সংক্ষিপ্ত
- গডমাদার অফ কার্ডিওলজির জীবনাবসান
- ১০৩ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ডা. এস আই পদ্মাবতী
- তিনি দেশের প্রথম মহিলা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
- ১৯৯২ সালে পদ্ম বিভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় তাঁকে
করোনা কেড়ে নিল দেশের আরেকটি অমূল্য প্রাণ। চলে গেলেন ভারতের প্রথম মহিলা কার্ডিওলজিস্ট ডা. এস আই পদ্মাবতীর। চিকিৎসক মহল 'গজমাদার অব কার্ডিওলজি' নামে খ্যাত পদ্মাবতীর মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর।
নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটে শেষ ১১ দিন ধরে চিকিৎসা চলছিল শতায়ু এই চিকিৎসকের৷ সেখানেই শনিবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ হাসপাতালের সিইও ডা ও পি যাদব জানিয়েছেন, দুটি ফুসফুসেই গুরুতর সংক্রমণ হয়েছিল তাঁর । সেই কারণেই মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসক পদ্মাবতীর। পশ্চিম দিল্লির পঞ্জাবি বাগ শ্মশানে রবিবার রাতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
জানা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে পর্যন্তও সক্রিয় এবং সুস্থ জীবন কাটিয়েছিলেন দেশের প্রথম মহিলা কার্ডিওলজিস্ট। ২০১৫ সাল পর্যন্ত দিনে ১২ ঘন্টা কাজ করতেন তিনি। ১৯৮১ সালে তাঁর হাতেই গড়ে ওঠে ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট। সেখানেই সপ্তাহে পাঁচ দিন রোগী দেখতেন ডা. এস আই পদ্মাবতী। ১৯৫৪ সালে তাঁর হাত ধরেই উত্তর ভারতের প্রথম কার্ডিয়াক ক্যাথেটেরাইজেশন ল্যাবোরেটরি তৈরি হয় লেডি হার্ডিং মেডিকাল কলেজে।
আরও পড়ুন: শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের, এবার দেখা দিয়েছে সেপটিক শক
দিল্লির গোবিন্দ বল্লভ পন্ত হাসপাতালে দেশের প্রথম কার্ডিক কেয়ার ইউনিট চালু করেছিলেন কিংবদন্তী চিকিৎসক পদ্মাবতী। ১৯১৮ সালে মহামারির আকারে ছড়িয়েছিল স্প্যানিশ ফ্লু। ঠিক তার আগের বছরে ১৯১৭ সালের ২০ জুন তৎকালীন বামাতে জন্ম শিবররামকৃষ্ণা আইয়ার পদ্মাবতীর। তাঁরাল ছিলেন ৩ ভাই ও ২ বোন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জামান বার্মা আক্রমণ করলে প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আসেন পদ্মাবতী। রেঙ্গুন মেডিক্যাল কলেজ থএকে এমবিবিএস করার পর উচ্চতর শিক্ষার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন এই কিংবদন্তী চিকিৎসক। সেখানে তিনি লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স থেকে এফআরসিপি ডিগ্রি পান, এরপরে এডিনবার্গের রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্ত থেকে এফআরসিপিই হন। ব্রিটেনে থাকাকালীম জাতীয় হার্ট হাসপাতাল ও লন্ডনের কুইন স্কয়ার জাতীয় হাসপাতালে কাজ করার সময় তিনি কার্ডিওলজিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর সুইডেন থেকে কার্ডিওলজির কোর্স করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৫২ সালে তিনি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে যোগদান করেন।
আরও পড়ুন: দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ লক্ষ ছাড়াল, দিল্লির এইমস থেকে অবশেষে ছুটি পেলেন অমিত শাহ
১৯৬৭ সালে মৌলানা আজাদ মেডিকাল কলেজের ডিরেক্টর-প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডা. এস আই পদ্মাবতীকে। এখানেই তিনি দেশের প্রথম কার্ডিওলজির ডিএম কোর্স চালু করেন। এখানেই পথ চলা শুরু ভারতের প্রথম করোনারি কেয়ার ইউনিট এবং করোনারি কেয়ার ভ্যানের। ১৯৬২ সালে ডা. এস আই পদ্মাবতী প্রতিষ্ঠা করেন অল ইন্ডিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন । চিকিত্সা ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৭ সালে পদ্ম ভূষণ এবং ১৯৯২ সালে তাঁকে পদ্মবিভূষণ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭জ সাল নাগাদ ডাক্তার পদ্মাবতী নিজের পেশাগত জগতে সবচেয়ে বেশি কর্মমুখর ছিলেন। এই সময়ে একসঙ্গে তিনটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান- মৌলানা আজাদ মেডিক্যাল কলেজ, লোক নায়ক হাসপাতাল ও জিবি পন্চ হাসপাতালে প্রধান প্রশাসক ছিলেন তিনি।