সংক্ষিপ্ত
বাবার পথ ধরে তিনিও কর্মজীবন শুরু করেছিলেন নাপিত হিসাবে। পরিশ্রম আর বুদ্ধির জোরে ব্যাঙ্গালোরের রমেশ বাবু, আজ ভারতের ১৪০ জন বিলিয়নেয়ার-এর একজন।
ফোর্বস পত্রিকার হিসাব অনুসারে, ভারতে মোট ১৪০ জন বিলিওনেয়ার আছেন। বিলিয়নেয়ার অর্থাৎ যেসব ধনকুবেরদের সম্পত্তির পরিমাণ ১০০ কোটিরও বেশি। আর এদেরই একজন হলেন ব্যাঙ্গালোরের রমেশ বাবু। ভারতের বাকি ধনকুবেরদের থেকে তিনি একেবারে ব্যতিক্রমী। কারণ, শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও, তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন সামান্য নাপিত হিসাবে। আর সেখান থেকে আজ এমন এক জায়গায় উঠে এসেছেন, যেখানে এখন তিনি রোলস রয়েজ, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, জাগুয়ার এবং বিএমডব্লিউ-এর মতো উচ্চমানের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডেড গাড়ি-সহ মোট ৪০০টিরও বেশি গাড়ির মালিক।
রমেশ বাবুর সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠার শুরুটা কিন্তু হয়েছিল একেবারে নিচুতলা থেকে। বেঙ্গালুরুতে এক অত্যন্ত গরীব পরিবারে জন্ম হয়েছিল তার। বাবা, পি গোপাল ছিলেন নাপিত। একটি ছোট দোকান ছিল তার। সেই দোকান থেকে হওয়া উপার্জনেই তিন ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী-এর মুখে অন্ন তুলে দিতেন তিনি। কিন্তু, রমেশের যখন সাত বছর বয়স, সেই সময় তার বাবা মারা যান। আর ওই ছোট বয়সেই শুরু হয় রমেশের জীবন-যুদ্ধ। পরিবারে আর কোনও রোজগারে সদস্য না থাকায়, তার মা-ই তিন সন্তানকে বড় করার দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছিলেন। গৃহপরিচারিকা হিসাবে কাজ করতে শুরু করেছিলেন।
"
স্বামীর নাপিতের দোকানটি তার পক্ষে চালানো সম্ভব ছিল না। দৈনিক মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছিলেন দোকানটি। ১৩ বছর বয়সে, প্রথম পারিবারিক রোজগারে অল্প করে হলেও অবদান রাখতে শুরু করেছিলেন রমেশ। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ দেওয়া, দুধ দেওয়ার মতো ছোট কাজ করে অল্পকিছু আয় করা শুরু করেছিলেন। দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে, তারপর তিনি স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। বদলে, বাবার দোকানে বসা শুরু করেন। তবে, বাবার পুরোনো নাপিতে দোকান যে চলবে না, তা তিনি ভালই বুঝেছিলেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ নাপিতের দোকানটিকে তিনি একটি ট্রেন্ডি হেয়ার-স্টাইলিং সালোনে পরিণত করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন 'ইনার স্পেস'।
তবে, তখনও রমেশ বাবু-র জীবনের বড় বাকটি আসেনি। ১৯৯৩ সালে রমেশ বুঝতে পেরেছিলেন তার ব্যবসা বাড়াতে হবে। নাহলে তার পরের প্রজন্মকেও ই চুল কাটার কাজই করে যেতে হবে। সালোনের থেকে যে অর্থ জমেছিল, তা দিয়ে এবং তার কাকার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সেই বছর তিনি একটি মারুতি ওমনি ভ্যান কিনেছিলেন। তিনি সালোনে কাজ করেন, তাই নিজে চালানোর সময় নেই। অন্য চালককে গাড়িটি ভাড়া দিয়েছিলেন। আর এটাই ছিল, রমেশ বাবুর সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ। ক্রমেই লাভের টাকা থেকে একের পর এক গাড়ি কিনে ভাড়া দিতে শুরু করেছিলেন তিনি। যানবাহন বহরের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যবসার বহরও।
তার জীবনের দ্বিতীয় বড় বাকটা এসেছিল ২০০৪ সালে। ওই বছর তিনি তার প্রথম বিলাসবহুল গাড়িটি কিনেছিলেন, মার্সিডিজ ই ক্লাস সেডান। দাম ছিল ৩৮ লক্ষ টাকা! এতদিন পর্যন্ত অন্যান্য ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল সংস্থার সঙ্গে তার বিশেষ পার্থক্য ছিল না। কিন্তু মার্সিডিজটি কেনার পরই তিনি বিলাসবহুল গাড়ি কিনে, বিত্তশালীদের ব্যবহারের জন্য সেই গাড়িগুলি ভাড়া দিতে শুরু করেন। আজ, বিএমডব্লিউ, রোল রয়েস গোস্ট, মার্সিডিজ মেবাখ - এমন কোনও বিলাসবহুল গাড়ি নেই, যা তার সংগ্রহে নেই। রমেশ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর হাতে এখন এইসব টপ-এন্ড গাড়িগুলি ছাড়াও টয়টা ইনোভার মতো সাধারণ গাড়ি, বাস ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ৪০০টি যানবাহনের বিশাল বহর রয়েছে।
আরও পড়ুন- এবার তালিবানি ধর্ষণের শিকার পুরুষও - দেশ ছাড়ার টোপ দিয়ে তৈরি ফাঁদ, দেখুন ছবিতে ছবিতে
আরও পড়ুন - ২০ বছর পর সামনে এল আল-কায়েদার গোপন ষড়যন্ত্র - ৯/১১-র পরই ছিল আরও বড় হামলার ছক, দেখুন
তবে, এতটা উপরে উঠে এলেও, নিজের শিকড়টা কখনও ভোলেননি ভারতের 'বিলিয়নেয়ার বার্বার' বা 'ধনকুবের নাপিত'। এখনও প্রতিদিন নিয়ম করে সালোনে যাওয়া তার চাইই চাই। দিনের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ সেখানেই থাকেন রমেশ। গ্রাহকদের দেখাশোনা করেন। সব মিলিয়ে ভারতের সকল উদ্যোগপতির কাছে তিনি আজ এক অনুপ্রেরণা।