সংক্ষিপ্ত
আমেরিকায় শুকড়ের হৃৎপিণ্ড মানব শরীরের প্রতিস্থাপন করার ঘটনা তৈরি করল অন্য বিতর্ক। অপরাধীদের কি জীবন রক্ষাকারী অঙ্গদান করা উচিত?
অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের বাঁচানোর জন্য ডাক্তারদের সামনে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা ছাড়া উপায় থাকে না। সম্প্রতি এক যুগান্তকারী অঙ্গ প্রতিস্থাপনের (Organ Transplant) ঘটনা সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের জন্য এক মরণাপন্ন রোগীর হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, জেনেটিকালি পরিবর্তিত একটি শূকরের হৃৎপিণ্ড দিয়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই ঘটনা যতটাই যুগান্তকারী, একইসঙ্গে এই ঘটনা অন্য এক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই ধরণের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে, রোগীর অপরাধের ইতিহাসকে বিবেচনা করা উচিত কিনা। কারণ যে ব্যক্তি ওই যুগান্তকারী অপারেশনে দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন, তিনি কয়েক বছর আগে আরেক ব্যক্তির উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালিয়েছিলেন, এমনটাই জানা গিয়েছে।
বাল্টিমোরের (Baltimore) ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টারে (University of Maryland Medical Center) হয় প্রথম শূকড়ের হৃদয় মানুষের দেহে প্রতিস্থাপনের অপারেশনটি। নতুন জীবন পেয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড বেনেট সিনিয়র। এই ঘটনা সারা বিশ্বের মানুষ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নয়ন বলে ধরলেও, এটি ঘটনা চিকিৎসার অগ্রগতিকে কলঙ্কিত করেছে বলে মনে করেন লেসলি শুমাকার ডাউনি। আসলে, ১৯৮৮ সালে ডাউনির ছোট ভাই এডওয়ার্ড শুমাকারকে সাতবার ছুরিকাঘাত করেছিলেন ডেভিড বেনেট সিনিয়র। এডওয়ার্ড শুমাকার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন, পরের ১৯ বছর তাঁকে হুইলচেয়ারে কাটাতে হয়েছিল। ২০০৫ সালে তাঁর স্ট্রোক হয় এবং ২০০৭ সালে অবশেষে মারা যান তিনি।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, বেনেটকে আদালত শুমাকার এবং তার পরিবারকে ৩.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ডাউনির দাবি, তাঁদের পরিবার সেই অর্থের একটা কানাকড়িও পায়নি। বেনেটের কারাবাস হলেও, ভাল আচরণের জন্য ছয় বছর পরই ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন। ডাউনি আরও জানিয়েছেন, তাঁর ভাইকে দীর্ঘদিন ভুগতে হয়েছে। তাঁদের পরিবারকে বছরের পর বছর ধরে এক বিধ্বংসী ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এরপর আবার বেনেট সিনিয়র, শূকড়ের হৃদয়ের মাধ্যমে নতুন জীবন যাপনের সুযোগ পাবেন, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না শুমাকার। তাঁর মতে, এটি একজন 'যোগ্য প্রাপক' পেলে ভাল হত। বিশেষ করে, শুধু আমেরিকাতেই অঙ্গ-প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষার তালিকায় রয়েছেন ১ লক্ষ ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর এই অপেক্ষায় থেকে মৃত্যু হয় প্রতিদিন ১৭ জনের।
চিকিৎসক মহল অবশ্য বলছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কোনও রোগীর অপরাধের ইতিহাস বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়। চিকিৎসা বা চিকিৎসাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে অপরাধের ইতিহাসকে বিবেচনা করা হয় না। খারাপ লোক হোক কি ভালো লোক - সবার সঙ্গেই সমান আচরণ করে চিকিৎসা মহল। এমনকী কেউ কারাবন্দী হলেও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সুবিধা পাওয়া যাবে। চিকিৎসকরা বলছেন, সমাজে একটি আইনী ব্যবস্থা রয়েছে যা তৈরিই করা হয়েছে অপরাধের দমনের জন্য। সেই সঙ্গে সমাজে একটি স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাও রয়েছে, যার লক্ষ্য হল মানুষের ব্যক্তিগত চরিত্র বা অপরাধের ইতিহাস বিচার বিবেচনা না করেই স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা। এই দুই ব্যবস্থাকে গুলিয়ে দেওয়াটা উচিত নয়।