সংক্ষিপ্ত

প্রয়াগরাজে গঙ্গা-যমুনার পবিত্রতা রক্ষায় ৫০০ গঙ্গা প্রহরী নিয়োজিত। মহাকুম্ভ ২০২৫-এ এই প্রহরীরা নদীর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবেন এবং তীর্থযাত্রীদের সাহায্য করবেন। যোগী সরকার তাদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উৎসাহিত করছে।

প্রয়াগরাজে গঙ্গা এবং যমুনার সঙ্গম কেবল দুটি নদীর নয়, বরং সনাতন ধর্মের কোটি কোটি মানুষের আস্থারও সঙ্গম। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে আসা লক্ষ কোটি মানুষ এখানকার স্বচ্ছ ও নির্মল জলে আস্থার ডুব দিয়ে সনাতন পরম্পরা পালন করেন। ৫০০ গঙ্গা প্রহরী দিনরাত দুটি নদীর স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। মহাকুম্ভ ২০২৫-এর সময় যখন কোটি কোটি মানুষ সঙ্গমে পবিত্র স্নান করবেন, তখনও এই গঙ্গা প্রহরীরাই নদীর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য প্রহরীর ভূমিকা পালন করবেন। যোগী সরকার তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে উৎসাহিত করছে।

শিফটে করবেন কাজ

প্রয়াগরাজে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি ঘাট রয়েছে। ঘাটের পাশাপাশি গঙ্গা ও যমুনা নদীর স্বচ্ছতা বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে, প্রতিটি ঘাটে নিয়োজিত গঙ্গা প্রহরীরা এ ব্যাপারে আশ্বস্ত। তারা নিরন্তর নদী এবং ঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন এবং একইসাথে তীর্থযাত্রীদেরও নদীর স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আবেদন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘাটে ১৫ থেকে ২০ জন গঙ্গা প্রহরী গঙ্গা এবং যমুনা উভয় নদীর স্বচ্ছতা বজায় রাখতে দিনরাত কাজ করছেন। মহাকুম্ভের সময় তারা শিফটে কাজ করবেন। সারা দেশ থেকে বাছাই করা ২০০-র বেশি গঙ্গা প্রহরীকে এখানে আনা হচ্ছে, যাতে গঙ্গা ও যমুনার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে জনবলের কোনও অভাব না হয়।

জলজ প্রাণীর হচ্ছে সংরক্ষণ

প্রয়াগরাজে নমামি গঙ্গে প্রকল্পের আওতায় বন্যপ্রাণী সংস্থার মাধ্যমে এই গঙ্গা প্রহরীরা নিয়মিত নদী এবং ঘাটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি জলজ প্রাণী সংরক্ষণেও নিয়োজিত। জলজ প্রকল্পে সহকারী সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালনকারী চন্দ্র কুমার নিষাদের মতে, গঙ্গা ও যমুনা নদীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ স্নান করেন, কিন্তু যদি জল স্বচ্ছ না হয় তবে তাদের आস্থায় আঘাত লাগে। আমাদের দল দিনরাত ঘাটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালায়। ঘাটের পাশাপাশি নদীতে যেসব বর্জ্য পদার্থ থাকে, সেগুলোও জাল দিয়ে তুলে নদীকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হয়। 

স্থানীয়দের বানানো হচ্ছে নদীর রক্ষক

তিনি জানান, দ্বৈত ইঞ্জিন সরকার নদীর স্বচ্ছতা নিয়ে ভালো কাজ করছে। নমামি গঙ্গে প্রকল্পের আওতায় যে সবচেয়ে ভালো কাজ হয়েছে তা হলো নদীর সুরক্ষা এবং স্বচ্ছতার দায়িত্ব স্থানীয়দের হাতে দেওয়া হয়েছে। যাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল জলজ প্রাণী শিকার, তারাই এখন তাদের রক্ষক হয়ে উঠেছেন। এর ফলে নদীতে কচ্ছপ, ডলফিন, মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, যদি জলজ প্রাণীদের বাঁচানো যায় তবে নদী কখনও নোংরা হবে না, কারণ এই প্রাণীরা নদী পরিষ্কার করার কাজ করে।

আয়ের উৎসের সাথে যুক্ত করছে সরকার

বন বিভাগের আইটি প্রধান আলোক কুমার পান্ডে জানান, যোগী সরকার স্থানীয়দের জলজ প্রাণী শিকারের বদলে অন্যান্য আয়ের উৎসের সাথে যুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে জলজ প্রাণী সংরক্ষণ নিশ্চিত হয়েছে। অর্থ গঙ্গা প্রকল্প (জলজ প্রকল্প)-এর আওতায় স্থানীয় মহিলাদের সেলাই, বিউটি পার্লার, ধূপকাঠি, পাটের ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১০০ থেকে ১৫০ গ্রামের ৭০০-র বেশি মহিলাকে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।

মানুষের হবেন সহায়ক

চন্দ্র কুমার নিষাদ জানান, মহাকুম্ভের জন্য যোগী সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ মহাকুম্ভের পাশাপাশি তাদের দল মানুষের সাহায্যও করবে। মানুষকে স্নান করাতে সাহায্য করার সাথে সাথে যদি ঘাটে কেউ হারিয়ে যান তবে তাকে হারানো ব্যক্তি কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে। সুরক্ষাকর্মীদের সাথে আমাদের দলও ঘাটে স্নানার্থীদের উপর নজর রাখবে এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের সাহায্য এবং তাদের জীবন রক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকবে।