সংক্ষিপ্ত

  • উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন
  • ঘর গোছাতে শুরু করেছে বিজেপি 
  • তবে স্থানীয়দের মধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে 
  • এখনও কিছুটা দিশেহারা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি

উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই চ্যালেঞ্জ বাড়ছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আর বিজেপির সামনে। গত নির্বাচনে বিরোধীপক্ষকে ধরাসায়ী করে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তর প্রদেশ দখল করেছিল বিজেপি। ৪০৩ আসনের উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় বিজেপির আসন সংখ্যা ৩০৬। সহযোগী আপনা দলের আসন সংখ্যা ছিল ৯। প্রায় বিধ্বস্ত ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। পাঁচ বছর যেতে না যেতেই একাধিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে বিজেপি সরকার। মুখ্যমন্ত্রী যোগীর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ আর লুকিয়ে নেই দলের অন্দরে। যা ধীরে ধীরে সামনে আসছে। 

কোভিড চ্যালেঞ্জ- প্রথম তরঙ্গের মতই দ্বিতীয় তরঙ্গে উত্তর প্রদেশ প্রশাসন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। তেমনই অভিযোগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির এই অবস্থায় যোগী প্রশাসনের উপর চাপ বাড়িয়েছে গঙ্গায় ভেসে যাওয়া আর মৃতদেহ।স্থানীয়দের অভিযোগ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের তথ্য লুকাচ্ছে যোগী প্রশাসন। কিন্তু গঙ্গা আর গঙ্গার তীরবর্তী মৃতদেহগুলি সেই তথ্য সামনে এনেছে। রাজ্যের করোনা মহামারিও খুব একটা স্বস্তি দেয়নি রাজ্য প্রশাসনকে। যত দিন গেছে ততই প্রকট হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য় পরিষেবা। করোনাভাইরাসের প্রথম তরঙ্গের সময় পরিযায়ী বা অভিবাসী শ্রমিক ইস্যুতে যোগী সরকারের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছিল দেশজুড়়ে।  

ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অনিরুদ্ধ বসু, নারদ মামলা থেকে সরলেন সুপ্রিম কোর্টের বাঙালি বিচারপতি ...

নাগরিকত্ব আইনে ক্ষোভ- এই রাজ্যেও রীতিমত সক্রিয় ছিল সিএএ এনআরসি আন্দোলন। এই আন্দোলন মোকাবিলায় রীতিমত কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল যোগী সরকার। ধরপাকড়ের পাশাপাশি একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা দেওয়া হয়েছিল। তারমধ্যে রয়েছে কাফিল খানের মত চিকিৎসক। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে কাফিল খান মুক্ত হলেও আদালতের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে যোগী সরকারকে। যা নিয়ে দলের অন্দরেও রয়েছে চাপা ক্ষোভ। 

নারী নির্যাতন- রাজ্যের ঘটে চলা নারী নির্যাতনও চিন্তায় ফেলেছে যোগী প্রশাসনকে। উন্নায় থেকে হাতরস- সামনে এসেছে ভয়ঙ্কর যৌন অত্যাচারের তথ্য। পাশাপাশি একটি শ্রেনিকে পুলিশ আড়াল করতে বদ্ধপরিকর করেও  অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। উত্তর প্রদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বর্তমানে আর রাজ্যের চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি আতঙ্ক বাড়িয়েছে গোটা দেশের। যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশই তীব্র হয়েছে। 

নতুন টিকানীতির প্রথম দিনেই সাফল্য, ৮০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে কোভিড টিকা একদিনে ...

আক্রান্ত সংখ্যালঘু- যোগী প্রশাসন ক্ষমতা দখলের পরেই একের পর এক সংখ্যালঘু নির্যাতনের কাহিনি সামনে এসেছে। সদ্যোই গাজিয়াবাদকাণ্ডে তোড়পাল হয়েছে নেটদুনিয়া। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেরি করেনি যোগীর পুলিশ। ড্যামেজ কন্ট্রোলের নামার আগেই কিছুটা হলেও প্রশাসনের ভাবমূর্তিতে আঘাত লেগেছে। 

পঞ্চায়েত নির্বাচন- পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি রীতিমত ধরাসায়ী হয়েছে। অধিকাংশ জায়গায়তেই হারের সম্মুখীন হয়েছে। স্থানীয়দের কথায় বিজেপির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ভোটে। স্থানীয় নেতৃত্বের কথায় তৃণমূল স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে জাতি ধর্ম নির্বিশেষেই উষ্মা বাড়ছে। কোভিড সংকটের পাশাপাশি আর্থিক সংকটও তার একটা বড় কারণ।

৩ ঘণ্টা ধরে পাওয়ার-পিকে দ্বিতীয় বৈঠক, কাল দিল্লিতে বিরোধী দলের আলোচনা .. 

যোগীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ- বিরোধী শিবির নয়, দলের অন্দরেও ক্ষোভ বাড়ছে যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমত যোগীকে দিল্লিতে তলব করা হয়েছিল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আর বিজেপি নেতা জেপি নাড্ডার সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। তবে কি নিয়ে কথা হয়েছে তা স্পষ্ট করেনি কোনও পক্ষই। সূত্রের খবর ঠাকুর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি যোগীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ চাপা নেই ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। সেই ক্ষোভ ধাপাচাপা দিতেই কংগ্রেস নেতা জিতিন প্রসাদকে বিজেপিতে নেওয়া হয়েছে। দলের একটা অংশ চাইছে যোগীকে এই মুহূর্তে সরিয়ে দিতে। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্ব এখনই তা চাইছেন না।সূত্রের খবর যোগীকে সামনে রেখেই ভোটযুদ্ধে সামিল হলেও মূল রাশ থাকবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে। 

বিরোধী দল- বিজেপির একটাই সুবিধে পাঁচ বছর পরেও রাজ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ছন্নছাড়া। দিশেহারা অখিলেশ যাদব আর মায়াবতী।  প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করলেও এখনও পর্যন্ত কোনও সাফল্য পায়নি। সমাজবাদী পার্টি আর বহুজন সমাজবাদী এখনও জোট বাঁধতে পারেনি। সকলেই আদালা আলাদা লড়াইয়ের পরিকল্পনা নিচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ভোট কাটাকাটিই এখন মূল ভরসা বিজেপির। বিরোধীরা এখনও ভোট নিয়ে তেমন তৎপর না হলেও বিজেপি তলে তলে ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যোগীকে দিল্লি  থেকেই তা স্পষ্ট হয়েছে।