সংক্ষিপ্ত
কীভাবে যৌনতার হাতছানি দিয়ে হতদরিদ্র পরিবার থেকে ওড়িশার অর্চনা নাগ রাতারাতি হয়ে উঠলেন কোটি কোটি টাকার মালিক? রহস্যের জট খুলতেই চোখ কপালে তদন্তকারীদের!
ওড়িশা রাজ্যের একসময়ের দুর্ভিক্ষ পীড়িত জেলা কালাহান্ডি, যার নাম শুনলেই দারিদ্রতার ছবি ভেসে ওঠে বহু ভারতবাসীর চোখে। সেই জেলার লানজিগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে অর্চনা নাগ। অল্প সময়ে বিপুল অঙ্কের টাকা কামানোর নেশায় যে কেড়ে নিয়েছিল তাবড় নেতামন্ত্রীদের রাতের ঘুম, মাত্র ৪ বছরে তার রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাওয়ার গল্প এখন বলিউডের কাহিনীকারদের নয়া প্লট জোগাচ্ছে।
চলতি অক্টোবরের ৬ তারিখ একের পর এক অভিযোগের ভিত্তিতে অর্চনা নাগকে গ্রেফতার করেছে ওড়িশার পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল যে, তিনি নাকি ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি তুলে রেখে ব্ল্যাকমেল করে কোটি কোটি টাকা দাবি করছিলেন। কিন্তু, কীভাবে এই ঘনিষ্ঠতা অবদি পৌঁছতেন অর্চনা? পুলিশ সূত্রে খবর, কালাহান্ডির লানজিগড়ে জন্ম হওয়ার পর ২০১৫ সালে নিজের মায়ের সঙ্গে ভুবনেশ্বরে চলে আসেন অর্চনা। প্রথমে একটি বেসরকারি সিকিউরিটি ফার্মে চাকরি করতে ঢুকেছিলেন তিনি। তবে, কিছুদিন সেই চাকরি করার পর কাজ ছেড়ে দেন অর্চনা, তারপর কাজ নেন একটি বিউটি পার্লারে। ওই বিউটি পার্লারে কাজ করতে করতেই শুরু করেছিলেন সেক্স নেটওয়ার্ক চালানোর কাজ।
ঘটনাচক্রে তার সঙ্গে পরিচয় হয় জগবন্ধু চন্দ্র নামে এক যুবকের। ২০১৮ সালে জগবন্ধুকে বিয়ে করেন অর্চনা নাগ। জগবন্ধুর ছিল পুরনো গাড়ির ব্যবসা। তার সঙ্গে পরিচয় ছিল বহু রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী-সহ সমাজের বহু প্রভাবশালী মানুষজনের সঙ্গে। ওই সূত্র ধরেই প্রভাবশালীদের কাছে মহিলা সরবারহ করত অর্চনা। এই কাজের সঙ্গে সঙ্গেই জুড়ে যায় ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি তুলে হেভিওয়েটদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করার ফিকির।
২০১৮ থেকে ২০২২, মাত্র ৪ বছরেই কোটি কোটি টাকা লুটে কটকের পালাসুনি এলাকায় একটি প্রাসাদ গড়ে তোলেন অর্চনা, কিনে ফেলেন বিলাসবহুল গাড়ি, প্রায় ৪০ কোটি টাকার আসবাবপত্র, ঘর সাজানোর বিদেশী সজ্জা, কয়েকটি বিদেশী কুকুর এবং একটি সাদা ঘোড়াও। তার ব্যাংক ব্যালান্স গিয়ে পৌঁছয় ৩০ কোটিতে। এখন তার বয়স মাত্র ২৭। গত কয়েকদিনে বহু তাবড় নেতাদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সেলফি ভাইরাল হওয়ার পর ওড়িশার নয়াপল্লি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক সিনেমার পরিচালক। পুলিশকে তিনি জানান, অন্য মহিলাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে অর্চনা তাঁর কাছে ৩ কোটি টাকা দাবি করেছেন। সম্প্রতি এক মহিলাও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান, অর্চনা তাঁকে একটি সেক্স নেটওয়ার্কে কাজে লাগিয়েছে। সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ডিসিপি প্রতীক সিং তার বাংলোতে ৫ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যান। ৬ অক্টোবর তাকে একটি গোপন স্থানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে, তাকে এইমস-এ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এসডিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। তার জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পর গভীর রাতে তাকে ঝাড়পাদা কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ তাকে ৩৪১, ৩২৮, ৩২৪, ৩৫৪-সি,৩৭০, ৩৮৬/৩৮৭/৩৮৮, ৩৮৯, ৪১৯/৪২০, ৪৬৫,৫০৬, ১২০-বি, আইপিসি এবং আইটি আইনের ৬৬-ই, ৬৭ ধারায় গ্রেফতার করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, কেবলমাত্র মহিলা সরবরাহ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও তোলাই নয়, অর্চনা নিজেও নাকি বিভিন্ন হেভিওয়েটদের সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হতেন। মধুচক্রটি কখনও কখনও চলত তাঁর নিজের বিলাসবহুল বাংলোতেই। জেরায় অর্চনা স্বীকার করেছেন যে, অধিকাংশ বিলাসবহুল জিনিস তার ধনী বন্ধুরা তাকে উপহার দিয়েছেন। কিছু রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, হোটেল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা তাকে প্রায় ১১ কোটি টাকা নগদ উপহার দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন-
কলকাতাকে টেক্কা দিল জেলা! মদ বিক্রিতে রাজ্যকে লাভের চরমে পৌঁছে দিল পূর্ব মেদিনীপুর, কোচবিহার, দক্ষিণ ২৪ পরগণা
বর্ণবিদ্বেষের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় একের পর ছুরির কোপে রক্তাক্ত ভারতীয় ছাত্র! এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ
কম্পানিতে বহাল থেকেও অন্য সংস্থায় কাজ? ইনফোসিসের বহু কর্মীকে ‘মুনলাইটিং’-এর অভিযোগে ছাঁটাই