সংক্ষিপ্ত
এই পবিত্র রমদানের নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন প্রায়ই জানতে চান অনেকে। এই দিনটি কখন শুরু হয়, চাঁদ দেখেই রমজান শুরু হয় কেন, একে চাঁদের রাতও বলা হয় কেন এছাড়া আরও অনেক। মুসলিম ক্যালেন্ডার অনুসারে রমজান নবম মাসে পড়ে। এই পবিত্র মাসটি আসে ঈদুল ফিতরের ঠিক পরে।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র মাহে রমজান। ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসারে এই সময়কে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এই সময় জুড়ে বহু কিছু নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয় মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষদের। তবে এই পবিত্র রমদানের নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন প্রায়ই জানতে চান অনেকে। এই দিনটি কখন শুরু হয়, চাঁদ দেখেই রমজান শুরু হয় কেন, একে চাঁদের রাতও বলা হয় কেন এছাড়া আরও অনেক। মুসলিম ক্যালেন্ডার অনুসারে রমজান নবম মাসে পড়ে। এই পবিত্র মাসটি আসে ঈদুল ফিতরের ঠিক পরে।
অজানা কাহিনি
জানলে অবাক হবেন আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে এই সময় উপবাস করার রীতি চালু হয়। ১২, ১৬ অথবা ২৪ ঘণ্টার জন্য উপবাস করার রীতি রয়েছে। এছাড়াও সপ্তাহে ২ বার টানা ৩৬ ঘন্টা উপবাস করারও রীতি ছিল। মুসলিম সম্প্রদায় রমদানে অর্থাৎ রমজানে রোজা রাখে। সূর্য ওঠার পর থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত খাওয়া বা পান করার কোনও নিয়ম নেই।
সঠিক রমদান বা রমজান কী-
রমদান নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির অবস্থা রয়েছে । কেউ কেউ লেখে রমজান, আবার কেউ বলে রমদান। রমজান সঠিক নাকি রমদান তা নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক হয়। আসলে রমদান একটি আরবি শব্দ। একই সঙ্গে রমজান হলো উর্দু। আরবের লোকেরা একে রমদান বলে, কারণ আরবীতে জাওয়াদ অক্ষরের স্বরবর্ণ হল ইংরেজিতে Z-এর পরিবর্তে DH-এর সম্মিলিত ধ্বনি। তাই একে রমদান বলা হয়।
রমজান কাকে বলে
মুসলিম ক্যালেন্ডারে এই সম্প্রদায়ের পবিত্র মাস রমজান। নবী মুহাম্মদের মতে, যখন পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়, তখন জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। এই মাস একটি মহৎ কারণ। এতে মুসলমানদের রোজা রাখা ছাড়াও কোরআন তেলাওয়াতের পূর্ণ যোগ্যতা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, যত বেশি কুরআন পাঠ করবে, তত বেশি সওয়াব পাবে। বন্দীর গুনাহ তত মাফ হবে। আপনি স্বর্গে যেতে পারেন। উপবাস ৩০ দিন এবং ২৯ দিনও হতে পারে। যাইহোক, এটি চাঁদের উপর নির্ভর করে যে এটি কখন দেখা যাবে। ঈদুল ফিতরের পরদিন ভোর রাতে চাঁদ দেখা যায়। এটাও বিশ্বাস করা হয় যে এই মাসেই মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কুরআন পৃথিবীতে এসেছে।
কিভাবে রোজা রাখতে হয়
আসলে রোজা হল মুসলিম সম্প্রদায়ের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এই পাঁচটি স্তম্ভ হল কলমা, নামাজ, যাকাত, রোজা ও হজ। এটি এই সম্প্রদায়ের সকল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য। সারা মাস রোজা রাখতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তি, ভ্রমণের সময়, গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের রোজা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। যৌন সম্পর্ক স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাক রোজা থাকলে মুখের লালাও যেন ভিতরে না যায়। কোনও খাবার দেখে যদি মুখে জল চলে আসে তাহলে সেটাও ভুল। কারও প্রতি হিংসা করবেন না, গালমন্দ করবেন না, রাগ করবেন না, এই পুরো মাসটি অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকুন। তবেই রোজা পূর্ণ বলে গণ্য বা কবুল হবে।
গ্রীষ্মকালে রোজা রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজ। ভারতে গ্রীষ্মের দিন প্রায় ১৫ ঘন্টা। জুন মাসে রোজা রাখা একটি কঠিন কাজ। সূর্যের তাপ আর তাপের তাপ সহ্য করে রোজাদাররা জলহীন জীবনযাপন করছে। শরীরে জলের ঘাটতি থাকলেও কিছু করতে পারে না। সেহরির জন্য তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। নামাজ পড়তে হয়। সন্ধ্যায় কুরআন পাঠ করতে হয়, এতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে। তাই অনেক সময় ব্যয় হয়।
রোজা রাখলে কি ওজন কমে
যারা রোজা রাখেন তারা সারাদিন কিছুই খান না। এতে ওজন কমে বলে মনে করা হলেও তা নয়। এখানে ঘটে উল্টোটা, অর্থাৎ ওজন তেমন কম হয় না, কারণ সেহরি ও ইফতারে খাবার অনেক ভারী হয়। প্রোটিন এবং চর্বি ওজন কমাতে দেয় না। ক্ষুধায বা পিপাসা লাগে না, এর জন্য নড়াচড়া কম হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কেন তারিখ পরিবর্তন হয় রমজানের মুসলিম ক্যালেন্ডার
চাঁদ অনুযায়ী। এটি একটি বছরে ৩৫৪ দিন আছে। একই সময়ে, ইংরেজি ক্যালেন্ডার ৩৬৫ দিনের, তাই প্রতি বছর ১৩ দিন কমানো হয়। এভাবেই মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিটি উৎসব আসে ১১ দিন আগে। আগে শীতকালে আসা রমজান এখন কয়েক বছর ধরে গ্রীষ্মে আসছে।
শিয়া ও সুন্নির রোজা
শিয়া ও সুন্নি দুই আলাদা গোষ্ঠী হলেও এদের মধ্যে কোনও রোজা রাখা নিয়ে কোনও পার্থক্য বা ভিন্নতা নেই। সেহরি এবং ইফতারের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য রয়েছে। সুন্নি মুসলমানরা সূর্য ডুবে গেলে রোজা ভাঙে, আর শিয়া মুসলমানরা অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। সুন্নি সকালের দশ মিনিট আগে তাদের রোজা ভাঙে।
রোজার উপকারিতা
চিকিৎসকদের দাবি এই রমদানের উপবাস স্বাস্থ্যের পক্ষেও বিভিন্ন দিক থেকে উপকারী। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্য়ম আল জাজিরা-র একটি প্রতিবেদন থেকে এমনই জানা গিয়েছে। চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, দিনের বেলায় উপোস করে থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট উপকারী। কোলেস্টেরল, ওবেসিটি, হার্টের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে এই উপবাস অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া মেন্টাল হেলথ-এর জন্যও মাঝে মধ্যে উপবাস করা স্বাস্থ্যকর।
এছাড়া অনেকটা সময় না খেয়ে থাকলে শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের হতে সুবিধা হয়। কারণ এই সময়টা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমটাই পুরো বিশ্রামে থাকে। নিউট্রিশনিস্ট ক্লেরি মাহি আল জাজিরাকে জানান, শরীরের কোষে বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক পার্টিকল জমে থাকে। উপোশ করায় এই সময়ে কোষগুলি পরিষ্কার হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন ডায়জিস্টিভ সিস্টেমের সঙ্গে মেন্টাল হেলথেরও সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঝে মধ্যে উপোস করলে ব্রেন সেলগুলি সুস্থ থাকে। ব্রেন সেল থেকে ডিপ্রেশন ও অ্যানজাইটি হ্রাস পায়। এছাড়াও পরবর্তী কালে ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও ঠিক করে নিয়ম মাফিক উপোশ করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদের পরিমাণ কমে এবং পেশি শক্তিশালী হয়।
প্রত্যেকের জন্য ফলাফল এক নাও হতে পারে-
উপোশ করার অনেক গুণাগুণ থাকলেও প্রত্যেকের জন্য ফলাফল এক নাও হতে পারে। যাঁদের একেবারে অভ্যাস নেই তাঁদের জন্য উপোশ একই রকম উপকারী নাও হতে পারে। যাঁরা চিকিৎসকের প্রেসক্রাইব করা ওষুধ খান, বা কোনও শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপোশ করা উচিত।
চিকিৎসকের পরামর্শ মানা-
এছাড়া যাঁদের লো ব্লা়ড প্রেশার বা লো ব্লাড সুগারের সমস্যা রয়েছে তাদের উপোশ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাই এই রমজানের সময়ে উপোশ করলেও নিজের শরীরের দিকটাও মাথায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।