সংক্ষিপ্ত
ইউক্রেন-রাশিয়া (Ukraine-Russia Conflict) যুদ্ধের হুমকির মধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের ইউক্রেনে (Ukraine) ছাড়ার উপদেশ দেওয়া হল। কিন্তু, কেন ইউক্রেনে হামলা চালাতে যাচ্ছে রাশিয়া, কেনই বা এই যুদ্ধ নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব?
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত (Ukraine-Russia Conflict) চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুদ্ধের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন বিশ্ব। মঙ্গলবার ভারতীয় নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA), ব্রিটেন (Britain) এবং অস্ট্রেলিয়াও (Australia) তাদের নাগরিকদের অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। আমেরিকা মনে করছে এক-দুদিনের মধ্য়েই ইউক্রেনে হতে পারে রুশ হামলা। কিন্তু, কেন ইউক্রেনে হামলা চালাতে যাচ্ছে রাশিয়া? কেনই বা এই যুদ্ধ নিয়ে এতটা উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব, কেন মনে করা হচ্ছে এর থেকে বেধে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ? আসুন জেনে নেওয়া যাক এই সব প্রশ্নের উত্তর -
সাম্প্রতিক ঘটনাবলী
ইউক্রেন-রাশিয়া (Ukraine-Russia) সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই ২০১৪ সালের গোড়ায়। কিন্তু, তারপর দুই পক্ষই উত্তেজনার আঁচ কিছুটা কমানোয়, দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী এলাকায় অচলাবস্থা রয়েছে। মাঝেমধ্য়েই গোলাগুলি চলে, দুই পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। ২০২১ সাল থেকে এই সংঘর্ষের ঘটনার সংখ্য়া ক্রমে বেড়েছে। গত অক্টোবরে মাস থেকেই, সম্ভাব্য আক্রমণের ছুতোয় ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়া তাদের সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম সরানো শুরু করেছিল। বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাস ধরে তারা ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র ইউক্রেনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেই সময়ই মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিলেন, ২০২২-এর শুরুতেই ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি রুশ সেনা জড়ো হয়েছে ইউক্রেন সীমান্তে। আর এখন তো হোয়াইট হাউস (White House) বলছে যে কোন দিনই যুদ্ধ বাধতে পারে।
আরও পড়ুন - ৮ দিনের মধ্যেই কি শুরু হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আমেরিকার বিবৃতিতে গোটা বিশ্বে আতঙ্ক
আরও পড়ুন - কেন তৈরি হল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আশঙ্কা, কেনই বা এত উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব
আরও পড়ুন - রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সতর্ক করল আমেরিকা, পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল হচ্ছে
রাশিয়ার দাবি ইউক্রেন থেকে ন্যাটো (NATO) বাহিনিকে সরাতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি সেই দাবিগুলি প্রত্যাখ্যান করে, রাশিয়াকে পাল্টা প্রতিশোধের হুশিয়ারি দিয়েছে। তারমধ্যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকিও রয়েছে। পাশাপাশি, অন্যান্য ছোট অস্ত্র এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্রও মোতায়েন করেছে ন্যাটো। ফেব্রুয়ারির শুরুতে, বাইডেন ন্যাটো দেশ পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় তিন হাজার মার্কিন সেনার মোতায়েন করেছেন। কারা প্রথম চোখের পলক ফেলে এখন তার অপেক্ষা চলছে।
সংঘাতের প্রেক্ষাপট
এই গঠনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৩ সালের নভেম্বরে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৃহত্তর অর্থনৈতিক একীকরণের চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তৎকালীন ইউক্রেন রাষ্ট্রপতি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। এর প্রতিবাদে রাজধানী কিয়েভে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী কড়া হাতে সেই বিক্ষোভ দমন করতে গিয়েছিল, তাতে আরও বেশি মানষ রাস্তায় নেমেছিল। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশ ছেড়ে পালান ইয়ানুকোভিচ। আর এই সংকটের মধ্যে, রুশ সৈন্য ইউক্রেনের ক্রিমিয়ান অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। এরপর, এক বিতর্কিত স্থানীয় গণভোটে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া।
রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার যোগদানের দুই মাস পরই, পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেন থেকে স্বাধীন হওয়ার কথা ঘোষণা করে একটি গণভোট আয়োজন করেছিল। তাদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর হিংসাত্মক সংঘাত বাধে। ১০,৩০০-রও বেশি মানুষ নিহত হন, এবং প্রায় ২৪০০০ মানুষ আহত হন। এর পিছনে মস্কোর ফসকানি ছিল বলে দাবি করে ইউক্রেন এবং ন্যাটো। ইউক্রেনের পরিস্থিতি একটি আন্তর্জাতিক সংকটে পরিণত হয়। এর মধ্যেই ইউক্রেনের আকাশসীমার উপর মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটকে গুলি করে নামানো হয়। ২৯৮ জন নিরাপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ডাচ বিমান দুর্ঘটনা তদন্তকারীরা ২০১৫ সালে জানিয়েছিলেন, বিমানটিকে একটি রুশ সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেতিল। ২০১৬-তে তারা আরও বলেছিলেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়া থেকে পূর্ব ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছিল।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং ইউক্রেন মিনস্ক চুক্তির মাধ্যমে উত্তেজনা প্শমমনের চেষ্টা করছে। কিন্তু, কোনও কূটনৈতিক মীমাংসা এবং সন্তোষজনক সমাধানে মেলেনি। ২০১৬ সালে ন্যাটো, পূর্ব ইউরোপে সম্ভাব্য রাশিয়ান আগ্রাসন রোধে চারটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করে। ২০১৭ সালে এর সঙ্গে দুটি মার্কিন সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক ব্রিগেড যোগ দেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় এি সংঘাত আরো বাড়ে। ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২১ জন রুশ কর্মকর্তা এবং ৯টি সংস্থাকে নিষেদ্ধ করেছিল। ইউক্রেনকে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। পশ্চিম ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাচোর সঙ্গে বিমান মহড়া করে ইউক্রেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া পরিচালনা করে রাশিয়াও।
বড় উদ্বেগের কারণ
ইউক্রেনের সংঘাত মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনিতেই সন্ত্রাসবাদ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং সিরিয়ায় একটি রাজনৈতিক সমাধান-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ উভয়ের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের উত্তেজনা রয়েছে। এই দ্বন্দ্ব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। সবথেকে বড় কথা ইউক্রেন ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশ। কাজেই, সেখানে রাশিয়া প্রবেশ করলে, ন্যাটো মিত্র হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়া জানাবেই। তাই, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালালে, বৃহত্তর যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে।