অমিত শাহের দাবি দেশের সকলেই চাইছেন নাগরিকত্ব আইন কিন্তু উত্তর পূর্বের দুই বিজেপি শাসিত রাজ্যে আগুন জ্বলছে অসমের ১০ জেলায় বন্ধ করা হল ইন্টারনেট গুয়াহাটি-তে জারি হল কারফিউ 

লোকসভা ও রাজ্যসভায় সমানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করছেন দেশের ১৩০ কোটি মানুষ চাইছেন নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৯ আইনে পরিণত হোক। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি তাঁর কথাকে সমর্থন করছে না। বুধবার তো একেবারে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল উত্তর-পূর্বের দুই বিজেপি শাসিত রাজ্য অসম ও ত্রিপুরা। যার জেরে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে অসমের ১০ টি জেলায় ২৪ ঘন্টার জন্য মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হল। রাজধানী গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি করতে হল কারফিউও। পরিস্থিতির মোকাবিলায় দুই রাজ্যেই নামানো হচ্ছে সেনাও।

আরও পড়ুন - '৪৭-এর পর আরও এক স্বাধীনতার রাত, সদ্যজাত পাক হিন্দুর নাম হল 'নাগরিকতা'

দুর্বৃত্তরা আদিবাসী জনজাতি ও অনাদিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের ভূয়ো খবর ছড়াচ্ছে। এই দাবি করে মঙ্গলবার দুপুর ২টো থেকে উত্তরপূর্বের আরেক বিজেপি শাসিত রাজ্য ত্রিপুরায় ৪৮ ঘন্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছিল বিপ্লব দেব সরকার। তারপর আরও একটি রাজ্য এই একই পথে হাঁটল। এদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে অসম সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে লখিমপুর, তিনসুকিয়া, ধেমাজি, ডিব্রুগড়, চরাইদেও, শিবসাগর, জোরহাট, গোলাঘাট, কামরূপ (মেট্রো) এবং কামরূপ জেলায়।

Scroll to load tweet…

অসম রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাগ) কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণ এই বিষয়ে এদিন বিকালে একটি নোটিশ জারি করেন। তাতে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব বিল বিরোধী প্রতিবাদ আরও বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাতে করে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে। এর ফলে জনসুরক্ষা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

ওই নোটিশে আরও বলা হয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদির মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। এছাড়া এমন কিছু ছবি, ভিডিও এবং টেক্সট মেসেজে এমন কিছু তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হতে পারে যা মানুষের আবেগ-কে আঘাত করে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলতে পারে। তাতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আশঙ্কাতেই আপাতত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ডিব্রুগড় জেলার ম্যাজিস্ট্রেট বুধবার বিকাল ৪ টে থেকে মদ বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। 'জনসাধারণের শান্তি রক্ষার জন্য'ই এই জানিয়েছেন জেলাশাসক।

Scroll to load tweet…

বুধবার সকাল থেকেই অসমের বিভিন্ন জেলায় নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। গোটা রাজ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অসম অ্যাকর্ড স্বাক্ষরের আগে ছয় বছর ধরে অসমে যে ছাত্র আন্দোলন চলেছিল, তারপরে আর কখনও এতটা খারাপ পরিস্থিতি দেখা যায়নি বলে জানিয়ছে স্থানীয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার উত্তরপূর্বের ছাত্র সংগঠনগুলি যৌথভাবে ১১ ঘন্টার বন্ধের ডাক দিয়েছিল। এদিন কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের ডাকে নয়, সতস্ফুর্তভাবেই মানুষ রাস্তায় নেমে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই বিল আনয়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এমনকী রাজ্যের সচিবালয়ের সামনেও তীব্রতর হয়ে ওঠে নাগরিকত্ব বিল বিরোধী প্রতিবাদ। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায় প্রতিবাদীদের। শেষ পর্যন্ত কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের সরানোর চেষ্টা করে পুলিশ। তাতেও অব্শ্য বিশেষ কাজ হয়নি। পাল্টা লড়াই চালান বিক্ষোভকারীরা।

Scroll to load tweet…

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। দিসপুরে জনতা ভবনের সামনে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। অসমের বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতার দাবি রাজ্যের সচিবালয়ের সামনে পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে বেশ বহু আন্দোলনকারী গুরুতর আহত হয়েছেন।

অসমের কোনও পদস্থ পুলিশ আধিকারিকই এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। তবে বেসকারি মতে জানা গিয়েছে, বুধবার গুয়াহাটি, ডিব্রুগড়, জোরহাটের মতো রাজ্যের বেশ কিছু স্থান থেকে অন্তত কয়েকশো প্রতিবাদীকে আটক করেছে। একইসঙ্গে এদিন অসম ও ত্রিপুরার সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রের কাছে সাহায্য চায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ত্রিপুরায় ইতিমধ্য়েই দুই কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অসমের রাস্তায় এখনও সেনা না নামলেও, তাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে তাদের ব্যবহার করা হবে।