সংক্ষিপ্ত
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই থাবা বসিয়েছিল করোনা। বাদ যায়নি ভারতও। ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে আছড়ে পড়েছিল করোনার প্রথম ঢেউ। তখন করোনা মোকাবিলায় একটি তহবিল তৈরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই তহবিলের নাম দিয়েছিলেন, 'পিএম কেয়ার্স'।
পিএম কেয়ার্স ফান্ড (PM-CARES Fund) নিয়ে প্রথম থেকেই জারি রয়েছে বিতর্ক (Controversy)। আর এই তহবিল তৈরির প্রায় দেড় বছরের মাথাতেও এনিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ল না। প্রধানমন্ত্রীর নামে এই তহবিল (Fund) তৈরি করা হয়েছিল। এই তহবিলের চেয়ারম্যান তিনি। এমনকী, এই তহবিলের ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছে সাউথ ব্লক (South Block) অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর দফতর। কিন্তু, এত কিছু সত্ত্বেও পিএম-কেয়ার্সের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই বলে সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টকে জানাল কেন্দ্র (CentralGovernment)। জানানো হয়েছে, এই তহবিল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন নয়। এর কাজকর্মেও সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই থাবা বসিয়েছিল করোনা (Coronavirus)। বাদ যায়নি ভারতও (India)। ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে আছড়ে পড়েছিল করোনার প্রথম ঢেউ (Corona First Wave)। তখন করোনা মোকাবিলায় একটি তহবিল তৈরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। সেই তহবিলের নাম দিয়েছিলেন, 'পিএম কেয়ার্স'।সেই তহবিলে অনুদান দেওয়ার জন্য দেশের সব নাগরিকের কাছেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অনুরোধ করা হয়েছিল। নিজেদের সাধ্যমতো অনেকেই টাকা দিয়েছিলেন সেই তহবিলে। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে অভিনেতা-সহ সাধারণ মানুষকেও অনুদান দিতে দেখা গিয়েছিল।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতন কেটে ওই তহবিলে টাকা জমা করা হয়েছে। রেল থেকে বিদেশ মন্ত্রক, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সরকারের প্রতিটি মন্ত্রকের তরফেই কোটি কোটি টাকা এই তহবিলে অনুদান হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে।
সবথেকে বড় বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী এই তহবিলের চেয়ারম্যান। এছাড়া দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এই তহবিলের অছি পরিষদের সদস্য। আর এই ওয়েবসাইটে যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি রয়েছে, তেমনই রয়েছে নামের সঙ্গে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভ। তাতে অনুদান চেয়ে সরকারি খরচে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। আর এহেন এক তহবিল এখন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন নয় বলে দাবি করছে মোদী সরকার। যা নিয়ে বিতর্ক কোনও অংশেই কমেনি। আর এনিয়েই এবার নতুন করে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা।
এই মামলায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি প্রদীপ কুমার শ্রীবাস্তব দিল্লি হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করেছেন, এই তহবিলে বাজেট থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয় না। শুধু মাত্র স্বেচ্ছায় অনুদানই জমা পড়ে। সংবিধান বা সংসদের তৈরি কোনও আইনের মাধ্যমে এই তহবিল তৈরি করা হয়নি। আর এনিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। এই তহবিলের সঙ্গে যদি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সম্পর্ক নাই থাকে তাহলে কেন একটা বেসরকারি তহবিলের জন্য অনুদান জোগাড় করতে নিজের পদ ব্যবহার করেছেন মোদী?
আরও পড়ুন- কমলা হ্যারিস ‘অনুপ্রেরণার উৎস’, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভারতে আমন্ত্রণ মোদীর
গত দেড় বছরে বিপুল অঙ্কের টাকা জমা পড়েছে এই তহবিলে। আর সেই টাকা কোন কোন খাতে খরচ হয়েছে তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন তুলছিলেন বিরোধীরা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই এনিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কোন কোন খাতে এই তহবিলের টাকা খরচ হয়েছে তা মোদীর কাছে জানতে চেয়েছিল বিরোধী দলগুলি। যদিও তথ্যের অধিকার আইনে এই তহবিলের খরচ নিয়ে কোনও তথ্য দিতে চায়নি প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তি, পিএম-কেয়ার্স পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। এটি কোনও সরকারি সংস্থা নয়। অথচ এই তহবিল থেকে টাকা নিয়ে করোনার টিকা, চিকিৎসার ভেন্টিলেটর কেনা হয়েছে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন মোদী। তাহলে এই তহবিলকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ না বলার কী কারণ রয়েছে তা বুঝতে পারছেন না বিরোধীরা। তার জেরেই এই তহবিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি এন পটেলের বেঞ্চে এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৭ সেপ্টেম্বর।