সংক্ষিপ্ত
- নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার
- কিন্তু ক্রমে দুর্বল হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি
- তার সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ভারতীয় শিল্প মহল
- অবস্থা সামলাতে সব ক্ষেত্রেই হতে পারে বিপুল ছাঁটাই
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে, পরিণত করা। কিন্তু তাঁর দেখানো স্বপ্ন ও বাস্তবের মধ্যে বিপুল ফারাক দেখা যাচ্ছে। ক্রমে দুর্বল হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে পার্লে-র তো বিস্কুট তৈরি সংস্থা থেকে শুরু করে মারুতির মতো গাড়ি তৈরির সংস্থা - সব ক্ষেত্রেই বিপুল পরিমাণে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের বিস্কুট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির মধ্য়ে বলা যেতে পারে একটি আইকনিক সংস্থা পার্লে। পার্লে জি বিস্কুটের নাম শোনেনি এমন লোক ভারতে নেই বললেই চলে। সম্প্রতি তারা ঘোষণা করেছে অর্থনৈতিক মন্দা যদি এভাবেই চলে তাহলে অদূর ভবিষ্য়তেই তাদের প্রায় দশ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে হতে পারে। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মোদী সরকারের বিস্কুটের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি আরোপ করায় তারা পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে পড়েছে তাদের বিক্রি।
আরও পড়ুন - আর কয়েক বছরে জলশূন্য হবে দেশের বহু অঞ্চল, দাওয়াই দিলেন প্ৰধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন - আগামী বছরেই দেশ জুড়ে দেখা দিতে পারে তীব্র জলসংকট
আরও পড়ুন - পেট্রোল-ডিজেল মুছে গিয়ে চলবে শুধুই বিদ্যুত-চালিত গাড়ি! বড় ছাড় দেওয়া হল জিএসটি-তে
সংস্থার ক্যাটেগরি হেড মায়াঙ্ক শাহ, ১০০ টাকা প্রতি কেজি ও তার থেকে কম মূল্যের বিস্কুটগুলির ক্ষেত্রে জিএসটির হার কমানোর আবেদন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন এই বিস্কুটগুলি সাধারণত ৫টাকা মূল্যের প্যাকেটে বিক্রি হয়। ইতিমধ্য়েই সেই প্যাকেটের ওজন কমিয়ে তারা পরোক্ষে মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়েছেন। কিন্তু তাতেও জিএসটির ধাক্কা সামলাতে পারছেন না। সরকার জিএসটি না কমালে তাদের ছাঁটাইয়ের রাস্তায় হাঁটা ছাড়া গতি নেই।
একই সুর সোনা গিয়েছে আরেক নামী বিস্কুট ডেয়ারি পণ্যের সংস্থা ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুণ বেরি-র গলাতেও। তিনি জানিয়েছেন এখন একচটি ৫ টাকার বিস্কুটের প্যাকেচট কিনতেও দ্বিধা করেছেন ভারতীয়রা। এর থেকেই অর্থনীতির বেহাল দশাটা বোঝা যায়।
শুধু বিস্কুট প্রস্তুতকারক সংস্থা বলে নয়, বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রেই ছবিটা মোটামুটি একই। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সম্ভবত মোটর গাড়ি শিল্পের। মোটর সিল্পের এক সমীক্ষা জানিয়েছে গত কয়েক বছরে যেভাবে কমেছে গাড়ির বিক্রি, সেইরকমটা গত কুড়ি বছরে কখনও দেখা যায়নি। সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে বড় গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া গাড়ি শিল্পে মন্দার ধাক্কা সামলাতে ৩০০০ অস্থায়ী কর্মী ছাঁটাই করেছে। তারা অবশ্য স্থায়ী কর্মীদের ক্ষেত্রে কোনও ছাঁটাই হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে। এছাড়া, ভবিষ্যতে বিক্রি বাড়লে অস্থায়ী কর্মীদেরও ফের নিয়োগ করা হবে বল জানিয়েছে তারা।
একই ভাবে আরেক গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রাও তাদের ১৫০০ অস্থায়ী কর্মীকে ছাঁটাই করেছে এবং জানিয়েছে অবস্থা এইভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আরও কর্মী ছাঁটাই করতে হবে। শুধু তাই নয় এই বিষয়ে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার বলেছেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই চারপ কাটাতে সরকারের পক্ষে যা যা করা সম্ভব করতে হবে। তিনি বলেছেন প্রয়োজনে কিছু অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাঁর মতে স্বাধীন ভারতে গত ৭০ বছরে এইরকম চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা যায়নি। বেসরকারি কোনও সংস্থাই আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
তিনি এই অবস্থার জন্য ইউপিএ সরকারকেই দায়ী করেছেন। তাঁর মতে ২০০৯ ধথেকে ২০১৪ সালের মধ্য়ে ব্যাঙ্কগুলি থেকে বেহিসেবি ঋণ দানের ফলেই নন-পারফর্মিং অ্যাসেট বা এনপিএ বেড়েছে। যার প্রবাব এখন টের পাওযয়া যাচ্ছে। এর কোনও সহজ সমাধান নেই। তবে তার দাবি এই অবস্থাটা কাটাতে ইতিমধ্য়েই কেন্দ্রীয় বাজেটে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ শিল্প মহলের কাছে ঠিক কত পরিমাণ ছাঁটাই তারা করতে বাধ্য হয়েছে তার হিসেব চেয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের আতঙ্ক ছড়াতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু পার্লে, ব্রিটানিয়া, মারুতি, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার মতো সংস্থা যদি এই বিপুল পরিমাণে ছাঁটাই-এর রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হয়, তাহলে সকল ক্ষেত্রের কর্মীদের মধ্য়েই কাজ হারানোর শিরশিরানি আসতে বাধ্য।