সংক্ষিপ্ত
রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে আটকে রয়েছেন বহু ভারতীয়। এ যেন ২ বছর আগের পুরোনো স্মৃতিকে তাজা করে দিচ্ছে। ২০২০ সালে ঠিক এমন ই এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল দেশ। বাইরের দেশে যখন করোনা মহামারি তীব্র আকার ধারণ করেছে সেই সময় নিজের সন্তান, কাছের মানুষগুলোকে দেশে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল সকলে। এবার আবার সেই ভয়ানক স্মৃতির মুখোমুখি হয়েছেন অনেকেই। সেইসময় লকডাউন জারি হবার পর নিজের রাজিয়া বেগম নামে তেলেঙ্গানার এক মহিলা তার ছেলে নিজামুদ্দিন আমানকে নিরাপদে ফেরাতে ১৪০০ কিমি রাস্তা অনায়সেই পাড়ি দিয়েছিলেন, আজ সেই তাঁর সেই সন্তানই ইউক্রেনে যুদ্ধের মাঝে আটকে রয়েছে।
কথায় বলে, 'ইতিহাস নিজেই ফিরে আসে।' তেলেঙ্গানার মহিলা রাজিয়া বেগমের (Razia Begam) জীবনেও যেন ঠিক তাই হল। রাজিয়া বেগম, তেলেঙ্গানার (Telengana) নিজামবাদ জেলার একটি সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষিকা এবং তাঁর ছেলে নিজামুদ্দিন আমান (Nizamuddin Aman) এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্র। অসহায় মা রাজিয়া বেগম (Razia Begam) বর্তমানে তাঁর সন্তান নিরাপদভাবে ফেরার জন্য প্রার্থনা করছেন। করোনা অতিমারির সময় যখন লকডাউন জারি করা হয়েছিল তখন এই ছেলের জন্যই কোনও প্রতিকূলতার কথা না ভেবে ১৪০০ কিমি রাস্তা অনায়সে পাড়ি দিয়েছিলেন এই রাজিয়া বেগম (Razia Begam)। এখন তাঁর সেই ছেলেই যুদ্ধের মাঝে আটকে থাকায় চরম দুশ্চিন্তার মাঝে দিন কাটছে তাঁর।
বর্তমানে ইউক্রেনে নিজামুদ্দিনের সঙ্গে আটকে রয়েছে আরও বেশ কিছু ছাত্র। ইতিমধ্যেই ভারত সরকার অপারেশন গঙ্গা (Operation Ganga) উদ্ধার অভিযানের মাধ্যমে প্রায় অনেক জনকেই উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ঠিকই তবে সেই তালিকায় ঘরে ফেরে নি নিজামুদ্দিন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi), তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (Chandrasekhar Rao) এবং সেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ মাহমুদ আলিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনামূলক পরিস্থিতির মাঝ থেকে তাঁর সন্তান এবং অন্যান্য ভারতীয়দের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- 'মেয়েদের সঙ্গে চরম নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছে ইউক্রেন সেনা', অভিযোগ বালুরঘাটের বাসিন্দার
আরও পড়ুন- ৫ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি, প্রাণ বাঁচাতে হলে এই সময় সরে পড়ুন, ঘোষণা করল রাশিয়া
রাজিয়ার সন্তান নিজামুদ্দিন আমন পূর্ব ইউরোপীয় দেশের সুমিতে মেডিক্যালে প্রথম বর্ষে (Medical First Year) পড়ছেন। সুমি রাশিয়ান সীমান্তের কাছে অবস্থিত একটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বেশিরভাগ ভারতীয় ছাত্র সুমি স্টেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েরই (Sumi State Mediacal University) অন্তর্গত। নিজামউদ্দিন বাঙ্কারে এখন থাকছে এবং ফোনে তার মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখছে বলে বৃহস্পতিবার পিটিআইকে জানিয়েছেন নিজামউদ্দিনের মা রাজিয়া। তিনি জানান, 'নিজামউদ্দিন আমাকে আশ্বস্ত করার জন্য ফোন করেছিল যে সে ঠিক আছেন এবং আমার তাকে নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই।' তবে বর্তমানে সে যেখানে আছে সেখান থেকে তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে রাজিয়া বেগম কোভিড -১৯ (Covid-19) সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী লকডাউন (Covid 19 Lockdown) জারি হওয়ার পর প্রতিবেশী রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের নেলোর জেলায় আটকে পড়েছিল এই নিজামউদ্দিন আমন। তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে একটি দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজিয়া বেগম। স্থানীয় পুলিশের অনুমতি নিয়ে তিনি একাই নেল্লোরে গিয়েছিলেন এবং তার ছোট ছেলে নিজামউদ্দিনকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। সাধারণত এই ধরণের সাহসিকতার নজির মেলা দুষ্কর। বর্তমানে সেই ছেলে যুদ্ধের মাঝে আটকে থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছেন রাজিয়া এবং ছেলের সুস্থ এবং নিরাপদে থাকার প্রার্থনা করছেন।