি তড়িঘড়ি সিএএ আইন পাস করেছে। এতে করে রাজ্যে তাদের নবগঠিত ভোটার বেস, বিশেষত নমশূদ্র দলিতরা আশ্বস্ত হয়েছেন। আশির দশক থেকেই ভারতে নমশুদ্রদের অভিবাসন বেড়েছিল। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত এই সম্প্রদায়ের মানুষ অবিরাম সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করছেন। এতদিন এইসব উদ্বাস্তু মানুষ ছিলেন বামেদের সঙ্গে। কিন্তু, এই শরণার্থীরা এখন বিজেপি-র মূল ভোটার হিসাবে উঠে এসেছেন।