সংক্ষিপ্ত
১৯৭৩ সালে অন্তরাত্মার ডাকে নিজের ডান হাত উঁচু করে তুলে ধরেছিলেন সাধু অমর ভারতী। তারপর থেকে সেই হাত আর নামাননি, কেন জানেন?
ভারতবর্ষ ধর্ম ও বিশ্বাসের দেশ। এই দেশে বহু মানুষের বিশ্বাস মিলে মিশে গিয়েছে। তবে, এরমধ্যে বোধহয় নিজের বিশ্বাসের জোরে সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন যোগী অমর ভারতী (Yogi Amar Bharati)। নিজের আধ্য়াত্ম বিশ্বাসের জন্য, তিনি গত প্রায় ৫০ বছর ধরে নিজের ডান হাতটি উপরে তুলে রেখেছেন। আর, মৃত্য়ুর আগে সেই হাত নামানোর কোনও পকিকল্পনাও নেই তাঁর। তাঁর এই বিস্ময়কর কাহিনি এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
এমনিতে যে কোনও মানুষ তাঁর হাত উপরে তুলে রাখতে পারেন ২-৩ মিনিটের জন্য। তার বেশি সময় উঁচু করে রাখলেই হাতের পেশিতে ব্যথা হতে শুরু করবে। কিন্তু, সাধু অমর ভারতী সেই ১৯৭৩ সাল থেকে মুঠো শক্ত করে তাঁর ডান হাতটি উপরের দিকে তুলে ধরে রেখেছেন। ওই একই অবস্থানে তিনি রয়েছেন গত ৪৮ বছর ধরে, লক্ষ্য একটাই বিশ্বশান্তির (World Peace) প্রচার।
আরও পড়ুন - ভোঁতা চামচে ধার দিয়ে তৈরি হল ছুরি, পুরুষাঙ্গ কেটে শিবলিঙ্গে অর্পণ করল খুনের আসামি
আরও পড়ুন - রক্ত-স্নান করল শিবলিঙ্গ, মন্দিরে ঢুকে ভক্ত নিজেই চিড়ে দিলেন নিজের গলা
আরও পড়ুন - শ্রাবণের প্রথম সোমবার, পুরুলিয়ায় করোনাবিধি মেনে চলল শিবের পুজো
তবে, তাঁর হাত উঁচু করে রাখার থেকেও আকর্ষণীয় তাঁর জীবনে আচমকা পরিবর্তন আসার কাহিনি। বরাবরই সাধু ছিলেন না অমর ভারতী। আর পাঁচজন বিবাহিত সংসারী মনুষের থেকে একেবারেই আলাদা ছিল না তাঁর জীবন। তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর তিন সন্তানও ছিল। ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের (Indian Bank) কেরানি ছিলেন তিনি। কিন্তু, ১৯৭৩ সালে হঠাৎ করেই, তিনি অন্তরাত্মার ডাক শুনতে পেয়েছিলেন এবং বিশ্ব শান্তির নামে তাঁর জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। শিবের (Lord Shiva) কাছে তিনি নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। আর শিবের প্রতি তাঁর ভক্তি প্রদর্শনের জন্যই ওই এক হাত তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই থেকে হাত আর নামাননি তিনি।
কুম্ভমেলায় সাধু অমর ভারতী
এক সাক্ষাতকারে সাধু অমর ভারতী জানিয়েছেন, তাঁর বেশি কিছু চাহিদা নেই। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করি, কেন আমাদের মধ্যে এত ঘৃণা? এত শত্রুতা? তিনি চান সকল ভারতবাসী, বিশ্ববাসী শান্তিতে বসবাস করুক। আর সেই শান্তির বানিই তিনি প্রচার করে আসছেন গত ৪৮ বছর ধরে। অমর ভারতী জানিয়েছেন, এই বিশ্বশান্তির খোঁজে প্রথম দুই বছর তাঁর খুবই কষ্টে কেটেছে। হাত তুলে রাখতে খুব যন্ত্রণা হত। তারপর, ধীরে ধীরে সেটা সহজ হয়ে যায়। কারণ, একসময় তিনি তাঁর ডানহাতের সমস্ত অনুভূতিই হারিয়ে ফেলেছিলেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কয়েক দশক ধরে ডানহাতটি একই অবস্থানে থাকার কারণে, রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি চাইলেও, সঙ্গে সঙ্গে হাতটিকে তাঁর কোমরের পাশে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না, অনেক সময় লাগবে। অনেকে আবার জানিয়েছেন, সেই চেষ্টা করলে, বা হাতটিতে আঘাত লাগলেই সেটি ভেঙে যেতে পারে। তাদের দাবি, যেহেতু হাড়ের গঠন এখনও অটুট আছে, তাই গাছের শুকনো ডালের মতো হাতটি যে কোনও জায়গা থেকে ভেঙে যাবে না। তবে, তরুণাস্থিগুলি শুকিয়ে যাওয়ায় এবং তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায়, হাড়ের জোড়গুলি ভেঙে যাবে। অনেকে, একটা অন্য সম্ভাবনার কথাও বলেছেন। তাঁদের মতে, অমর ভারতী এতে শুধুমাত্র শারীরিকভাবে নয়, আধ্যাত্মিকভাবেও দারুণ আঘাত পেতে পারেন। কারণ তাঁর বিশ্বাস, তাঁর এই চিরন্তন অভিবাদন বিশ্বে শান্তি আনবেই৷