সংক্ষিপ্ত
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কেরর জের। স্বামী আর শাশুড়িকে হত্যা করে গৃহবধূ ফেলে এল ভিনরাজ্যে। সঙ্গে ছিল গৃহবধূর দুই প্রেমিক। তিনজনেই পুলিশের জালে।
শাশুড়ি আর স্বামীকে হত্যা করে দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে পলিথিনের ব্যাগে মুড়ে নিজের রাজ্যের সীমানা পার করে অন্যরাজ্যে ফেলে দিয়ে এল গৃহবধূ। এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন তারই ঘনিষ্ট দুই বন্ধু। পুলিশের কথায় অবশ্য গৃহবধূর দুই প্রেমিক। যাদের সঙ্গে তার রীতিমত ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। নৃশংস এই খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রতিবেশী অসমে। আর দুটি দেহ ফেলা হয়েছে প্রতিবেশী মেঘালয়তে।
৮ মাস আগে খুন
অসম পুলিশ জানিয়েছে গত বছর জুলাই বা অগাস্ট মাসে এই খুনের ঘটনা ঘটেছিল। রবিবার খাসি পাহাড়ের চেরাপুঞ্জির কাছে গৃহবধূর শাশুড়ির শরীরের কয়েকটি অংশ উদ্ধার হয়। তারপরই জট খুলতে থাকে। গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বারাহ পিটিআইকে জানিয়েছেন, গত বছর ২৬ জুলাই প্রথমে শাশুড়িতে হত্যা করা হয়েছিল। স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল ১৭ অগাস্ট। খুনের ঘটনায় গৃহবধূ ও তার দুই ঘনিষ্ট বান্ধবীকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জেরা করা হচ্ছে।
নিহত ও হত্যাকারীর পরিচয়
অসম পুলিশ জানিয়েছে, গৃহবধূ ও এক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে গুয়াহাটি থেকে। তৃতীয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিন সুকিয়া থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত স্বামী ৩২ বছরের অমরজ্যোতি দে, শাশুড়ি শঙ্করী দে ৬২ বছর বয়স। গৃহবধূই দুজনে খুন করে গত ২৯ অগাস্ট দুজনের নামে নিখোঁজ ডায়েরি করে। খুনের অভিযুক্ত স্ত্রীর নাম বন্দনা কালিতা। তার বয়স ৩২ বছর। তার দুই পুরুষ বন্ধু হল ৩২ বছরের ধন্তি ডেকা ও ২৭ বছরের অরূপ ডেকা।
দম্পত্য জীবন
পুলিশ জানিয়েছেন ১২ বছর আগে বন্দনা পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল অমরজ্যোতিকে। তবে পরবর্তীকালে অমরজ্যোতির মা তাদের বিয়ে মেনে নিয়েছিল। অমরজ্যোতির তেমন কোনও আয় ছিল না। কিন্তু ছেলে ও পুত্রবধূকে তিনি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন। তবে বর্তমানে দম্পতির সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল না। পারিবারিক অশান্ত ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। পরিবারের আর্থিক সংকট দূর করতে বন্দনা একটি ফিটনেস জিমে কাজ করতেন। প্রথমে শাশুড়ির সমর্থন থাকলেও পরে তিনি পিছিয়ে আসেন বন্দনার ব্যবহারের কারণে।
বিবাদের সূত্রপাত
সেখান থেকেই বিবাদের সূত্রপাত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান বন্দনার অনেক পুরুষ বন্ধু হয়েছিল। তাদের বাড়িতে আসাযাওয়াও ছিল। যা অমরজ্যোতি ও তার মা মেনে নিতে পারেনি। যদিও বন্দনার পাল্টা দাবি স্বামী নেশাগ্রস্ত ছিলেন। আর অনেক বান্ধবী ছিল। কিন্তু বন্দনার কাজ মেনে নেয়নি স্বামী আর শাশুড়ি। তাই তাদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্যই বন্দনা দুজনকে হত্যা করে।
শাশুড়িকে খুন
পুলিশ সূত্রের খবর গত বছর ২৬ জুলাই বিকেল ৫টায় শাশুড়িকে বাড়িতেই মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর দুই বন্ধুর সহযোগিতায় দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে। একটি গাড়িতে করে দেহের টুকরো মেঘালয়ে ফেলে দিয়ে আসে। পরের দিন সকাল ১০টার মধ্যেই তিন জন অসম ফিরে এসেছিল।
স্বামীকে খুন
১৭ অগাস্ট বন্দনা দুই বন্ধুর সাহায্য অমরজ্যোতিকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। তারপর দেহটি পাঁচটি টুকরো করে। তারপর সেই দেহাংশও আগের মত মেঘালয়ে ফেলে দিয়ে আসে।
জট খুলল
অগাস্ট মাসে বন্দনা স্বামী ও শাশুড়ির নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেছিল। কিন্তু তারপর নভেম্বর মাসে অমরজ্যোতির ভাইও নিখোঁজ ডায়েরি করে। সেই সময়ই বন্দনার দিকে সন্দেহ যায় পুলিশের। কারণ শাশুড়ি নিখোঁজ হলেও তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিকবার টাকা তোলা হয়েছিল। যা অসম থেকেই তোলা হয়েছিল। তারপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তাতেই সামনে আসে ভয়ঙ্কর খুনের ঘটনা। তবে বন্দনাকে জেরা করতেই সবকিছু সামনে আসে। উদ্ধার হয়েছে শাশুড়ির এটিএম কার্ড, শঙ্করীর দে-র কম্বল জড়ানো দেহাংশ। গাড়িটিও উদ্ধার হয়েছে।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক
দুই বন্ধুর সঙ্গে বন্দনার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। তার জেরেই স্বামী আর শাশুড়িতে সে হত্যা করে বলে পুলিশের অনুমান। পুলিশ জানিয়েছে দুজনের সঙ্গেই ঘনিষ্ট ছিল বন্দনা। একটি ফরেনসিক দল গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।