সংক্ষিপ্ত
১৮২৭ সালে উত্তরপ্রদেশের এক ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্মেছিলেন মঙ্গল পাণ্ডে। ৩২ বছর বয়সে ১৮৩৯ সালে তিনি বেঙ্গল সেনা বাহিনীতে এসে যোগ দেন। ভারতে সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭ সালের মে মাসে শুরু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু এই আন্দোলনের অগ্নিশিখা জ্বালিয়েছিলেন মঙ্গল পাণ্ডে ১৮৫৭ সালের মার্চ মাসে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের হাতে ধরা পরে গেলে বিচারে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ব্রিটিশ সরকারের ভাষায় মঙ্গল পাণ্ডে (Mangal Pandey) একজন বিশ্বাসঘাতক বিদ্রোহী হলেও তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের (Indian Revolutionary) এক অন্যতম নায়ক। মূলত তাঁর হাত ধরেই ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ সিপাহীদের প্যারেড ময়দানে প্রথম ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন সিপাই মঙ্গল। তবে বিকেলের মধ্যে ইংরেজদের কাছে এই খবর পৌঁছে যায়। বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির সেনাপতির সহকারী লেফটেন্যান্ট বৌগ Lieutenant Baugh) জানতে পারেন যে ব্যারাকপুরে বেশ কয়েকজন সিপাহী উত্তেজিত অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরও জানতে পারেন যে মঙ্গল পাণ্ডে নাম এক ব্যাক্তি গাদা বন্দুক-সহ প্যারেড ময়দানে সেনাবাহিনীর প্রহরী কক্ষের সামনে রয়েছেন যিনি সিপাহী বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন এবং প্রথম একজন ইউরোপীয়কে গুলি করার হুমকি ও দিয়েছেন।
এ কথা জানতে পেরে বৌগ অবিলম্বে সশস্ত্র হয়ে ঘোড়ায় চড়ে সেখানে উপস্থিত হন যেখানে মঙ্গল পাণ্ডে ছিলেন। এরপর পাণ্ডে ৩৪তম কোয়ার্টার-গার্ডের সামনে থাকা স্টেশন বন্দুকের পিছনে অবস্থান নেন এবং বৌগকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন। পাণ্ডের লক্ষ্য সঠিক ছিল না ঠিকই, তবে চেষ্টা একেবারে বৃথা যায় নি। তাই তাঁর গুলি বৌগকে আঘাত না করে ও বৌগের ঘোড়াকে আঘাত করে এবং বৌগকে মাটিতে ফেলে দেয়। বৌগ দ্রুত নিজেকে রক্ষার্থে মঙ্গল পাণ্ডের দিকে গুলি করতে করতে এগিয়ে যান। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছেন বৌগ ও।
আরও পড়ুন- দেশ জুড়ে বাড়ছে বাল্যবিবাহের ঘটনা! দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ এনসিপিসিআরের
আরও পড়ুন- অভিনব উপায়ে সন্তান প্রসব অন্ধ্রপ্রদেশে, মোবাইলের আলোয় ভূমিষ্ঠ হল সদ্যজাত
আরও পড়ুন- এ এক অন্য কাহিনি, মাতৃত্বের স্বাদ পেতে হাইকোর্টের বিচারকের দ্বারস্থ এক আসামীর স্ত্রী
এরপর বৌগ তার তলোয়ার বের করার আগেই মঙ্গল পাণ্ডে তার উপর তলোয়ারের আঘাত হানেন এবং তাঁকে মাটিতে ফেলে দেন। হিউসন নামে একজন ব্রিটিশ সার্জেন্ট-মেজর (British Surgent Major) প্যারেড ময়দানে পৌঁছে পাণ্ডেকে গ্রেপ্তারের জন্য তিনি কোয়ার্টার-গার্ডের কমান্ডার জিমাদার ঈশ্বরী প্রসাদকে নির্দেশ দিলে তিনি জানান তিনি একা পাণ্ডেকে নিতে পারবেন না। জবাবে হিউসন ঈশ্বরী প্রসাদকে (Iswari Prasad) বন্দুকহাতে প্রহরায় নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই মাঝে বৌগ 'কোথায়?' 'কোথায়?' বলে চিৎকার শুরু করলে হিউসন বৌগকে সেখানে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর ঠিক তখনই মঙ্গল পাণ্ডে গুলি চালায়। পাণ্ডের মুখোমুখি হওয়ার সময় হিউসন পাণ্ডের গাদাবন্দুকের আঘাত পেয়ে পিছন থেকে মাটিতে ছিটকে পড়েছিলেন।
অবশেষে বিদ্রোহ চলাকালীন ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন মঙ্গল পাণ্ডে। তিনি সেই মুহূর্তে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং মারাত্মক আহত হয়ে পড়েন। তবে তিনি সুস্থ হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়। বিচারে তাঁকে মৃত্যদণ্ড দেওয়া হবে এ কথা জেনেও বীরত্ব দেখিয়েছিলেন মঙ্গল পাণ্ডে। তিনি কোনওভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন কিনা জানতে হওয়া হলে তিনি জানিয়েছিলেন 'তিনি নিজেই বিদ্রোহ করেছেন এবং তাকে উত্সাহিত করতে অন্য কোনও ব্যক্তি কোনও ভূমিকা পালন করেননি।' অবশেষে বিচারের রায়ে জিমাদার ঈশ্বরী প্রসাদ ১৮৫৭ সালের ৮ এপ্রিল মঙ্গল পাণ্ডেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।