সংক্ষিপ্ত

ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনায় অনেকেই ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কী হয়েছিল জানার আগেই মৃত্যু হয়। কারণ মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছিল।

 

 

মাত্র ২০ মিনিট। তারমধ্যেই চলে গেল শতাধিক মানুষের জীবন। তছনছ হয়ে গেল বালেশ্বরের কাছে রেলওয়ের ট্র্যাক। প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলের আধিকারিকদের কথায় মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই তিনটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যার পরিণতি এখনও পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯০০ জন। তীব্র গতিতে যাওয়া শালিমার-করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়িতে ধাক্কা মারে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কামরাগুলি ছড়িয়ে পড়ে পাশের ট্রাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেই ট্র্যাকের ওপর দিয়েই তীব্র গতিতে আসছিল যশবন্তপুর - হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটি সেই কামরাগুলিকে ধাক্কা মেরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

রেল সূত্রের খবর, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এখনও ধ্বংসস্তূপে অটকে থাকারও সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না উদ্ধাকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলের কর্তারা জানিয়েছে, সন্ধ্যে ৬টা ৫০-৭টা ১০ মিনিটের মধ্যেই এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে। ভারতীয় রেলের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানিয়েছে, দুটি দুরপাল্লার যাত্রীবাহী ট্রেন এই দুর্ঘটনায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত। তবে মালগাড়িটি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েছিল। তিনি আরও বলেন, সবথকে মারাত্মক ট্রেন দুর্ঘটনার মধ্যে একটি হল এটি। সন্ধ্যে ৭টার দিকে ঘটনা ঘটে। সেই সময়ই অনেক যাত্রী ঘুমাচ্ছিল।

রেল কর্তা আরও জানিয়েছেন, শালিমার-করমণ্ডল এক্সপ্রেস ছিল চেন্নাইগামী। সেটি তীব্র গতিতে যাচ্ছিল। লাইনচ্যুত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়িতে ধাক্কা মারে। তারপরই এই ট্রেনের কামরাগুলি ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি কামরা পাশের লাইনে পড়েছিল। এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশের লাইন দিয়ে আসছিল যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটিও তীব্র গতিতে আসছিল। এই ট্রেনটি ছড়িয়ে থাকা কামরায় ধাক্কা মেরে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। রেল কর্তাদের কথায় সন্ধ্যে ৬টা ৫০ থেকে ৭টা ১০ অর্থাৎ মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।

গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেলমন্ত্রক। প্রথমে স্থানীয়রাই উদ্ধারকাজে হাত লাগায়। তারপর উদ্ধারকাজ শুরু করে উদ্ধাকারী দল। উদ্ধারের বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি কামরা আরও একটি কামরার ওপর উঠে গেছে। টেনে হিঁচড়ে বার করে আনা হচ্ছে মৃতদেহ।

এই দুর্ঘটনার পরই আধুনিক প্রযুক্তির এলএইচবি কোচ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ এটি অত্যান্ত নিরাপদ বলেও দাবি করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরেই দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে যখন মৃতের সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়েছে তখনই আধুনিক প্রযুক্তির কোচের যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ট্রেন দুর্ঘটনার ভয়াবহতাও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। একাধিক রেল কর্তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন গত ২০ বছরে এমন ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা তারা দেখেননি।

এলএইচবি কোচের বৈশিষ্ট্য

রেল কর্তাদের কথায় লাইন চ্যুত হোয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হলে এলএইচবি কোট কখনও পুরনো আইসিএফ কোচের মত মত একটি কোচের ভিতর অন্যটি টেলিস্কোপের মত ঢুকে যায় না। পরিবর্তে কাপলিং আলগা হয়ে দুই পাশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের কথায় আধুনিক কোচের এই প্রযুক্তিও এই বালাসোরের ট্রেন দুর্ঘটনাকে মারাত্মক করেছে।

বারাসোরের ট্রেন দুর্ঘটনা মারাত্মক হওয়ার কারণ

শুক্রবার যশবন্তপুর হাওড়া এক্সপ্রেস প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে বাহানাগা বাজার স্টেশন পার হয়। তখন ঘড়িতে ৬টা ৫৫ মিনিট। সেই সময়ই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। লাইন চ্যুত এক্সপ্রেস ট্রেনের ৫টি বগি পাশের করমণ্ডল এক্সপ্রেস যাওয়ার লাইনে পড়ে। সেই সময়ই উল্টো দিক থেকে আসা করমণ্ডল এক্সপ্রেসর তীব্র গতিতে ধাক্কা মারে। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ছাড়াও ১৫টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। সাতটি কামরা সরাসরি উল্টো যায়।