UK-র শ্রমবাজারে আগামী দশকে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর এডুকেশনাল রিসার্চের এক সাম্প্রতিক রিপোর্ট। বলছে, AI এবং অটোমেশনের দ্রুত প্রসারের ফলে দেশটিতে প্রায় ৩০ লাখ লো-স্কিল চাকরি ২০৩৫ সালের মধ্যেই পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত অগ্রগতি যে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের ধরন বদলে দিচ্ছে, তা নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে আগামী দশ বছরে যে ধরনের অস্থিরতার ইঙ্গিত দিয়েছে, তা বিশেষজ্ঞদেরও চিন্তায় ফেলেছে। ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর এডুকেশনাল রিসার্চের (NFER) রিপোর্ট বলছে—AI এবং অটোমেশন প্রযুক্তির বিস্ফোরণমুখী বৃদ্ধির ফলে দেশজুড়ে প্রায় ৩০ লক্ষ কম দক্ষতার চাকরি ২০৩৫ সালের মধ্যেই পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। গত ২৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত রিপোর্টে NFER জানায়, অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)–র বিস্তারের ফলে আগামী দশ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজার বড় ধরনের রূপান্তরের মুখোমুখি হতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ (≈ ৩ মিলিয়ন) “লো-স্কিল” চাকরি geheel বা আংশিকভাবে বিলুপ্তির শিকার হতে পারে। এই ঝুঁকিতে পড়া চাকরির মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক সহকারী, গুদামের কর্মী, মেশিন অপারেটর, বিক্রয় বা গ্রাহক পরিষেবা, সাধারণ অফিস সহকারী, ট্রেড ও রুটিন ম্যানুয়াল কাজ — প্রধানত, যেসব কাজ নিয়মিত ও পুনরাবৃত্তিমূলক, AI বা অটোমেশনের দ্বারা সহজেই প্রতিস্থাপিত হতে পারে।
কেন এই চাকরিগুলোর ভবিষ্যৎ ভয়ঙ্কর?
NFER–র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিক্রয় এবং কাস্টমার-সার্ভিস ক্ষেত্রে ২০২১ সালের পর থেকে কাজের সংখ্যা প্রায় ১০ % কমেছে, আর প্ল্যান্ট / মেশিন অপারেটর পজিশনেও ৫ % হ্রাস পেয়েছে।
AI এবং অটোমেশন বুঝে নিচ্ছে সেই সব টাস্ক যেগুলো রুটিন বা নিয়মভিত্তিক; অফিস-কাজ, তথ্য প্রবেশ, সাধারণ কাজ — যেগুলোর জন্য মানুষ আগে প্রয়োজন হত।
কিন্তু যারা এই কাজগুলো করতেন — তাদের জন্য নতুন যেকোনো পেশায় যেতে হলে বা AI-ভিত্তিক কাজ করতে হলে প্রয়োজন হবে নতুন দক্ষতা, যা সবাই পাবে না। NFER সতর্ক করে বলেছে, “স্কিল–ফাঁক” যদি বেড়ে যায়, তাহলে শুধু চাকরি হারানোর ক্ষতি হবে না, বরং সামাজিক ন্যায্যতায় বড় ধরণের বৈষম্যও তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে — নতুন সুযোগ?
সবকিছু নষ্ট হবে না। NFER–র মতে, যুক্তরাজ্যের পুরো অর্থনৈতিক বাজার ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ২.৩ মিলিয়ন নতুন চাকরির সৃষ্টি হতে পারে।
তবে এই সুযোগগুলো যেভাবে বিতরণ হবে, তাতে বৈষম্য থেকে যেতে পারে। নতুন উচ্চ-দক্ষতার চাকরিগুলো হতে পারে প্রযুক্তি, পেশাদারি, প্রকৌশল, স্বাস্থ্য, আইন বা বিশেষ পেশাগত কাজ—যেখানে AI সরাসরি প্রতিস্থাপন নয়, AI–কে কাজে লাগিয়ে মানুষকে আরও দক্ষ করতে হবে।
একই সঙ্গে, প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্স অর্থাৎ PwC–র সাম্প্রতিক রিপোর্ট দেখায়, যারা AI-দক্ষতা রাখে, তাদের জন্য বেতনের সুবিধা এবং চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ইউনাইটেড কিংডোমে AI-সম্পর্কিত কাজের জন্য বিজ্ঞাপন পোস্টিং ২০১২–২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ৩.৬ গুণ বেড়েছে।
শুধু চাকরি নয় — স্কিল “রিলেভ্যান্স” বদলাচ্ছে
গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতের চাকরির মূল যোগ্যতা হবে “মৌলিক কর্মদক্ষতা” — যেমন সৃজনশীল চিন্তা, সমস্যা–সমাধান, তথ্য বিশ্লেষণ, যোগাযোগ, দলগত কাজ, পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ।
মানে, ঐতিহ্যগত “লো-স্কিল” কাজগুলো বন্ধ হলেও — নতুন হলেও কাজ হবে; তবে সেটি হবে একদম অন্য ধরনের, যেখানে রুটিন কম, রূপান্তর বেশি। যারা নতুন ধরনের দক্ষতায় নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে না, তাদের জন্য ঝুঁকি থাকবে বৃহত্তর।
একাধিক গবেষণা–চ্যানেল দেখাচ্ছে একই দিক
কেবল NFER নয়। অন্য গবেষণাও AI–র প্রভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জানাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত একটি ব্যাপক বিশ্লেষণ মাপে (task-based index) দেখায়, এমন অনেক চাকরি রয়েছে যেগুলোর কাজের বড় অংশ AI–দ্বারা ২৫ % বা তার বেশি দ্রুত করা যায় — অর্থাৎ শুধুই সময় এবং শ্রম নয়, পুরো কাজই হয়তো মেশিন করতে পারবে।
আরেকটি বিশ্লেষণ দেখায়, এমন সব শিল্পক্ষেত্রে (যেহেতু AI প্রয়োজ্য) — যেখানে তথ্যপ্রক্রিয়া, সিদ্ধান্তগ্রহণ বা পুনরাবৃত্তি কাজ আছে — পড়বে বড় পরিবর্তন। সেক্ষেত্রে, পুরনো কাজ চলে যাবে, নতুন ধরনের কাজ তৈরি হবে।
যদি যুক্তরাজ্য বা অন্য দেশগুলো সময় মতো রি-স্কিলিং (পুনঃদক্ষতা অর্জন), শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব না দেয় — তাহলে AI-র দাপটে সত্যিই লাখো মানুষের কাজ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যদি দক্ষতা, শিক্ষা ও নীতি–পরিকাঠামো তৈরি করা যায় — তবে AI শুধু চাকরি না কেটে, বরং নতুন কাজ, নতুন সুযোগ, এবং নতুন দক্ষতার বাজার তৈরি করবে। বর্তমানে আমরা দুই রাস্তার মোড়ার সামনে দাঁড়িয়ে—এক দিকে চাকরিহীনতা ও অস্থিরতা, অন্য দিকে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে উন্নতির সম্ভাবনা। সঠিক পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আমরা কোন পথে এগোব। তাই প্রস্তুত না হলে প্রতিকূল সময় আসবে।


