সংক্ষিপ্ত
প্রত্যেকটি মৃত্যুর মধ্যে মিল একটা জায়গাতেই। প্রত্যেকটি হত্যাকান্ড ঘটেছে নিহতের ‘প্রেমিক’ বা সঙ্গীর দ্বারা, যারা নিহতের সবচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত মানুষ ছিলেন।
দিল্লিতে মহারাষ্ট্রের শ্রদ্ধা ওয়াকার, দিল্লিতেই নিকি যাদব, দিল্লিতে সাক্ষী রেড্ডি, অথবা মুম্বইতে সরস্বতী বৈদ্য, জাত-ধর্ম নির্বিশেষে ভারতে নিজের সঙ্গীর দ্বারা হিংসার শিকার একের পর এক নারীরা। এই তরুণীদের বয়স ভিন্ন ভিন্ন। এঁদের পরিবারের মানুষ বা বেড়ে ওঠার পরিবেশও পৃথক। সম্পর্কের ক্ষেত্রে এঁদের পরিস্থিতি এক এক জনের জন্য এক এক রকমের ছিল। কিন্তু, প্রত্যেকের জীবনেই মর্মান্তিক সত্যিটা খুব ভয়ঙ্কর।
দিল্লিতে শ্রদ্ধা ওয়াকার নিজের প্রেমিক তথা লিভ ইন পার্টনার আফতাব আমিন পুনাওয়ালার দ্বারা খুন হন। শ্রদ্ধার দেহ কুচো কুচো করে কেটে জঙ্গলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আফতাব। দিল্লিতে স্বামী সাহিল গেহলটের সঙ্গে থাকতেন হরিয়ানার যুবতী নিকি যাদব। তাঁকেও খুন করে নিজের ধাবার ফ্রিজের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন সাহিল। অপর একটি ঘটনা ঘটে গত সপ্তাহেই। প্রকাশ্য রাস্তায় ভর সন্ধ্যাবেলা ১৬ বছর বয়সী প্রেমিকা সাক্ষী রেড্ডির গলায় ছুরি ঢোকাতে ঢোকাতে মেরে ফেলে তারপর পাথরের চাঁই দিয়ে একের পর এক আঘাত করে মাথা থেঁতলে দিয়ে শেষমেশ লাথি মারতে মারতে তাঁকে নালার মধ্যে ঢুকিয়ে দেন ২০ বছর বয়সী সাহিল খান, এই দুই ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’ একসঙ্গে থাকতেন না। আর, শেষ ঘটনাটি মুম্বইয়ের সরস্বতী বৈদ্যকে নিয়ে। ৩২ বছর বয়সী সরস্বতীর সঙ্গে একসাথে থাকতেন ৫৬ বছর বয়সী প্রৌঢ় মনোজ রমেশ সানে। সরস্বতীকে কুচো কুচো করে কেটে কুকারে সেদ্ধ করে দেহের অংশ পুড়িয়ে দিয়েছেন মনোজ।
এই প্রত্যেকটি ঘটনা যেমন মর্মান্তিক, তেমনই ভয়ঙ্কর। এই প্রত্যেকটি মৃত্যুর মধ্যে মিল একটা জায়গাতেই। প্রত্যেকটি হত্যাকান্ড ঘটেছে নিহতের ‘প্রেমিক’ বা সঙ্গীর দ্বারা, যারা নিহতের সবচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত মানুষ ছিলেন। যার নেপথ্যে কাজ করেছে রাগ, হিংসা এবং অশান্তি। এই ধরনের খুনের বিষয়ে মনোবিদ সুমন নালওয়া বলছেন যে, ‘মহিলাদের ওপরে যেসমস্ত হিংসার ঘটনা ঘটে, তার ৯৫ শতাংশই ঘটে তাঁদের বিশ্বস্ত সঙ্গীর দ্বারা।’ এই হিংসার প্রসঙ্গে মনোবিদরা সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকাকেও অস্বীকার করেননি। ড. মনিকা কুমারের মতে, আমারা প্রত্যেকে খুব সহজেই মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট পরিষেবা পেয়ে যাই, পর্নোগ্রাফি খারাপ জিনিস হলেও খুব সহজেই আমাদের কাছে উপলব্ধ। পুরুষরা পর্ন ছবি দেখছেন, এরপর মহিলাদের যৌন বস্তু হিসেবে গণ্য করছেন এবং পর্নোগ্রাফির মতো কাজ করার চেষ্টা করছেন। এঁরা চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে নিজের বাস্তবিক বোধশক্তি কাজে লাগাচ্ছেন না।
২০১৭ সালের পর্নহাব রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয় দেশ, যেখানে সবচেয়ে বেশি পর্ন ছবি দেখা হয়। অথচ, এই দেশেই পর্নোগ্রাফি একটি ‘নিষিদ্ধ’ বস্তু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিষিদ্ধ করা এবং লুকিয়ে রাখাই ওই বস্তুর প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করছে। সমাজকর্মী কবিতা কৃষ্ণান বলছেন, ‘সাধারণত যেসব মানুষ নিজেদের সঙ্গীকে আঘাত করায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন, এঁরা বারবার আঘাত করেন এবং বারবারই সঙ্গীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।’ অর্থাৎ, ক্ষমা চেয়ে চেয়ে এঁরা দিন দিন সঙ্গীর প্রতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠেন এবং বারবারই নিজের ক্রিয়াকলাপের পর ক্ষমা চেয়ে নিয়ে পাড় পেয়ে যান। ২০২২ সালে আমেরিকায় আত্মহত্যা করে মারা গেছেন ভারতের পঞ্জাব রাজ্যের মেয়ে মনদীপ কৌর। নিজের স্বামীর সাথে আমেরিকায় থাকতে থাকতে মনদীপ এতটাই গৃহহিংসার শিকার হতেন যে, বারবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি নিজের অবস্থার কথা জানাতেন। তাঁর দিনই, কূলদীপের মতে, মেয়েরা গৃহহিংসার কারণে সেই গৃহ ত্যাগ করে বেরিয়ে আসতে পারেন না শুরু এই কারণে যে, ‘লোকে কী বলবে!’ নিজের বাচ্চা আর নিজের সম্মান রক্ষার্থে মনদীপ নিজের স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার পদক্ষেপ নেননি।
আরও পড়ুন-
Mumbai Mira Road News: রান্নাঘরে ৩ বালতি রক্ত! ৩২ বছর বয়সী সঙ্গিনীকে নিজের 'মেয়ের চোখে' দেখতেন মনোজ?
Shark Attack: মিশরের সমুদ্রে হাড় হিম করা ঘটনা! সমুদ্রে স্নানরত ব্যক্তিকে কামড়ে ছিঁড়ে খেল হাঙর