সংক্ষিপ্ত
কমলা ভাসিনের নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়েছে ভারতের নারী আন্দোলন। দেশবাসী তাঁকে ফেমিনিস্ট হিবেসেই চেনে। এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সমাজকর্মী ও লেখিকা।
"এক বাবা (Father) একবার তাঁর মেয়েকে (Daughter) জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তুমি পড়ছ (Study) কেন? আমার অনেক ছেলে (Son) রয়েছে তারা পড়তে পারবে। মেয়ে হয়ে তুমি কেন পড়াশোনা করছ? বাবার প্রশ্নের উত্তরে সেই মেয়ে জানায়, আমার স্বপ্নকে (Dream) উড়ান দেওয়ার জন্য আমাকে পড়তে হবে। জ্ঞান নতুন দিশা দেখায় তার জন্য আমাকে পড়তে হবে। যুদ্ধের জন্য আমাকে লড়াই করতেই হবে, তার জন্য আমাতে পড়তে হবে। আমি একজন মেয়ে, সেই কারণে আমাকে পড়তে হবে..."। এই ধরনের সাবলীল অথচ ক্ষুরধার লেখা পড়ার সুযোগ আর দেশবাসীর হবে না। কারণ মহিলাদের জন্য লড়াই করতে করতে অবশেষে মারণ রোগের কাছে হার মেনেছেন তিনি। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর হার মেনে ৭৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন কমলা ভাসিন (Kamla Bhasin)। মহিলাদের অধিকার রক্ষা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী (Feminist Activist) ছিলেন তিনি।
কমলা ভাসিনের নেতৃত্বে শক্তিশালী হয়েছে ভারতের নারী আন্দোলন। দেশবাসী তাঁকে ফেমিনিস্ট (Feminist) হিবেসেই চেনে। এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন সমাজকর্মী ও লেখিকা। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। বেশ অনেক দিন ধরেই ভুগছিলেন। বহুদিন ধরে এই মারণ রোগের সঙ্গে চলছিল তাঁর লড়াই। কিন্তু, শেষরক্ষা আর হল না। অবশেষে হার মানলেন তিনি। শনিবার ভোর রাতে দিল্লিতে (Delhi) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (Passes Away) কমলা ভাসিন।
ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ায় ‘ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং’ আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা কমলা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে লড়াই চালিয়েছিলেন লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার লক্ষ্যে। তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন অ্যাক্টিভিস্ট কবিতা শ্রীবাস্তব। টুইটারে তিনি লেখেন, "আমাদের প্রিয় বন্ধু কমলা ভাসিন শনিবার ভোর রাত ৩টে নাগাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। এই ঘটনা ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নারী আন্দোলনের জন্য একটা বড় ধাক্কা। হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যে জীবনকে উদযাপন করেছ। কমলা তুমি সব সময় আমাদের হৃদয়ে থাকবে।"
১৯৭০ সাল থেকে ভারত তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম নারী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কমলা ভাসিন। ২০০২ সালে জাতিসংঘের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর পুরোদমে নারীবাদী আন্দোলনের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। যার নাম দেন 'সঙ্গত' (Sangat)। অবহেলিত উপজাতি ও প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু, বিভিন্ন জায়গার ও বিভিন্ন ভাষার মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ভাষা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। সেই কারণে নারী অধিকার সম্পর্কে মহিলাদের সচেতন করতে নাটক, গান ও ছবি আঁকার ভাষা বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন-ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি রাজ্যে, মোকাবিলা করতে আগে থেকেই তৎপর লালবাজার
আরও পড়ুন- কাপড়কাচার নির্দেশ দিয়ে কি বিপাকে বিচারপতি, কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ আদালতের
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভাসিন বলেছিলেন, "আমরা পাশ্চাত্যের ফেমিনিস্ট থিওরি পড়ে ফেমিনিস্ট হইনি। আমরা ফেমিনিস্ট হয়েছি বাস্তব পরিস্থিতিকে দেখে। বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের যেভাবে হেনস্থা করা হয়, পণ চাওয়া হয়, তাঁদের উপর অত্যাচার করা হয় এবং সমাজ যেভাবে তাঁদের সঙ্গে ব্যবহার করে সেগুলিকে দেখেই আমরা ফেমিনিস্ট হয়েছি।"
পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে বদলানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন ভাসিন। সেই কারণে নিজের আনন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। জেন্ডার থিওরি, নারীবাদ ও পিতৃতন্ত্র নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন তিনি। যা আজ বেশ জনপ্রিয়। তাঁর চিন্তাভাবনা ছাপ ফেলেছে বহু মানুষের মনে। জীবনে বহু প্রতিকূল অবস্থার সাক্ষী থেকেছেন তিনি। কিন্তু, কখনও হার মানেনি, চালিয়ে গিয়েছেন লড়াই। তবে মারণ রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে আর জিততে পারলেন না বছর ৭৫-এর এই ফেমিনিস্ট। অবশেষে প্রিয়জনদের ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন তিনি।