Boeing Whistleblower Controversy: পরপর রহস্যজনক মৃত্যু। বোয়িং হুইসেলব্লোয়ারদের রহস্যজনক মৃত্যু এবং ক্রমাগত বিমান দুর্ঘটনা। হচ্ছেটা কী?

Boeing Whistleblower Controversy: একাধিক অভিযোগ এবং রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ।বোয়িং হুইসেলব্লোয়াররা গত ২০২৩ সাল থেকে একাধিকবার আওয়াজ তুলেছেন। একাধিক প্রোজেক্টে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিলেন তারা (boeing whistleblower dead)। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু আজও সেই অভিযোগগুলির নির্দিষ্ট কোনও তদন্ত হয়নি। তাহলে কি মুনাফা লাভের লক্ষ্যেই যাত্রীদের জীবনকে বারবার বিপদের সামনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে (boeing whistleblower)? 

প্রসঙ্গত, আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর যাওয়ার কথা ছিল 787-8 এয়ার ইন্ডিয়া পরিচালিত ড্রিমলাইনার বিমানটির। কিন্তু মোট ২৪২ জন যাত্রীকে নিয়ে আহমেদাবাদের মেঘানিনগর বসতি এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ভেঙে পড়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ১৭১ বিমানটি। সেই বিমানে থাকা একজন ছাড়া বাকি সকলেরই মৃত্যু হয়েছে এই ঘটনায় (air india plane flight)।

আর সেই বিমানটি ভেঙে পড়ার ঠিক পরের মুহূর্তেই প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে একটি। আগুন ধরে যায় গোটা বিমানে। মর্মান্তিক এবং ভয়ঙ্কর এই দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করে প্রশাসন। বিমানটিতে ১৫৮ জন ভারতীয় ছাড়াও ৫৩ জন ইংল্যান্ডের নাগরিক, ১ জন কানাডার নাগরিক এবং ৭ জন পর্তুগিজ নাগরিক ছিলেন। আহতদের চিকিৎসা শুরু হয় কাছাকাছি একাধিক হাসপাতালে।

Scroll to load tweet…

আর এই ঘটনার পর থেকেই বেশ কিছু পুরনো অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে

আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে বোয়িং কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছিল। বোয়িং-এর একাধিক কর্মচারী দাবি করেন যে, কোম্পানির কার্যক্রম একেবারেই সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ সামনে আসে। তবে যারা এই অভিযোগ তুলেছিলেন এবং কোর্ট অবধি গিয়ে লড়াই করেছিলেন, তাদের অনেককেই রহস্যজনকভাবে হত্যা করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, এয়ার ইন্ডিয়া এবং বোয়িং-এর উড়ান চালু হওয়ার পর, ১৪ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ড্রিমলাইনার বিমানে মোট ১৩৬টি ত্রুটি পাওয়া গেছে। আকাশপথে যে যান এতজন যাত্রী পরিমাণে নিয়োজিত! সেই হাওয়াই যানেই এতো ত্রুটি! যাত্রী নিরাপত্তা রীতিমতো প্রশ্নের মুখে। 

এই প্রসঙ্গে রাজ্যসভায় একটি প্রশ্নের উত্তরে বিমান পরিবহন মন্ত্রক জানায়, বোয়িং বিমান মেরামতের জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত খরচ হয় প্রায় ১.৪৩ কোটি টাকা। গত ২০১৫-২০২৪ সালের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমানে প্রায় ৩২টি গুরুতর ত্রুটি দেখা যায়। 

Scroll to load tweet…

এবার আসা যাক সেই মানুষটির কথায়

জন বার্নেট, ছিলেন একজন বোয়িং ইঞ্জিনিয়ার। গত ২০১০ সাল থেকে বোয়িংয়ের চার্লসটন প্ল্যান্টের কোয়ালিটি ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলেছেন। বোয়িং-এ তিনি মোট ৩২ বছর চাকরি করেছেন। এছাড়াও বার্নেট ছিলেন স্পিরিট অ্যারোসিস্টেমের প্রাক্তন কোয়ালিটি অডিটর এবং তিনিই বোয়িংয়ের একাধিক প্রোজেক্টে বিদ্যমান ত্রুটিগুলি তুলে ধরার মধ্যে একেবারে অগ্রণী ছিলেন।

তিনি তখন বলেছিলেন, “যদি এটি বোয়িং হয়, আমি যাচ্ছি না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অভিযোগের উঠে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। বোয়িং, যে কোম্পানির পৃথিবীর আকাশে একচেটিয়া অধিকার ছিল, তারা এখন পরাজিত হয়েছে।" 

জন বার্নেট ছিলেন একজন বিখ্যাত বোয়িং হুইসেল ব্লোয়ার। কিন্তু গত ২০২৪ সালের ৯ মার্চ তাঁকে নিজের গাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বলে মামলাটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তিনি যে অভিযোগগুলি তুলেছিলেন, সেগুলি এখনও ঝুলে আছে। জন বার্নেট গত ২০১০ সাল থেকে বোয়িংয়ের চার্লসটন প্লান্টে কোয়ালিটি ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। 

এই কারখানাটিতেই বোয়িং 787 ড্রিমলাইনার তৈরি হয়েছিল। যেটি লম্বা রুটে চলার জন্য যা বোয়িং কোম্পানির একটি অত্যাধুনিক বিমান। অভিযোগ ওঠে, চার্লসটন কারখানার শ্রমিকদের কাজের চাপ বাড়িয়ে দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানটিতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ বসানোর জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। জনই প্রথম, যিনি এই জালিয়াতিটি ধরে ফেলেন এবং তিনি তা প্রকাশ্যে আনেন। 

জন বার্নেট ঠিক কী জানিয়েছিলেন?

তিনি বলেন, "নিম্নমানের সাবকন্ট্রাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে, বিমানের চারটি গুরুত্বপূর্ণ Breathing-Propsanas মাস্কের মধ্যে একটি জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারে না। কিন্তু অদ্ভুতভাবে বোয়িং এই অভিযোগ অস্বীকার করেছ এবং এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে একটিবারের জন্যও তদন্ত শুরু হয়নি।

এবার আসা যাক আরেকটি প্রসঙ্গে। স্পিরিট অ্যারোসিস্টেমের একজন কোয়ালিটি অ্যানালিস্ট ছিলেন জোশুয়া ডিন, যিনি সংস্থাটির উইচিটা এবং কানসাস কারখানায় উৎপাদনের ত্রুটি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করেছিলেন। এরপর তাঁকেও নিজের গাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি অভিযোগ তোলেন, এই জালিয়াতির কথা জানানোর জেরে তাঁকে ২০২৩ সালে কোম্পানি থেকেই বরখাস্ত করে দেওয়া হয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে জোশুয়ার তোলা অভিযোগগুলিরও কোনও তদন্ত হয়নি।

সবশেষে আসা যাক যাক ২০২৪ সালের একটি ঘটনায়

গত ২০২৪ সালে, স্যাম সালেহপুর বোয়িং 777 এবং 787 ড্রিমলাইনার জেট তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু জালিয়াতি এবং নিম্নমানের প্রোডাক্ট ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিমানের ফিউজলেজের আলাদাভাবে তৈরি অংশগুলি ফিট করার সময়, ফাঁকগুলি সঠিকভাবে পূরণ হচ্ছিল না। যার ফলে বিমানটিতে আরও ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তো ছিলই এবং জেটগুলির আয়ুও হ্রাস পেতে পারে। 

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, কোম্পানির সিদ্ধান্তে কিছু খারাপ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে স্যাম সালেহপুরের সেই অভিযোগ এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। 

কিন্তু বিশ্বজুড়ে ঘটে চলা একাধিক বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা যেন তাদের তোলা সেই অভিযোগগুলিকে বারবার উস্কে দিচ্ছে। প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, তাহলে কি গোটা অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ন্ত্রণ করছে অ্যাভিয়েশন মাফিয়ারা?