সংক্ষিপ্ত
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু-র রাষ্ট্র গঠনের যে ভাবনা ছিল তা চমকিত করেছিল তৎকালীন সময়ের বহু রাষ্ট্রনায়ককে। দেশনায়ক সম্মান নেতাজি সুভাষকে দিয়েছিল আম জনতা। নেতাজি পরিষ্কার করেই বলেছিলেন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যদি স্বাধীনতা না আসে তাহলে তার মাহাত্ম্য অনেকটাই কমে যায়। দেশবাসীকে প্রকৃত অর্থেই বুঝতে হবে আসল স্বাধীনতার অর্থ কতটা গভীর।
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর-র রাষ্ট্র গঠনের ভাবনা এবং দেশের জন্য তাঁর যে জীবন দর্শন ছিল তাকে সঙ্কুচিত করে দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ গত কয়েক দশকে সহস্রবার উঠেছে। কিন্তু কোনও সরকারই ২০১৪ সালের আগে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বিতর্কে সে ভাবে মিমাংসার পথে বা নেতাজির অবদানকে স্বীকার্য করার জায়গায় নিয়ে যায়নি বলেও অভিযোগ। যদিও কোনও সরকারই এই অভিযোগকে স্বীকার করেনি। কিন্তু, গত কয়েক বছরে নরেন্দ্র মোদী সরকার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু-কে ঘিরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন যে স্বাভাবিকভাবেই তা সকলের নজরে পড়েছে। এর জন্য নেতাজি ভক্ত থেকে শুরু করে নেতাজির পরিবার এবং তাঁকে নিয়ে গবেষণা করা মানুষের দল প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্যোগকে সাধুবাদও জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার, কর্তব্য পথের উদ্বোধনে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, তাঁর সমস্ত কাজের মধ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের আদর্শ ও স্বপ্নের ছাপ রয়েছে। জহরলাল নেহরু অর্থাৎ কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের তির ছুড়ে বলেছেন স্বাধীনতার পর নেতাজির আদর্শকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, গত আট বছরে তাঁর সরকার যে সমস্ত কাজ করেছে, যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে-- তার সব কিছুতেই নেতাজির আদর্শ ও স্বপ্নের ছাপ রয়েছে। তিনি এটাও বলেন সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ চললে ভারত এতদিনে আরও উন্নতি করতে পারত।
তবে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, কিছুদিন আগেও তিনি "স্বচ্ছ ভারত মিশন"- এর লোগোয় গান্ধীজির চশমা ব্যবহার করেছেন। সবরমতি আশ্রমে চরকায় সুতা কেটে গান্ধীজির মতাদর্শে চলার কথা বলেছিলেন মোদী। আর এবার তিনি নেতাজির আদর্শকেও তুলে ধরে দাবি করছেন যে তাঁর সরকার সুভাষ বসুর-র পথ ও আদর্শকে সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আসলে যুক্তি এবং সত্যতার বিশাল ফাঁক রয়েছে বলেও নিন্দুকদের দাবি।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীর প্রাক মুহূর্তে মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির বিরাট গ্রানাইটের মূর্তি বসানোর। তবে যদিন না পর্যন্ত গ্রানাইটের মূর্তি তৈরি হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত সেখানে একটি হলোগ্রাম স্ট্যাচু বসানো হয়েছিল। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মবার্ষিকীতে সেই হলোগ্রাম স্ট্যাচুর উদ্বোধনও করেন প্রধানমন্ত্রী। কথা ছিল ১৫ আগস্টের মধ্যে গ্রানাইটের মূর্তিটির উদ্বোধন হবে। মাঝখানে আবার হলোগ্রাম মূর্তিটিকে দেখা যাচ্ছিল না। যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি বিরোধীরা। এমনকী মোদি সরকারের ধাপ্পাবাজ বলেও অভিযুক্ত করে বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার অবশেষে নেতাজির গ্রানাইট মূর্তির উদ্বোধন হল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন স্বাধীনতার পরর্তি সময়ে যেখানেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আস্ফালনের চিহ্ন থাকবে তাকে স্বদেশিয়ানার ভরপুর করতে হবে। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার আবাসস্থলের রাস্তার নাম রেস কোর্স-থেকে সরিয়ে লোক মান্য মার্গ করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নৌসেনার এনসাইন-কেও স্বদেশিয়ানার মোড়কে পোড়া হয়েছে। আগে নৌসেনার পতাকায় এনসাইন হিসাবে ভারতীয় পতাকার সঙ্গে সেন্ট জর্জ-এর এমব্লেম থাকত। এটা ব্রিটিশ শাসনের চিহ্ন বলে মনে করছে মোদী সরকার। কিন্তু, মোদীর এই পরাধীনতার চিহ্ন মোছাকে একটি খেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন বহু জন। তাই নেতাজিকে নিয়ে মোদীর দাবিকে নেতাজি ভক্ত ও নেতাজি গবেষকদের মধ্যে অনেকেই একটা গিমিক হিসাবে গণ্য করছেন।
আরও পড়ুন- রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয়র মৃত্যুর পর কে উত্তরাধিকারী হবেন বিখ্যাত কোহি নূর হীরার?
আরও পড়ুন- প্রায়াত ব্রিটেনের রানিকে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, বললেন পুরনো সাক্ষাতের কথা