সংক্ষিপ্ত
- ৩৮ বছর আগে ছেড়ে গিয়েছিলেন মা
- অজানা শহরের এক রেলের কামড়ায়
- তারপর থেকে নিজের শিকড় খুঁজে বেড়িয়েছে সে
- কয়েক দশক পর মাকে খুঁজে পেয়েও পাওয়া হল না তাঁর
ফের একবার যেন কর্ণ-কুন্তী মুখোমুখি। তবে যুদ্ধ শিবিরে নয়, আদালতে। কদিন পর থেকে আদালত কক্ষই হতে চলেছে এই মা-ছেলের কুরুক্ষেত্র। ছেলের বয়স এখন ৪০। বম্বে হাইকোর্টে তিনি সম্প্রতি তাঁর জন্মদাত্রী মায়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ তাঁর বয়স যখন দুই তখন তাঁর মা তাঁকে মুম্বই শহরে ছেড়ে গিয়েছিলেন। পরে তাঁকে পুত্র হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন। আবেদন করেছেন, এর জন্য তাঁকে দেড় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আবেদনকারী পুত্রের নাম শ্রীকান্ত সবনিস। তিনি পেশায় একজন মেক-আপ শিল্পী। তাঁর দাবি সম্পূর্ণ অজানা অচেনা একটা শহরে তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিল তাঁর মা। ছোটবেলার সেই ঘটনা তাঁর মনে এমন আঘাত দিয়েছিল যে পরবর্তীকালে তাঁকে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক একটা জীবন কাটাতে হয়েছে। এর জন্য তাঁর মা আরতি মহস্কর এবং তাঁর দ্বিতীয় স্বামী উদয় মহস্কর-কে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আরও পড়ুন - স্বামী দাঁত মাজেন না, চান করেন না, বিচ্ছেদ চাইলেন স্ত্রী
জানা গিয়েছে আরতি মহস্কর-এর প্রথমে দীপক সবনিসের বিবাহ হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুনেতে এই দম্পতির একটি সন্তান হয়েছিল। তিনিই শ্রীকান্ত সবনিস। কিন্তু উচ্চাভিলাষী আরতি বরাবরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চাইতেন। বলিউডের হাতছানিতেই ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি দুই বছরের শ্রীকান্তকে নিয়ে মুম্বই পারি দেন। মুম্বই পৌঁছে ছোট্ট শিশুটিকে একটি ট্রেনের কামড়ায় ছেড়ে দিয়ে চলে যান আরতি বলে দাবি করেছে শ্রীকান্ত।
আরও পডড়ুন - বিয়ের রাতে এমন কীর্তি বধূর, পরদিন থেকে থানায় চক্কর কাটছে শ্বশুরবাড়ি
তারপর ২ বছরের শ্রীকান্তকে এক রেলওয়ের আধিকারিক চাইল্ডস হোম-এ পাঠিয়ে দেয়। তার ৫ বছর পর দীর্ঘ আইনি লড়াই-এর শেষে শ্রীকান্ত সব্নিসের দিদিমা অর্থাৎ আরতির মা তার আইনি হেফাজত পেয়েছিলেন। দিদিমার মৃত্যুর পর তাঁর মাসি তাঁকে বড় করেন।
আরও পড়ুন - সমুদ্র সৈকতে কি ভেসে এল হাজার হাজার পুরষাঙ্গ, সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল
ছোটবেলার সেই অভিজ্ঞতার পর থেকে নিজের বাবা-মা, তাঁর নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে মনে সবসময় প্রশ্ন ঘোরাফেরা করত শ্রীকান্ত সবনিস-এর। ২০১৭ সালে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁর মা অর্থাৎ আরতি মহস্কর-এর সন্ধান পান তিনি। ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে করতে আরও কয়েকটা দিন যায়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শ্রীকান্তের দাবি সেই সময় আরতি স্বীকার করেছিলেন যে শ্রীকান্ত তাঁরই পুত্র। অনিবার্য পরিস্থিতিতে তাঁকে ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন - যৌনক্ষমতা বাড়ায়, তাই গিরগিটি-র চাহিদা তুঙ্গে, বেঙ্গালুরু পুলিশের জালে ছয় পাচারকারী
এতেই বরাবর সিকড় খুঁজে বেড়ানো শ্রীকান্তের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। পরে তিনি তাঁর মা এবং তাঁর দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু, দেখা হতেই তাঁর সব আশা উড়ে যায়। শ্রীকান্তের দাবি আরতি মহস্কর এবং উদয় মহস্কর সাফ জানিয়ে দেন তাঁদের সন্তানদের সামনে শ্রীকান্তের আসল পরিচয় গোপন রাখতে হবে। জনসমক্ষে শ্রীকান্ত কখনই আরতির সন্তানের পরিচয় পাবেন না।
এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন শ্রীকান্ত সবনিস। তাঁর আইনজীবী আদালতে পেশ করা আবেদনপত্রে লিখেছেন, এই অগ্রহণযোগ্য শর্তে তাঁর মক্কেল পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। উচ্চ আদালতে শ্রীকান্ত সাবনীস তাঁর মায়ের কাছ থেকে ছেলের আইনি পরিচয় দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর মানসিক শান্তিকে বিঘ্নিত করার জন্য আরতি ও উদয় মহস্কর-কে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিক আদালত, এই মর্মে আবেদন করা হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি এই আবেদনের শুনানি শুরু হবে।