সংক্ষিপ্ত
এই দোকানের অতীত বলছে খেদু শ ১৯১৮ সালে লক্ষ্মী নারায়ণ শ অ্যান্ড সন্স প্রতিষ্ঠা করেন। তখন দেশ পরাধীন। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়ছে ভারত। দেশের স্বাধীনতা তখন প্রত্যেক ভারতবাসীর স্বপ্ন।
বয়স ১০৩ বছর। ইতিহাসের পাতা খুঁড়ে জানা যায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু যখন স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়তেন, তখন উত্তর কলকাতার এই খাবারের দোকান ছিল তাঁর অত্যন্ত প্রিয়। তাই বারবারই ঢুঁ মারতেন সেখানে। তাই আজও লক্ষ্মী নারায়ণ শ অ্যান্ড সন্সকে সবাই 'নেতাজির দোকান' বলে চেনে। ১৫৮ বিধান সরণী-র বিখ্যাত দোকান লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স। আজও পরিচিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দোকান বলে।
এই দোকানের অতীত বলছে খেদু শ ১৯১৮ সালে লক্ষ্মী নারায়ণ শ অ্যান্ড সন্স প্রতিষ্ঠা করেন। তখন দেশ পরাধীন। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়ছে ভারত। দেশের স্বাধীনতা তখন প্রত্যেক ভারতবাসীর স্বপ্ন। সেই তখন থেকেই কলকাতার মানুষকে তেলেভাজার স্বাদ চেনাচ্ছেন এঁনারা।
এই দোকানের পরতে পরতে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের কলকাতার স্বাদ। সেই সময়ের কলকাতা ছিল মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী ও বিপ্লবীদের কেন্দ্রস্থল। এবং যে অনেকগুলি জিনিসগুলি তাদের একত্রিত করেছিল তার মধ্যে একটি ছিল চা এবং তেলেভাজা। সেই প্রথা এখনও শহরে চলছে।
আরও পড়ুন - স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিনামূল্যে দেশের এই ঐতিহাসিক স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারেন
ভারত মায়ের বীর সন্তান নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু কিন্তু এই দোকানের ভাঁড়ের চা ও তেলেভাজা খাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না মোটেই। লক্ষ্মী নারায়ণ শ অ্যান্ড সন্সের মালিক কেষ্ট কুমার গুপ্ত (শ) এর জানান যে কীভাবে তাঁর দাদু নেতাজির সাথে দেখা করেছিলেন এবং একটি দারুণ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন যা ১০৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে।
কেষ্ট কুমার গুপ্ত (শ) বলেন "আমার দাদু যখন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সভা করতেন তখন তাঁকে টিফিন সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি তাদের খবরের কাগজের মোড়কে ভাত, গরম ভাজা, সবুজ লঙ্কা এবং চা পরিবেশন করতেন। এই চা ছিল মাটির কাপে চা বা কুলহাদ। এক কথায় কলকাতার বিখ্যাত মাটির ভাঁড়ের চা।"
কেষ্ট কুমার গুপ্ত আরও বলেন "এইভাবে আমার দাদু একবার নেতাজির সাথে দেখা করেছিলেন এবং তাকে একই চা এবং ভাজা পরিবেশন করেছিলেন। নেতাজি যখন স্কটিশ চার্চে পড়াশোনা করছিলেন, তখন তিনি আমাদের দোকানে ভাজা এবং চা খেতে যেতেন। এবং তখনই আমার দাদুর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হয়।"
১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে, খেদু শ তার সমস্ত বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের ভাজা বিতরণ করেছিলেন এবং তাদের বলেছিলেন যে এটি সেই বীর সন্তানের জন্মদিন উপলক্ষে। নেতাজীর জন্মদিনে বিনামূল্যে তেলেভাজা বিতরণ করার সেই ঐতিহ্য আজও অব্যাহত রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে কেষ্ট কুমার গুপ্ত বলেন। "১৯৪৮ সালের ২৩শে জানুয়ারী আমরা যখন স্বাধীনতা পেয়ে গিয়েছি, তখন আমরা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বোর্ড লাগিয়েছিলাম এবং আমাদের দোকানে তৈরি ভাজা সবার মধ্যে বিতরণ করেছিলাম। দুটি ভাজা শিশুদের জন্য এবং চারটি বড়দের জন্য।"
আরও পড়ুন - দেশের স্বাধীনতার জন্য নীরবে সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন এই মহিয়সীরা, চিনে নিন সেই নেপথ্য নারীদের
প্রতি বছরই ২৩শে জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন তাঁরা পালন করেন সবাইকে বিনামূল্যে তেলেভাজা খাইয়ে। সকাল ৮টা থেকে ভাজা পরিবেশন করা হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। মেনুতে থাকে - আলুর চপ, ফুলুরি, পেঁয়াজি এবং ফুলকপির চপ [আলু, মুসুর ডাল, পেঁয়াজ এবং ফুলকপির ভাজা]।
এই অমোঘ আকর্ষণ কোনও বাঙালিই ফেলতে পারে না। তাই আজও বড় বড় ফুড জয়েন্টগুলোকে টেক্কা দিয়ে রমরমিয়ে ও তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ১০৩ বছরের যুবক নেতাজির দোকান লক্ষ্মী নারায়ণ শ অ্যান্ড সন্স।