বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরে জুলাইয়ে গণহত্যার অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাইরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর জুলাই-আগস্টের অস্থিরতার সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিচারপতি মহম্মদ গোলাম মোর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার দুপুর থেকেই রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গোটা ঢাকা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। গোটা বাংলাদেশ জুড়ে বাড়ান হয়েছে নিরাপত্তা।
ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৩ অক্টোবর প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের চূড়ান্ত বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে যুক্তিতর্ক শেষ হয়। রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন অভিযুক্তদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। এ সময় প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহমেদ, মইনুল করিম, এবিএম সুলতান মাহমুদ এবং অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা ট্রিবিউনের তথ্যমতে, ট্রাইব্যুনাল প্রথমে রায়ের জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ঠিক করলেও পরে তা পরিবর্তন করে ১৭ নভেম্বর নির্ধারণ করে। ২২ অক্টোবর পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পাশাপাশি 'রাজসাক্ষী' হিসেবে উপস্থিত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে। প্রসিকিউশন তিনজনেরই সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে।
তিন দিন ধরে যুক্তি উপস্থাপনের পর, আসামিপক্ষ মামুন নিজে, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মূল সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের খালাস দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালকে অনুরোধ করে। হোসেন তাদের সাক্ষ্য সরাসরি খারিজ করে দিয়ে যুক্তি দেন যে, মামুনের সহযোগিতা জোর করে আদায় করা হয়েছে এবং মাহমুদুর রহমানের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা তার বক্তব্যকে প্রভাবিত করেছে। পরে মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ সাক্ষী-আসামির পক্ষে আলাদাভাবে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
১০ জুলাই একটি নাটকীয় মোড় আসে, যখন সাবেক আইজিপি মামুন জুলাই-আগস্টের অস্থিরতার সময় হত্যা ও সহিংসতার দায় প্রকাশ্যে স্বীকার করেন।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর সামনে হাজির হয়ে তিনি বলেন: "জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় আমাদের বিরুদ্ধে আনা হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ সত্য। আমি দোষ স্বীকার করছি। আমি সম্পূর্ণ সত্য উদঘাটনে আদালতকে সাহায্য করতে চাই।" তার স্বীকারোক্তির দিনই ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির মুক্তির আবেদন নাকচ করে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে। প্রসিকিউশন মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে, যার সমর্থনে ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার বিশাল ডকুমেন্টেশন জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২,০১৮ পৃষ্ঠার রেফারেন্স, ৪০৫ পৃষ্ঠার জব্দকৃত সামগ্রী এবং ২,৭২৪ পৃষ্ঠার একটি মৃতের তালিকা। আজ বিকেলে রায় ঘোষণার কথা থাকায়, সোমবারের এই রায় ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রায় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


